০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জীবনে দোয়া-মোনাজাতের ভূমিকা কী ?

  • ইসলাম ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • 43

দোয়া ও মোনাজাত মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট অতীব পছন্দনীয় একটি আমল। মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে বান্দার নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন হলো দোয়া ও মোনাজাত। মানব জীবনে দোয়া ও মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

দোয়ার শাব্দিক অর্থ চাওয়া, ডাকা বা আরজি পেশ করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কোনও কিছু চাওয়াকে ‘দোয়া’ বলা হয়। আর মোনাজাত শব্দের অর্থ একান্ত ব্যক্তিগত কথাবার্তা। মোনাজাতের পারিভাষিক অর্থ আল্লাহর কাছে ব্যক্তিগতভাবে নীরবে-নিভৃতে আরজি পেশ করা। শব্দ দু’টির মধ্যে অর্থগত পার্থক্য থাকলেও ব্যবহারগত দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। তবে কোরআনে কারিমে ‘দোয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)।

ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব

ইসলামে বৈধ—এমন প্রতিটি কাজের জন্য দোয়া রয়েছে। দোয়া পড়ে কাজ শুরু করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। দৈনন্দিন জীবনযাপনে দোয়া পাঠে যত্নবান হলে বরকত ও কল্যাণ লাভ হয় এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৩৭৩)। অন্য হাদিসে তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়ার চেয়ে অধিক মূল্যবান জিনিস আর কিছু নেই।’ তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯২)

দোয়া স্বতন্ত্র ইবাদত

হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর স্পষ্ট ঘোষণা; তিনি বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৩৭০) তিনি আরও বলেন, ‘দোয়াই ইবাদতের মগজ।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩২৯৩)

দোয়ায় ভাগ্য পরিবর্তন হয়

আল্লাহ-নির্ধারিত ভাগ্যলিখন অবধারিত। তবে যে একটিমাত্র পদ্ধতিতে তা পরিবর্তন সম্ভব তা হলো– দোয়া। এজন্য সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনও কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে– তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনও কোনও দুর্দশার সঙ্গে মোকাবিলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত, হাদিস : ১৫১৯)

কোনও দোয়া বিফল নয়

মুমিনের কোনও দোয়াই বিফল হয় না। দোয়ার ফলাফল তিনটি ধাপে আল্লাহ বান্দাকে দিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনও মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তিনটি প্রতিদানের যেকোনও একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনও অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তার আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৪৯)

দোয়া কবুলের উত্তম সময়

একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে সবসময় তিনি তা কবুল করেন। তবে হাদিসে কিছু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেসব সময়ে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হাদিসের আলোকে সময়গুলো উল্লেখ করা হলো- ১. শেষ রাতে ২. সিজদার সময় ৩. আজানের সময় ৪. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় ৫. ফরজ নামাজের পর ৬. জুমার দিন ৭. বৃষ্টির সময় ৮. রমজান ও শবে কদরের রাত ৯. হজের মৌসুম ১০. জমজমের পানি পান করার পর ইত্যাদি।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি উত্তর দিলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পর।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৪৯৮)

হাত তুলে দোয়া করার বিধান

হাত তুলে দোয়া করা সুন্নাত। মহানবী (সা.) একাধিক হাদিসে হাত তুলে দোয়া করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা দুই হাত তুলে তাঁর কাছে চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস: ১৪৮৮) হাত তুলে দোয়ার পর আমরা যে মুখ স্পর্শ করি- এটিও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন। (জামে তিরমিজি : ২/১৭৬)

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া

ফরজ নামাজের পর দোয়া ও হাত তুলে দোয়া উভয়টিই যে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আমরা তা উল্লেখ করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা কি আবশ্যক? অনেকে অবশ্য এটিকে আবশ্যক-ই মনে করেন, আবার কেউ কেউ এটাকে বলেন, ‘বেদআত’। তবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়্যাহ আল্লামা মোহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউন-করাচীর ফতোয়ায় ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থী চমৎকার একটি উত্তর দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ফতোয়া বিভাগ বলছে, ‘বর্ণিত হাদিসগুলো (এ বিষয়ে সব হাদিস) ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হওয়ার জন্য প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। এজন্য বিষয়টিকে অস্বীকার করা কিংবা ‘বিদআত’ বলার সুযোগ নেই। অনুরূপ এটিকে ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ’ তথা অধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতও আখ্যায়িত করা যায় না।’ তাদের মতে- এক্ষেত্রে গোপনে দোয়া করাই উত্তম। তবে ইমাম সাহেব শিক্ষাদানের উদ্দেশে কখনও কখনও উঁচু আওয়াজে দোয়া করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ফয়জুল বারিতে লেখেন, ‘এরূপ সম্মিলিত দোয়া করাটা ঠিক ‘সুন্নাতে মুসতামিররা’ (সর্বদা পালনীয় সুন্নাত) নয় ঠিকই; কিন্তু এটি করা প্রমাণিত। এজন্য এটিকে বিদআত বলা যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে– ‘ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। দোয়া হাত তুলে করা উত্তম। ইমাম সালাম ফেরানোর পর থেকে আর তার অনুসরণে বাধ্যবাধকতা থাকে না। এজন্য সম্মিলিত দোয়া জরুরি নয়। (ইমাম দোয়া করলে মুক্তাদিররা তা করতে বাধ্য নয়- এটি মূল নামাজের অংশ নয়। কারণ সালাম ফেরানোর সাথে সাথে নামাজ শেষ হয়ে যায়) তবে যদি স্বাভাবিক ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মিলিত দোয়া হয়েই যায়, তাহলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই।’ (দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট; সুওয়াল নম্বর: ১৭৫১৮১)

কবরের সামনে হাত তুলে দোয়া

কবর সামনে রেখে হাত তুলে দোয়া করার ব্যাপারে দেওবন্দ ও জামিয়া বানুরি টাউন-করাচীর ফতোয়া প্রায় কাছাকাছি। বানুরি টাউনের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘কিছু পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) কবরস্থানে হাত তুলে দোয়া করেছেন। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতেও তিনি কেবলার দিকে ফিরে দোয়া করতেন।’

তবে কবরস্তানে হাত তুলে দোয়া করার মাধ্যমে কবরে শায়িত ব্যক্তির কাছে কিছু চাওয়া হচ্ছে—এমনটা মনে হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এজন্য দেওবন্দ ও জামিয়া বানুরি টাউন কবরস্তানে দোয়ার সময় হাত তুলতে নিরুৎসাহিত করে।

এ প্রসঙ্গে আশরাফ আলি থানভি (রহ.) লিখেছেন, ‘কবরস্তানে হাত তুলে দোয়া না করা উচিৎ। …যাতে কারও সন্দেহ না হয় যে, মৃত লোকের কাছে কিছু চাওয়া হচ্ছে।’ (তালিফাতে আশরাফিয়্যাহ)

ফাতোয়ায়ে আলমগিরিতে বলা হয়েছে, ‘কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা চাই। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন।’ (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, পৃষ্ঠা: ৩৫০-খণ্ড: ৫)

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

জীবনে দোয়া-মোনাজাতের ভূমিকা কী ?

প্রকাশিত : ১১:০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২

দোয়া ও মোনাজাত মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট অতীব পছন্দনীয় একটি আমল। মহান রাব্বুল আলামীনের সাথে বান্দার নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন হলো দোয়া ও মোনাজাত। মানব জীবনে দোয়া ও মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

দোয়ার শাব্দিক অর্থ চাওয়া, ডাকা বা আরজি পেশ করা। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কোনও কিছু চাওয়াকে ‘দোয়া’ বলা হয়। আর মোনাজাত শব্দের অর্থ একান্ত ব্যক্তিগত কথাবার্তা। মোনাজাতের পারিভাষিক অর্থ আল্লাহর কাছে ব্যক্তিগতভাবে নীরবে-নিভৃতে আরজি পেশ করা। শব্দ দু’টির মধ্যে অর্থগত পার্থক্য থাকলেও ব্যবহারগত দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই। তবে কোরআনে কারিমে ‘দোয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)।

ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব

ইসলামে বৈধ—এমন প্রতিটি কাজের জন্য দোয়া রয়েছে। দোয়া পড়ে কাজ শুরু করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। দৈনন্দিন জীবনযাপনে দোয়া পাঠে যত্নবান হলে বরকত ও কল্যাণ লাভ হয় এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৩৭৩)। অন্য হাদিসে তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়ার চেয়ে অধিক মূল্যবান জিনিস আর কিছু নেই।’ তিরমিজি, হাদিস নং: ৩২৯২)

দোয়া স্বতন্ত্র ইবাদত

হাদিস শরিফে দোয়াকে ইবাদত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর স্পষ্ট ঘোষণা; তিনি বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৩৭০) তিনি আরও বলেন, ‘দোয়াই ইবাদতের মগজ।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩২৯৩)

দোয়ায় ভাগ্য পরিবর্তন হয়

আল্লাহ-নির্ধারিত ভাগ্যলিখন অবধারিত। তবে যে একটিমাত্র পদ্ধতিতে তা পরিবর্তন সম্ভব তা হলো– দোয়া। এজন্য সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনও কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে– তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনও কোনও দুর্দশার সঙ্গে মোকাবিলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত, হাদিস : ১৫১৯)

কোনও দোয়া বিফল নয়

মুমিনের কোনও দোয়াই বিফল হয় না। দোয়ার ফলাফল তিনটি ধাপে আল্লাহ বান্দাকে দিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন কোনও মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহতায়ালা তিনটি প্রতিদানের যেকোনও একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনও অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তার আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১১১৪৯)

দোয়া কবুলের উত্তম সময়

একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে সবসময় তিনি তা কবুল করেন। তবে হাদিসে কিছু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেসব সময়ে দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হাদিসের আলোকে সময়গুলো উল্লেখ করা হলো- ১. শেষ রাতে ২. সিজদার সময় ৩. আজানের সময় ৪. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় ৫. ফরজ নামাজের পর ৬. জুমার দিন ৭. বৃষ্টির সময় ৮. রমজান ও শবে কদরের রাত ৯. হজের মৌসুম ১০. জমজমের পানি পান করার পর ইত্যাদি।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি উত্তর দিলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পর।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৩৪৯৮)

হাত তুলে দোয়া করার বিধান

হাত তুলে দোয়া করা সুন্নাত। মহানবী (সা.) একাধিক হাদিসে হাত তুলে দোয়া করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা দুই হাত তুলে তাঁর কাছে চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস: ১৪৮৮) হাত তুলে দোয়ার পর আমরা যে মুখ স্পর্শ করি- এটিও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন। (জামে তিরমিজি : ২/১৭৬)

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া

ফরজ নামাজের পর দোয়া ও হাত তুলে দোয়া উভয়টিই যে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আমরা তা উল্লেখ করেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা কি আবশ্যক? অনেকে অবশ্য এটিকে আবশ্যক-ই মনে করেন, আবার কেউ কেউ এটাকে বলেন, ‘বেদআত’। তবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়্যাহ আল্লামা মোহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউন-করাচীর ফতোয়ায় ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থী চমৎকার একটি উত্তর দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ফতোয়া বিভাগ বলছে, ‘বর্ণিত হাদিসগুলো (এ বিষয়ে সব হাদিস) ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হওয়ার জন্য প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। এজন্য বিষয়টিকে অস্বীকার করা কিংবা ‘বিদআত’ বলার সুযোগ নেই। অনুরূপ এটিকে ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ’ তথা অধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতও আখ্যায়িত করা যায় না।’ তাদের মতে- এক্ষেত্রে গোপনে দোয়া করাই উত্তম। তবে ইমাম সাহেব শিক্ষাদানের উদ্দেশে কখনও কখনও উঁচু আওয়াজে দোয়া করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী ফয়জুল বারিতে লেখেন, ‘এরূপ সম্মিলিত দোয়া করাটা ঠিক ‘সুন্নাতে মুসতামিররা’ (সর্বদা পালনীয় সুন্নাত) নয় ঠিকই; কিন্তু এটি করা প্রমাণিত। এজন্য এটিকে বিদআত বলা যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে– ‘ফরজ নামাজের পর দোয়া করা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। দোয়া হাত তুলে করা উত্তম। ইমাম সালাম ফেরানোর পর থেকে আর তার অনুসরণে বাধ্যবাধকতা থাকে না। এজন্য সম্মিলিত দোয়া জরুরি নয়। (ইমাম দোয়া করলে মুক্তাদিররা তা করতে বাধ্য নয়- এটি মূল নামাজের অংশ নয়। কারণ সালাম ফেরানোর সাথে সাথে নামাজ শেষ হয়ে যায়) তবে যদি স্বাভাবিক ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মিলিত দোয়া হয়েই যায়, তাহলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই।’ (দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট; সুওয়াল নম্বর: ১৭৫১৮১)

কবরের সামনে হাত তুলে দোয়া

কবর সামনে রেখে হাত তুলে দোয়া করার ব্যাপারে দেওবন্দ ও জামিয়া বানুরি টাউন-করাচীর ফতোয়া প্রায় কাছাকাছি। বানুরি টাউনের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘কিছু পরিস্থিতিতে রাসুল (সা.) কবরস্থানে হাত তুলে দোয়া করেছেন। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতেও তিনি কেবলার দিকে ফিরে দোয়া করতেন।’

তবে কবরস্তানে হাত তুলে দোয়া করার মাধ্যমে কবরে শায়িত ব্যক্তির কাছে কিছু চাওয়া হচ্ছে—এমনটা মনে হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এজন্য দেওবন্দ ও জামিয়া বানুরি টাউন কবরস্তানে দোয়ার সময় হাত তুলতে নিরুৎসাহিত করে।

এ প্রসঙ্গে আশরাফ আলি থানভি (রহ.) লিখেছেন, ‘কবরস্তানে হাত তুলে দোয়া না করা উচিৎ। …যাতে কারও সন্দেহ না হয় যে, মৃত লোকের কাছে কিছু চাওয়া হচ্ছে।’ (তালিফাতে আশরাফিয়্যাহ)

ফাতোয়ায়ে আলমগিরিতে বলা হয়েছে, ‘কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা চাই। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন।’ (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, পৃষ্ঠা: ৩৫০-খণ্ড: ৫)

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব