পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের অভিহিত করা ‘নিষিদ্ধ’ পলিথিনের ব্যবহার সমগ্র বাংলাদেশের মত ভেড়ামারাতেও দিন দিন বেড়েই চলেছে। ছোট-বড় সব বাজারেই এখন ঢালাওভাবে বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে ‘নিষিদ্ধ’ পলিথিন। নিষিদ্ধ ঘোষণা দেওয়া হলেও দুঃখের বিষয় উপজেলার বেশিরভাগ দোকানেই প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে পলিথিন।
২০০২ সালে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প ছাড়া সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপক আকারে আগের চেয়েও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভেড়ামারা শহর ও গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাজারেই ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছবাজার, ফলের দোকান, কাঁচাবাজারসহ সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি।
ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সভাপতি ডাক্তার আমিরুল ইসলাম মান্নান বলেন, বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানেই এখন পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে। নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যবহারে একদিকে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে শহরে ময়লা–আবর্জনা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমনকি নদীও তার নাব্যতা হারাতে বসেছে। ভেড়ামারায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই, প্রশাসনের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
ব্যবহার, উৎপাদন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই ভেড়ামারায় সব জায়গাতেই পলিথিন ব্যাগের অবাধ ব্যবহার চলছে। ভেড়ামারার পৌর শহরসহ কয়েকটি উপজেলার বাজার ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর ও গ্রাম গঞ্জের প্রতিটি বাজারে বিক্রতেরা পলিথিন ব্যাগেই মালামাল দিচ্ছেন এবং ক্রেতারাও তা সাচ্ছন্দ্যে বহন করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
দোকান মালিকরা বলছেন, দোকানে পলিথিন ব্যাগ রাখলে বেচা-কেনা ভালো হয়। তাই আইন মানতে গিয়ে কেউই ব্যবসায় লোকসান গুনতে চান না। ফলে সব দোকানেই পলিথিন ব্যাগ রাখতে হয়।
বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতা জানান, পাটের তৈরি বাজার ব্যাগ সহজে বহনযোগ্য নয় আবার দামও বেশি। আর কাপড়ের ব্যাগের দাম তো আরও বেশি। কিন্তু পলিথিন ব্যাগের দাম কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় সাধারণ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। বিশেষ করে মাছ এবং কাঁচা বাজারের বেশিরভাগ পণ্যই ভেজা থাকে। এ কারণে ক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করেন।
ডা. মিশকাত আলি খান বলেন, পলিথিন সহজে পচে না। এটি পলিইথাইনিল নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি পানিরোধক বলে জমিতে ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এটি মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
পলিথিনের বিরুদ্ধে সমগ্র জেলার ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরও বেগবান করতে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, পৌর শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলা সদরসহ গ্রামের বাজারগুলোতেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব