০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

 শরীফের অনুসন্ধান সত্যতা পেয়েছে দুদক

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালিয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। তবে রহস্যজনকভাবে দুদক তাকেই চাকরিচ্যুত করে। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে দুদক থেকে চাকরি হারাতে হয় তাকে। সেই শরীফের অনুসন্ধান সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।

কক্সবাজারের কয়েকটি মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা ও একটি দালাল চক্রের রোষানলে পড়ে তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে চাকরিচ্যুত করা হয়। তদন্তে অভিযুক্তদের নাম না দেওয়ার জন্য চাপও দেয়া হয়েছিল শরীফকে। কিন্তু দুর্নীতির প্রমাণ থাকায় শরীফ তাতে সম্মত হয়নি। এক পর্যায়ে শরীফকে হত্যাসহ জীবন নাশের হুমকি দেন অভিযুক্তরা।

এদিকে দুদক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন চাকরি হারানো পর তার পরিবর্তে পুনঃঅনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে। দীর্রদিন পর একটি প্রকল্পের অনুসন্ধান শেষে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। তাতে মিলেছে দুর্নীতির সত্যতা। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে জেলার পানি শোধনাগার প্রকল্পসহ তিনটিতে ভূমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়েই অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। অনুসন্ধানে পৌর মেয়র, তার আত্মীয়-স্বজন, কয়েকজন আমলা, রাজনীতিকসহ অনেকের সম্পৃক্ততা পান তিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চেয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন শরীফ। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেই প্রতিবেদন বাতিল করে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন।

 

এরপরই চাকরিচ্যুত হন শরীফ উদ্দিন। কক্সবাজারের ওই অনুসন্ধানে প্রভাবশালীদের অভিযুক্ত করার জেরেই দুদক কর্মকর্তাকে চাকরি হারাতে হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল ওই সময়।

আরো জানা যায়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পের দুর্নীতির পুনঃঅনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে। তিনি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিশনে।

ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কক্সবাজার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সরওয়ার কামাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য বাঁকখালী নদীর উত্তর পাড়ে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্যের জমি বাছাই করেন। তিনি দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পর মেয়রের দায়িত্ব পান মুজিবুর রহমান। আগের বাছাই করা জমি বাদ দিয়ে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দামের জমি বাছাই করেন মুজিবুর। সেটার বেশিরভাগই ছিল সরকারি রিসিভারে থাকা জমি। মেয়র কৌশলে জমি অধিগ্রহণের আগে রিসিভারকৃত জমির ১ দশমিক ৭২ একর তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে বক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। এ কাজে মেয়রকে সহায়তা করেন কক্সবাজার সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তারসহ আরও দুজন সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি), কক্সবাজার ভূমি অফিসের সাবেক কানুনগো বাচ্চু মনি চাকমা, সাবেক ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন, কক্সবাজার সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার রাশেদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব (সাময়িক বরখাস্ত) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নাজিম উদ্দিন, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো বসন্ত কুমার চাকমা, ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদ ও আবুল হোছাইন, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সৈয়দ নূর, উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ডকিপার জসীম উদ্দিন, সার্ভেয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জায়েদ হোসাইন, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) মোহাম্মদ ইসহাক, কক্সবাজার পৌরসভার সচিব রাছেল চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন, একই শাখার অতিরিক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউর রহমান, কানুনগো মো. নুরুল ইসলাম, সার্ভেয়ার মো. জিয়াউর রহমান, সার্ভেয়ার মো. সাইফুল ইসলাম, সার্ভেয়ার আইএম আশরাফুজ্জামান, মেয়রের স্ত্রী ফারহানা আক্তার, মেয়রের স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমান, কক্সবাজারের বাসিন্দা মমতাজুল ইসলাম, মো. মফিজুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, খোরশেদা বেগম, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোস্তাক আহমেদ, মোসাম্মদ মাহমুদা খাতুন, রেজাউল করিম, মোজাফফর আলী, মো. সালাহউদ্দিন এবং হাসান মেহেদী রহমান।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য বাছাই করা জমির ২ দশমিক ১৯ একরের মধ্যে ১ দশমিক ৭২ একর জমি মেয়র মুজিবুর রহমান পরিকল্পিতভাবে মোহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তারসহ দুজন সহকারী কমিশনের যোগসাজশে আদালতের রিসিভারিতে থাকা জমি মেয়রের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমানের নামে দখল দেখিয়ে ছয়টি নামজারির মাধ্যমে বক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। একই সঙ্গে নামজারি ও জমাভাগের মামলার (মামলা নং-৪১৭০/২০১০) মূল নথি গায়েব করেন। এ ছাড়া প্রত্যাশী সংস্থার প্রতিনিধি না হয়েও সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ড বুকে সই করা, অধিগ্রহণ নথির নোটশিটের আদেশে (নং-০৬, তারিখ-১১/১১/২০১৯) রিসিভারি মামলা ও গোলাভাগের মামলা রয়েছে জেনেও তা নিষ্পত্তি না করে, প্রত্যাশী সংস্থা নির্ধারণ না করে, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবরের দায়ের করা রিট পিটিশনের (নং-১৪৬৮১/২০১৯) আদেশকে মিসগাইড করে সহকারী কৌঁসুলি মোহাম্মদ ইসহাকের সহায়তায় মিজানুর রহমানকে ২০২০ সালের ৯ জুলাই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৪ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার দালাল মো. সালাউদ্দিনের কাছ থেকে ঘুষ ও কমিশন হিসেবে মেয়র মুজিবুর রহমান ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ৩ লাখ টাকা নেন। বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত জসীম উদ্দিন ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ২২ লাখ ৪ হাজার ১৮৭ টাকা পান। সেই টাকা থেকে কমিশন বাবদ ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে নিয়েছেন মেয়র মুজিবুর রহমান। এ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার চেক দেন স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমানকে।

দুদকের অনুসন্ধানে দালিলিক ও সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৩৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার সুপারিশ করা হয় অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

 শরীফের অনুসন্ধান সত্যতা পেয়েছে দুদক

প্রকাশিত : ১১:০৩:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালিয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। তবে রহস্যজনকভাবে দুদক তাকেই চাকরিচ্যুত করে। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে দুদক থেকে চাকরি হারাতে হয় তাকে। সেই শরীফের অনুসন্ধান সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।

কক্সবাজারের কয়েকটি মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নেমে সরকারি কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা ও একটি দালাল চক্রের রোষানলে পড়ে তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে চাকরিচ্যুত করা হয়। তদন্তে অভিযুক্তদের নাম না দেওয়ার জন্য চাপও দেয়া হয়েছিল শরীফকে। কিন্তু দুর্নীতির প্রমাণ থাকায় শরীফ তাতে সম্মত হয়নি। এক পর্যায়ে শরীফকে হত্যাসহ জীবন নাশের হুমকি দেন অভিযুক্তরা।

এদিকে দুদক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন চাকরি হারানো পর তার পরিবর্তে পুনঃঅনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে। দীর্রদিন পর একটি প্রকল্পের অনুসন্ধান শেষে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। তাতে মিলেছে দুর্নীতির সত্যতা। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে জেলার পানি শোধনাগার প্রকল্পসহ তিনটিতে ভূমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়েই অনুসন্ধান করছিলেন দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। অনুসন্ধানে পৌর মেয়র, তার আত্মীয়-স্বজন, কয়েকজন আমলা, রাজনীতিকসহ অনেকের সম্পৃক্ততা পান তিনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন চেয়ে দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন শরীফ। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেই প্রতিবেদন বাতিল করে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন।

 

এরপরই চাকরিচ্যুত হন শরীফ উদ্দিন। কক্সবাজারের ওই অনুসন্ধানে প্রভাবশালীদের অভিযুক্ত করার জেরেই দুদক কর্মকর্তাকে চাকরি হারাতে হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল ওই সময়।

আরো জানা যায়, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পের দুর্নীতির পুনঃঅনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে। তিনি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন কমিশনে।

ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কক্সবাজার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সরওয়ার কামাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কক্সবাজার পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য বাঁকখালী নদীর উত্তর পাড়ে প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা মূল্যের জমি বাছাই করেন। তিনি দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার পর মেয়রের দায়িত্ব পান মুজিবুর রহমান। আগের বাছাই করা জমি বাদ দিয়ে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দামের জমি বাছাই করেন মুজিবুর। সেটার বেশিরভাগই ছিল সরকারি রিসিভারে থাকা জমি। মেয়র কৌশলে জমি অধিগ্রহণের আগে রিসিভারকৃত জমির ১ দশমিক ৭২ একর তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামে বক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। এ কাজে মেয়রকে সহায়তা করেন কক্সবাজার সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তারসহ আরও দুজন সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় যাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি), কক্সবাজার ভূমি অফিসের সাবেক কানুনগো বাচ্চু মনি চাকমা, সাবেক ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মিজবাহ উদ্দিন, কক্সবাজার সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার রাশেদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব (সাময়িক বরখাস্ত) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নাজিম উদ্দিন, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো বসন্ত কুমার চাকমা, ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদ ও আবুল হোছাইন, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সৈয়দ নূর, উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ডকিপার জসীম উদ্দিন, সার্ভেয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জায়েদ হোসাইন, সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) মোহাম্মদ ইসহাক, কক্সবাজার পৌরসভার সচিব রাছেল চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন, একই শাখার অতিরিক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউর রহমান, কানুনগো মো. নুরুল ইসলাম, সার্ভেয়ার মো. জিয়াউর রহমান, সার্ভেয়ার মো. সাইফুল ইসলাম, সার্ভেয়ার আইএম আশরাফুজ্জামান, মেয়রের স্ত্রী ফারহানা আক্তার, মেয়রের স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমান, কক্সবাজারের বাসিন্দা মমতাজুল ইসলাম, মো. মফিজুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, খোরশেদা বেগম, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোস্তাক আহমেদ, মোসাম্মদ মাহমুদা খাতুন, রেজাউল করিম, মোজাফফর আলী, মো. সালাহউদ্দিন এবং হাসান মেহেদী রহমান।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য বাছাই করা জমির ২ দশমিক ১৯ একরের মধ্যে ১ দশমিক ৭২ একর জমি মেয়র মুজিবুর রহমান পরিকল্পিতভাবে মোহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তারসহ দুজন সহকারী কমিশনের যোগসাজশে আদালতের রিসিভারিতে থাকা জমি মেয়রের স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমানের নামে দখল দেখিয়ে ছয়টি নামজারির মাধ্যমে বক্তিগত জমিতে রূপান্তর করেন। একই সঙ্গে নামজারি ও জমাভাগের মামলার (মামলা নং-৪১৭০/২০১০) মূল নথি গায়েব করেন। এ ছাড়া প্রত্যাশী সংস্থার প্রতিনিধি না হয়েও সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই ফিল্ড বুকে সই করা, অধিগ্রহণ নথির নোটশিটের আদেশে (নং-০৬, তারিখ-১১/১১/২০১৯) রিসিভারি মামলা ও গোলাভাগের মামলা রয়েছে জেনেও তা নিষ্পত্তি না করে, প্রত্যাশী সংস্থা নির্ধারণ না করে, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবরের দায়ের করা রিট পিটিশনের (নং-১৪৬৮১/২০১৯) আদেশকে মিসগাইড করে সহকারী কৌঁসুলি মোহাম্মদ ইসহাকের সহায়তায় মিজানুর রহমানকে ২০২০ সালের ৯ জুলাই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ কোটি ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৪ টাকা অবৈধভাবে প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার দালাল মো. সালাউদ্দিনের কাছ থেকে ঘুষ ও কমিশন হিসেবে মেয়র মুজিবুর রহমান ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ৩ লাখ টাকা নেন। বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত জসীম উদ্দিন ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ২২ লাখ ৪ হাজার ১৮৭ টাকা পান। সেই টাকা থেকে কমিশন বাবদ ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে নিয়েছেন মেয়র মুজিবুর রহমান। এ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার চেক দেন স্ত্রীর ভাই মিজানুর রহমানকে।

দুদকের অনুসন্ধানে দালিলিক ও সাক্ষ্যপ্রমাণ দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৩৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার সুপারিশ করা হয় অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব