০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

ভেড়ামারায় ওএমএসের দীর্ঘ সারি থেকে হতাশা নিয়ে ফিরছে মানুষ

কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার ওএমএস ডিলার দোকানের সামনে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে পাওয়া যায় অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। যদি গিয়ে লাইনের শুরুতে দাঁড়াতে না পারি সেই ভয়ে ভোরে শুধু পানি খেয়ে রওনা দিয়েছি। কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলছিলেন কাঠেরপুল এলাকা বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী মালেকা বেগম।

বয়সের ভারে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন মালেকা। তারপরও ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া ভোরে ফজরের নামাজ পড়েই খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির চাল-আটা কিনতে কাঠেরপুল ডিলারের কাছে এসেছেন তিনি। মালেকা যখন বাড়ি থেকে বের হন তখন কিছুটা অন্ধকার ছিল।

বিজনেস বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘দোকানে চাল-আটার দাম অনেক বেশি। তাই সরকারিভাবে বিক্রি হওয়া এই চাল-আটা কিনতে এসেছি। আমাদের ভাগ্য খারাপ নইলে কি আর এত কষ্ট করতে হয় পেটে দুইটা ভাত দেওয়ার জন্য।

১৯ শে ডিসেম্বর মালেকা যখন এসব কথা বলছিলেন তখন সকাল প্রায় ৭টা। লাইনে তখন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ, আর মালেকা লাইনের প্রায় মাঝামাঝিতে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘গত দিন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। আজ চাল-আটা নিতেই হবে। কারণ, বাজারে অনেক দাম বেশি।

ভোর থেকে অপেক্ষার পর মালেকা সকাল ১০টার দিকে ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটা কিনতে পেরেছিলেন। ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটায় কোনোরকমে রেনুর ৬ সদস্যের পরিবারের ৩ দিন চলে যায়। এরপর আবার তাকে এসে লাইনে এসে দাঁড়াতে হয়। তিনি জানান, একটি দোকানে কাজ করে তার একমাত্র ছেলেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

ওএমএসের ডিলারের দোকানের সামনে নারী, প্রবীণ, যুবক, তরুণ, সন্তানসম্ভবা নারী ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়েছে। মালেকার মতো, হাজারো নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য কেনার চেষ্টা করে থাকেন। তাদের সারি প্রতিদিন হচ্ছে দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সারির একটি বড় অংশ প্রতিদিন খালি হাতে ফেরত যায়, পণ্য শেষ হওয়ার কারণে।

খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন একজনের কাছে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৪ কেজি আটা বিক্রি করে। তবে বাজার থেকে কিনলে একই পরিমাণ চাল ও আটার দাম বেশি পড়ে। খাদ্য অধিদপ্তর প্রতি বছরই ওএমএসে চাল, আটাসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করে।

লাইনে দাঁড়ানো ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা রেহেনা বলেন, গত ৩ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-আটা কোনোটাই কিনতে পারিনি। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে খুব ভোরে উঠতে পারি না। তিনি জানান, তার স্বামী যে বেতন পান, তা দিয়ে বর্তমানে সংসার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই কিছুটা স্বস্তির জন্য কম দামে ওএমএসের পণ্য কিনতে এসেছেন।

দেশের বাজারে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ছে, তা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাব বলছে, গত ১ বছরে মোটা চালের দাম ৭ শতাংশ, খোলা আটার দাম ৭৬ শতাংশ, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২২ শতাংশ, মশুর ডালের দাম ২৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৭ শতাংশ ও ডিমের দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে।

গত কয়েকদিন ওএমএসের ডিলারের স্পট ঘুড়ে দেখেছি প্রায় সব জায়গাতেই দুপুর ১২টার আগেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। খালি হাতে ঘরে ফেরেন অনেক মানুষ। সব জায়গায়তেই চাল-আটা পেতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়।
ফরিদা নামে আরেক এক মহিলা বলেন, ওএমএস চাল, আটা আজও কিনতে পারিনি। ১১টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দোকানের সামনে আমি পৌঁছানোর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবেশকেরা জানান, প্রতিদিনই চাল ও আটা দেওয়ার পরও অনেকেই ফিরে যেতে দেখেছি। সরকার যতটুকু আমাদের দেয় ততটুকুই আমরা বিক্রি করে থাকি। এত মানুষের চাপ সবাইকে দিতে পারি না।

চলতি বছরের শুরু থেকেই মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় চাপ বাড়ছে। এ কারণেই ওএমএসের দোকান গুলোর পেছনে লাইন দিন দিন বড় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর যে চাপ, এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এটাকে এড়িয়ে গেলে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া হবে।

সরকার টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমান অনেক কম। এর আওতা আরও বাড়াতে হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ভেড়ামারায় ওএমএসের দীর্ঘ সারি থেকে হতাশা নিয়ে ফিরছে মানুষ

প্রকাশিত : ০১:১৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার ওএমএস ডিলার দোকানের সামনে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে পাওয়া যায় অনেককেই খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। যদি গিয়ে লাইনের শুরুতে দাঁড়াতে না পারি সেই ভয়ে ভোরে শুধু পানি খেয়ে রওনা দিয়েছি। কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলছিলেন কাঠেরপুল এলাকা বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী মালেকা বেগম।

বয়সের ভারে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন মালেকা। তারপরও ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া ভোরে ফজরের নামাজ পড়েই খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কর্মসূচির চাল-আটা কিনতে কাঠেরপুল ডিলারের কাছে এসেছেন তিনি। মালেকা যখন বাড়ি থেকে বের হন তখন কিছুটা অন্ধকার ছিল।

বিজনেস বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘দোকানে চাল-আটার দাম অনেক বেশি। তাই সরকারিভাবে বিক্রি হওয়া এই চাল-আটা কিনতে এসেছি। আমাদের ভাগ্য খারাপ নইলে কি আর এত কষ্ট করতে হয় পেটে দুইটা ভাত দেওয়ার জন্য।

১৯ শে ডিসেম্বর মালেকা যখন এসব কথা বলছিলেন তখন সকাল প্রায় ৭টা। লাইনে তখন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ, আর মালেকা লাইনের প্রায় মাঝামাঝিতে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘গত দিন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। আজ চাল-আটা নিতেই হবে। কারণ, বাজারে অনেক দাম বেশি।

ভোর থেকে অপেক্ষার পর মালেকা সকাল ১০টার দিকে ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটা কিনতে পেরেছিলেন। ৫ কেজি চাল ও ২ কেজি আটায় কোনোরকমে রেনুর ৬ সদস্যের পরিবারের ৩ দিন চলে যায়। এরপর আবার তাকে এসে লাইনে এসে দাঁড়াতে হয়। তিনি জানান, একটি দোকানে কাজ করে তার একমাত্র ছেলেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

ওএমএসের ডিলারের দোকানের সামনে নারী, প্রবীণ, যুবক, তরুণ, সন্তানসম্ভবা নারী ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়েছে। মালেকার মতো, হাজারো নিম্ন আয়ের মানুষ ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে নিত্যপণ্য কেনার চেষ্টা করে থাকেন। তাদের সারি প্রতিদিন হচ্ছে দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সারির একটি বড় অংশ প্রতিদিন খালি হাতে ফেরত যায়, পণ্য শেষ হওয়ার কারণে।

খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন একজনের কাছে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৪ কেজি আটা বিক্রি করে। তবে বাজার থেকে কিনলে একই পরিমাণ চাল ও আটার দাম বেশি পড়ে। খাদ্য অধিদপ্তর প্রতি বছরই ওএমএসে চাল, আটাসহ নিত্যপণ্য বিক্রি করে।

লাইনে দাঁড়ানো ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা রেহেনা বলেন, গত ৩ দিন লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-আটা কোনোটাই কিনতে পারিনি। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে খুব ভোরে উঠতে পারি না। তিনি জানান, তার স্বামী যে বেতন পান, তা দিয়ে বর্তমানে সংসার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই কিছুটা স্বস্তির জন্য কম দামে ওএমএসের পণ্য কিনতে এসেছেন।

দেশের বাজারে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ছে, তা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বাংলাদেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাব বলছে, গত ১ বছরে মোটা চালের দাম ৭ শতাংশ, খোলা আটার দাম ৭৬ শতাংশ, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২২ শতাংশ, মশুর ডালের দাম ২৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৭ শতাংশ ও ডিমের দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে।

গত কয়েকদিন ওএমএসের ডিলারের স্পট ঘুড়ে দেখেছি প্রায় সব জায়গাতেই দুপুর ১২টার আগেই পণ্য শেষ হয়ে যায়। খালি হাতে ঘরে ফেরেন অনেক মানুষ। সব জায়গায়তেই চাল-আটা পেতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়।
ফরিদা নামে আরেক এক মহিলা বলেন, ওএমএস চাল, আটা আজও কিনতে পারিনি। ১১টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। দোকানের সামনে আমি পৌঁছানোর আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবেশকেরা জানান, প্রতিদিনই চাল ও আটা দেওয়ার পরও অনেকেই ফিরে যেতে দেখেছি। সরকার যতটুকু আমাদের দেয় ততটুকুই আমরা বিক্রি করে থাকি। এত মানুষের চাপ সবাইকে দিতে পারি না।

চলতি বছরের শুরু থেকেই মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় চাপ বাড়ছে। এ কারণেই ওএমএসের দোকান গুলোর পেছনে লাইন দিন দিন বড় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর যে চাপ, এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এটাকে এড়িয়ে গেলে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া হবে।

সরকার টিসিবি ও ওএমএসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এর পরিমান অনেক কম। এর আওতা আরও বাড়াতে হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব