০৩:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্বীকৃতি পাননি আনোয়ারার ছয়জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা 

চট্টগ্রাম মহান মুক্তিযুদ্ধ  ও বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাঙালি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৫ বছরের শোষনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছিল। বাঙালি ছিল নিরস্ত্র, আর যুদ্ধটা হয়েছিল সশস্ত্র। একাওরের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন শোনার জন্য রেডিও’ র সামনে বসে থাকতেন।খুব ভালো ভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে শুনেছেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এ ভাষন শোনার পর থেকেই ভাবতে শুরু করলেন দেশ ও জাতীর জন্য কিছু একটা করতে হবে।
২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার বার্তাটি চট্টগ্রামের নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে পৌঁছান এবং সেই বার্তাটি জহুর আহমদ চৌধুরীর স্ত্রী একজন লোক মারফতে পাথরঘাটাস্থ জুপিটার হাউজে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বাসভবনে পৌঁছান তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নীতি নির্ধারণী বৈঠক চলছিল।ঐ বার্তাটি নিয়ে নেতৃবৃন্দ ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম,এ হান্নানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রেডিওতে ঐ ঘোষণা শোনার পর উপরে উল্লেখিত ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় আনসার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলিমের মাধ্যমে ট্রেনিং নেন।ট্রেনিং শেষে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।তাঁরা সুবেদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিমের বাড়ি অপারেশন করেন এবং বিভিন্ন সময় আনোয়ারা থানা অপারেশন,পরৈকোড়া টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করা ও আনোয়ারায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ গ্রহন করেন।দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হিসাবে মুল্যায়ন করা হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তি যোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্নান না পাওয়া আলী মিয়া চৌধুরী(মামুর খাইন),তোবার উদ্দিন দফাদার (মামুর খাইন),অজিত সিকদার(শিলালিয়া), জয়ন্ত নন্দী (মামুর খাইন),বজল আহমদ ও নুর হোসেন চৌধুরী (ওষখাইন)।তারা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন,মামুর খাইন,শিলালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশ শক্রমুক্ত হবার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তি যোদ্ধারা অস্ত্র জমা প্রদান শুরু করেন। এমনই পরিস্থিতিতে আনোয়ারা উপজেলার ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের মামুর খাইন গ্রামের আলী মিয়া চৌধুরী, শিলালিয়া
গ্রামের অজিত সিকদার,ওষখাইন গ্রামের বজল আহমদ,মামুর খাইন গ্রামের তোরাব উদ্দীন দফাদার,ওষখাইন গ্রামের নুর হোসেন চৌধুরী ও মামুর খাইন গ্রামের জয়ন্ত নন্দী আনোয়ারা থানা সার্কেল অফিসার(C O)জনাব আফরোজ বখত্ এর নিকট অস্ত্র জমা দেন।অস্ত্র জমাদানের একটা ছবি ও আমাদের হস্তগত হয়েছে।৩রা নভেম্বর আলী মিয়া চৌধুরীর নাতি নুরুল হুদা চৌধুরীর সাথে আলাপ কালে জানতে পারি,যুদ্ধের পর থেকে উক্ত ৬জন মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ঘুরে ও মিলেনি কোনো স্বীকৃতি। স্বীকৃতি না পেয়ে অনেকেই মারা যাওয়ার পরও পাইনি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্নান। এই ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে গত ৩১/১০/২০২২ইং তারিখে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বরাবরে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ছাবের আহমদ চৌধুরী, এম নুরুল হুদা চৌধুরী,ফরিদুল ইসলাম, নিউটন নন্দী,রেজাউল করিম ও স্বপন দাশ প্রমুখ।
আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন,আনোয়ারায় স্বীকৃতি না পাওয়া ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করে তাঁদের সন্তানরা একটি লিখিত আবেদন করেছেন।বিষয়টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে জানানোর জন্য তাদের বলা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন,যুদ্ধ কালীন সময়ে তাদের অবদানের কথা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা তারা সবাই অবগত। তাদের যে প্রমাণাদি রয়েছে, এতে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এতে কোন সন্দেহ নেই।স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি।বিভিন্ন সময় ভুয়া মুক্তি যোদ্ধারা নানা কৌশলে, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে,কিন্তু অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হননি। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্নান দিতে না পারা জাতীর জন্য লজ্জাজনক বিষয়। ফলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কাছে প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধারা পরাজিত হোক তা কেউ চায় না। তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জনপ্রিয়

সীমান্তে বিএসএফের পুশইনকৃত ১৬ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করলো বিজিবি

স্বীকৃতি পাননি আনোয়ারার ছয়জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা 

প্রকাশিত : ০৩:৩০:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২
চট্টগ্রাম মহান মুক্তিযুদ্ধ  ও বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাঙালি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৫ বছরের শোষনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছিল। বাঙালি ছিল নিরস্ত্র, আর যুদ্ধটা হয়েছিল সশস্ত্র। একাওরের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন শোনার জন্য রেডিও’ র সামনে বসে থাকতেন।খুব ভালো ভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে শুনেছেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এ ভাষন শোনার পর থেকেই ভাবতে শুরু করলেন দেশ ও জাতীর জন্য কিছু একটা করতে হবে।
২৫শে মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার বার্তাটি চট্টগ্রামের নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে পৌঁছান এবং সেই বার্তাটি জহুর আহমদ চৌধুরীর স্ত্রী একজন লোক মারফতে পাথরঘাটাস্থ জুপিটার হাউজে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বাসভবনে পৌঁছান তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নীতি নির্ধারণী বৈঠক চলছিল।ঐ বার্তাটি নিয়ে নেতৃবৃন্দ ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে চট্টগ্রাম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম,এ হান্নানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রেডিওতে ঐ ঘোষণা শোনার পর উপরে উল্লেখিত ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় আনসার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলিমের মাধ্যমে ট্রেনিং নেন।ট্রেনিং শেষে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।তাঁরা সুবেদার আবু ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাকিমের বাড়ি অপারেশন করেন এবং বিভিন্ন সময় আনোয়ারা থানা অপারেশন,পরৈকোড়া টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করা ও আনোয়ারায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ গ্রহন করেন।দেশকে স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তাদেরকে জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হিসাবে মুল্যায়ন করা হয়।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তি যোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্নান না পাওয়া আলী মিয়া চৌধুরী(মামুর খাইন),তোবার উদ্দিন দফাদার (মামুর খাইন),অজিত সিকদার(শিলালিয়া), জয়ন্ত নন্দী (মামুর খাইন),বজল আহমদ ও নুর হোসেন চৌধুরী (ওষখাইন)।তারা চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন,মামুর খাইন,শিলালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশ শক্রমুক্ত হবার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তি যোদ্ধারা অস্ত্র জমা প্রদান শুরু করেন। এমনই পরিস্থিতিতে আনোয়ারা উপজেলার ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়নের মামুর খাইন গ্রামের আলী মিয়া চৌধুরী, শিলালিয়া
গ্রামের অজিত সিকদার,ওষখাইন গ্রামের বজল আহমদ,মামুর খাইন গ্রামের তোরাব উদ্দীন দফাদার,ওষখাইন গ্রামের নুর হোসেন চৌধুরী ও মামুর খাইন গ্রামের জয়ন্ত নন্দী আনোয়ারা থানা সার্কেল অফিসার(C O)জনাব আফরোজ বখত্ এর নিকট অস্ত্র জমা দেন।অস্ত্র জমাদানের একটা ছবি ও আমাদের হস্তগত হয়েছে।৩রা নভেম্বর আলী মিয়া চৌধুরীর নাতি নুরুল হুদা চৌধুরীর সাথে আলাপ কালে জানতে পারি,যুদ্ধের পর থেকে উক্ত ৬জন মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ঘুরে ও মিলেনি কোনো স্বীকৃতি। স্বীকৃতি না পেয়ে অনেকেই মারা যাওয়ার পরও পাইনি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্নান। এই ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে গত ৩১/১০/২০২২ইং তারিখে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বরাবরে একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন মুক্তি যোদ্ধার সন্তান ছাবের আহমদ চৌধুরী, এম নুরুল হুদা চৌধুরী,ফরিদুল ইসলাম, নিউটন নন্দী,রেজাউল করিম ও স্বপন দাশ প্রমুখ।
আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন,আনোয়ারায় স্বীকৃতি না পাওয়া ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ করে তাঁদের সন্তানরা একটি লিখিত আবেদন করেছেন।বিষয়টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে জানানোর জন্য তাদের বলা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী চৌধুরী বলেন,যুদ্ধ কালীন সময়ে তাদের অবদানের কথা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা তারা সবাই অবগত। তাদের যে প্রমাণাদি রয়েছে, এতে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এতে কোন সন্দেহ নেই।স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি।বিভিন্ন সময় ভুয়া মুক্তি যোদ্ধারা নানা কৌশলে, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে,কিন্তু অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হননি। অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেও বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্নান দিতে না পারা জাতীর জন্য লজ্জাজনক বিষয়। ফলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কাছে প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধারা পরাজিত হোক তা কেউ চায় না। তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব