০১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শরীফের চাকরি ফিরে পাওয়ার ভয়ে দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম

দুদকের চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন

দুদকের চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন দুর্নীতির কারণে যাদেরকে আইনের আওতায় এনেছিলো, তারা এখন শরীফের চাকরি ফিরে পাওয়ার ভয়ে সেই দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম । দুদকের মামলার আসামীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা।

গ্যাস জালিয়াতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তারাই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসব মামলা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক বলে দাবি করে তাঁরা দুষলেন দুদকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনটি শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি মূলত দুদকের বিরুদ্ধেই। কারণ দুদকের কোনো কর্মকর্তা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া মামলার সুপারিশ করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মামলার ৩ আসামী, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সারওয়ার হোসেন, একই প্রতিষ্ঠানের সার্ভেয়ার দিদারুল আলম ও আরএফ বিল্ডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন ।

২০২১ সালে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাসের মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন। এই মামলায় সারওয়ার, মজিবুর ও দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নও করে।

অভিযোগের বিষয়ে শরীফ বলেন, দুদকে মামলা বা কারো বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা একজন উপসহকারি পরিচালকের নেই। কার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে সেটা প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দিবে। আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর মামলা হবে কি-না বা কারা আসামী হবে, সেই সিদ্ধান্তও তাঁরাই দিবেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি আক্রোশে কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনা। যদি এমন অভিযোগ তুলে থাকেন, তবে তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বশীলরা বুঝবেন। আর এসব বিষয়গুলো নিয়ে যেহেতু আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে তাই এগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা।

নিজের সম্পদের বিষয়ে শরীফ বলেন, আমার কি সম্পদ আছে, তা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে পারে। তবে আমি দুর্নীতি করলে আজকে আমাকে দোকানের কর্মী হিসেবে চাকরি করতে হতো না।

তবে অপর একটি সুত্রে জানা গেছে শরীফ উদ্দিন বিয়ে করেছেন ২০১৬ সালে আর চট্টগ্রামে যোগদান করেছেন ২০১৮ সালে, আকবরশাহ এলাকায় তাঁর শাশুড়ির বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় বিয়েই করেননি শরীফ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন চলমান মামলা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করার কি আছে। আসামীরা যদি মনে করেন তার অন্যায় করেননি তাহলে দুদক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতে পারে। তাকে কেউ হয়রানি করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

সুত্র জানায় হালিশহরের এক ব্যক্তির ১২টি চুলা চান্দগাঁওয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলের নামে স্থানান্তর করেন সরোয়ার। নিয়ম অনুযায়ী, একই ব্যক্তি তাঁর নামে থাকা চুলা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে পারবেন। কিন্তু তা অন্য ব্যক্তিকে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য দুদকের উপসহকারী পরিচালক ছিলেন শরীফ। দীর্ঘ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন।

গত বছরের ১৬ জুন শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন। তবে তাঁর আবেদন কমিশনের কাছে বিবেচিত হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে একটি কোম্পানিতে ৮০ হাজার টাকা বেতনে তাঁর যোগদান করার কথা। তবে দুদকের চাকরি ফিরে পেতে চান তিনি। দুদকের চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়ে এক আইনজীবীর হাইকোর্টে বরা রিটের এখনো শুনানি হয়নি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

শরীফের চাকরি ফিরে পাওয়ার ভয়ে দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম

প্রকাশিত : ১১:১৮:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

দুদকের চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিন দুর্নীতির কারণে যাদেরকে আইনের আওতায় এনেছিলো, তারা এখন শরীফের চাকরি ফিরে পাওয়ার ভয়ে সেই দুর্নীতিবাজদের ঘুম হারাম । দুদকের মামলার আসামীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা।

গ্যাস জালিয়াতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তারাই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এসব মামলা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক বলে দাবি করে তাঁরা দুষলেন দুদকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনটি শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি মূলত দুদকের বিরুদ্ধেই। কারণ দুদকের কোনো কর্মকর্তা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া মামলার সুপারিশ করতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মামলার ৩ আসামী, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) অবসরপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সারওয়ার হোসেন, একই প্রতিষ্ঠানের সার্ভেয়ার দিদারুল আলম ও আরএফ বিল্ডার্সের মালিক দেলোয়ার হোসেন ।

২০২১ সালে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাসের মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ উদ্দিন। এই মামলায় সারওয়ার, মজিবুর ও দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নও করে।

অভিযোগের বিষয়ে শরীফ বলেন, দুদকে মামলা বা কারো বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা একজন উপসহকারি পরিচালকের নেই। কার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে সেটা প্রধান কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দিবে। আমরা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর মামলা হবে কি-না বা কারা আসামী হবে, সেই সিদ্ধান্তও তাঁরাই দিবেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি আক্রোশে কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনা। যদি এমন অভিযোগ তুলে থাকেন, তবে তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বশীলরা বুঝবেন। আর এসব বিষয়গুলো নিয়ে যেহেতু আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে তাই এগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা।

নিজের সম্পদের বিষয়ে শরীফ বলেন, আমার কি সম্পদ আছে, তা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে পারে। তবে আমি দুর্নীতি করলে আজকে আমাকে দোকানের কর্মী হিসেবে চাকরি করতে হতো না।

তবে অপর একটি সুত্রে জানা গেছে শরীফ উদ্দিন বিয়ে করেছেন ২০১৬ সালে আর চট্টগ্রামে যোগদান করেছেন ২০১৮ সালে, আকবরশাহ এলাকায় তাঁর শাশুড়ির বাড়ির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় বিয়েই করেননি শরীফ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন চলমান মামলা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করার কি আছে। আসামীরা যদি মনে করেন তার অন্যায় করেননি তাহলে দুদক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যেতে পারে। তাকে কেউ হয়রানি করে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

সুত্র জানায় হালিশহরের এক ব্যক্তির ১২টি চুলা চান্দগাঁওয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলের নামে স্থানান্তর করেন সরোয়ার। নিয়ম অনুযায়ী, একই ব্যক্তি তাঁর নামে থাকা চুলা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে পারবেন। কিন্তু তা অন্য ব্যক্তিকে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য দুদকের উপসহকারী পরিচালক ছিলেন শরীফ। দীর্ঘ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন।

গত বছরের ১৬ জুন শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেন। তবে তাঁর আবেদন কমিশনের কাছে বিবেচিত হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে একটি কোম্পানিতে ৮০ হাজার টাকা বেতনে তাঁর যোগদান করার কথা। তবে দুদকের চাকরি ফিরে পেতে চান তিনি। দুদকের চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়ে এক আইনজীবীর হাইকোর্টে বরা রিটের এখনো শুনানি হয়নি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব