০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গাছ ঢুকিয়ে অবৈধ ড্রেন বন্ধ করলেন উত্তর সিটি মেয়র

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের মতো অভিজাত এলাকার ৩৮৩০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। বাকি ৩২৬৫টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব বাড়ির অধিকাংশ সুয়ারেজ লাইন সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের বৃষ্টির পানি অপসারণের ড্রেনে পতিত হচ্ছে। পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা বাড়ি মালিকদের শিক্ষা দিতে তাদের সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে লাইন বন্ধ করে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বুধবার, ৪ জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে গুলশান-২-এর ১১২ নম্বর রোডের একটি বাসার ড্রেনে মেয়রের নির্দেশে কলাগাছ ঢুকিয়ে লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আরও বেশ কিছু বাসাবাড়ির ড্রেনের লাইনে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সময় মেয়র বলেন, গত ৩১ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব অভিজাত এলাকার বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হয়। বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে অনেক বার মিটিং করা হয়েছে, যাতে করে তারা তাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৬ মাস চলে যাবার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে আজকে গুলশানের বাড়িগুলোতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে যাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে এসে পড়েছে তাদের বাড়ির সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি আগেও তাদের সতর্ক করেছিলাম যে, সঠিক ব্যবস্থা না নিলে কলা গাছ ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেব। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনিন। এটা তাদের জন্য একপ্রকার শিক্ষা হবে। কলা গাছ ঢুকানোর ফলে তাদের বাড়ির ওয়াশরুমগুলো ওভার ফ্লো হচ্ছে। এরপর থেকে বাড়িওয়ালারা যেন তাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থা করেন, সেজন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, বারিধারা হচ্ছে সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। যেটাকে ডিপ্লোম্যাটিটিক জোন বলা হয়। কিন্তু এই জোনে ৫৫০ বাড়ির মধ্যে মাত্র ৫টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নেওয়া আছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বারিধারার সকলে আমার কাছে একটা অভিযোগই করেন যে, এ এলাকায় শুধু মশা আর মশা। আমি বলি এখানে মশা তো হবেই, কারণ পয়োবর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে বারিধারার লেকে। এর ফলে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। আমি এই সকল সোসাইটির বাসিন্দাদের বলতে চাই, অনতিবিলম্বে আপনারা সোসাইটির সঙ্গে বসেন।

মেয়র আতিক বলেন, আমি বাড়ি মালিকদের বলতে চাই, বড় বড় ভবনে যদি ১০ লাখ টাকা খরচ করে জেনারেটর লাগাতে পারেন, তাহলে আপনারা যার যার বাড়িতে ‘এফুলেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ করে এই পয়োবর্জ্য কেন ছাড়তে পারেন না? সামান্য এই কাজটুকু করলে জলজ প্রাণীর জন্য ভালো হবে। এসব প্রযুক্তি এখন দেশেই আছে। এ নিয়ে আমরা বেশ কিছু মেলার ব্যবস্থাও করেছি। অর্থাৎ সমাধান না করে কিন্তু আমরা এই অভিযান চালাইনি।

বাংলাদশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক মুজিব বলেন, আমরা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এই চারটি এলাকা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছি। এটা দেখার জন্য যে কোন বাড়িতে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সঠিক আর কোন বাড়িতে নেই। আর যে সকল বাড়িতে একদমই পয়োবর্জ্য ব্যবস্থা নেই তাদের কীভাবে ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি। আমরা সকলেই জানি ঢাকা শহরে অধিকাংশ এলাকায় সুয়ারেজের নেটওয়ার্ক নেই। এই চারটি অভিজাত এলাকার মধ্যে শুধু বনানী এবং গুলশানে সুয়ারেজ নেটওয়ার্ক আছে। বারিধারা, নিকেতন এলাকায় কোনো সুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই। এই এলাকাগুলো শুধু সেপটিক ট্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এখানেও আমরা সার্ভে করে দেখেছি, কতগুলো বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক আছে আর কতগুলোতে নেই। তবে দুঃখের বিষয় হলো এই এলাকাগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে সুয়াজের লাইন সরাসরি বৃষ্টির পানির লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত। যে কারণে আমাদের লেকগুলো দূষিত হচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র নিজে অভিযান পরিচালনা করেন গুলশান-২-এর ১১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর প্লটের মমতাজ ভিলায়। এই ভবনের সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ দিয়ে বন্ধ করা হয়। এরপর ১০২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির সুয়ারেজ লাইনও কলা গাছ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

গাছ ঢুকিয়ে অবৈধ ড্রেন বন্ধ করলেন উত্তর সিটি মেয়র

প্রকাশিত : ০৩:৫০:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের মতো অভিজাত এলাকার ৩৮৩০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। বাকি ৩২৬৫টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব বাড়ির অধিকাংশ সুয়ারেজ লাইন সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের বৃষ্টির পানি অপসারণের ড্রেনে পতিত হচ্ছে। পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা বাড়ি মালিকদের শিক্ষা দিতে তাদের সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে লাইন বন্ধ করে দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বুধবার, ৪ জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে গুলশান-২-এর ১১২ নম্বর রোডের একটি বাসার ড্রেনে মেয়রের নির্দেশে কলাগাছ ঢুকিয়ে লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আরও বেশ কিছু বাসাবাড়ির ড্রেনের লাইনে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সময় মেয়র বলেন, গত ৩১ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব অভিজাত এলাকার বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হয়। বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে অনেক বার মিটিং করা হয়েছে, যাতে করে তারা তাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ৬ মাস চলে যাবার পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে আজকে গুলশানের বাড়িগুলোতে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে যাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে এসে পড়েছে তাদের বাড়ির সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি আগেও তাদের সতর্ক করেছিলাম যে, সঠিক ব্যবস্থা না নিলে কলা গাছ ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেব। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনিন। এটা তাদের জন্য একপ্রকার শিক্ষা হবে। কলা গাছ ঢুকানোর ফলে তাদের বাড়ির ওয়াশরুমগুলো ওভার ফ্লো হচ্ছে। এরপর থেকে বাড়িওয়ালারা যেন তাদের বাড়ির পয়োবর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থা করেন, সেজন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, বারিধারা হচ্ছে সবচেয়ে অভিজাত এলাকা। যেটাকে ডিপ্লোম্যাটিটিক জোন বলা হয়। কিন্তু এই জোনে ৫৫০ বাড়ির মধ্যে মাত্র ৫টি বাড়িতে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নেওয়া আছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বারিধারার সকলে আমার কাছে একটা অভিযোগই করেন যে, এ এলাকায় শুধু মশা আর মশা। আমি বলি এখানে মশা তো হবেই, কারণ পয়োবর্জ্য সরাসরি গিয়ে পড়ছে বারিধারার লেকে। এর ফলে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। আমি এই সকল সোসাইটির বাসিন্দাদের বলতে চাই, অনতিবিলম্বে আপনারা সোসাইটির সঙ্গে বসেন।

মেয়র আতিক বলেন, আমি বাড়ি মালিকদের বলতে চাই, বড় বড় ভবনে যদি ১০ লাখ টাকা খরচ করে জেনারেটর লাগাতে পারেন, তাহলে আপনারা যার যার বাড়িতে ‘এফুলেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ করে এই পয়োবর্জ্য কেন ছাড়তে পারেন না? সামান্য এই কাজটুকু করলে জলজ প্রাণীর জন্য ভালো হবে। এসব প্রযুক্তি এখন দেশেই আছে। এ নিয়ে আমরা বেশ কিছু মেলার ব্যবস্থাও করেছি। অর্থাৎ সমাধান না করে কিন্তু আমরা এই অভিযান চালাইনি।

বাংলাদশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক মুজিব বলেন, আমরা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এই চারটি এলাকা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছি। এটা দেখার জন্য যে কোন বাড়িতে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সঠিক আর কোন বাড়িতে নেই। আর যে সকল বাড়িতে একদমই পয়োবর্জ্য ব্যবস্থা নেই তাদের কীভাবে ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি। আমরা সকলেই জানি ঢাকা শহরে অধিকাংশ এলাকায় সুয়ারেজের নেটওয়ার্ক নেই। এই চারটি অভিজাত এলাকার মধ্যে শুধু বনানী এবং গুলশানে সুয়ারেজ নেটওয়ার্ক আছে। বারিধারা, নিকেতন এলাকায় কোনো সুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই। এই এলাকাগুলো শুধু সেপটিক ট্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এখানেও আমরা সার্ভে করে দেখেছি, কতগুলো বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক আছে আর কতগুলোতে নেই। তবে দুঃখের বিষয় হলো এই এলাকাগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে সুয়াজের লাইন সরাসরি বৃষ্টির পানির লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত। যে কারণে আমাদের লেকগুলো দূষিত হচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র নিজে অভিযান পরিচালনা করেন গুলশান-২-এর ১১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর প্লটের মমতাজ ভিলায়। এই ভবনের সুয়ারেজ লাইনে কলা গাছ দিয়ে বন্ধ করা হয়। এরপর ১০২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির সুয়ারেজ লাইনও কলা গাছ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব