পূণ্য সেবার মধ্য দিয়ে সাধুদের মুল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাধুরা নিজ নিজ বাড়ী ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে সাধু ভক্তরা লালন চত্বর ছেড়ে নিজ গৃহে চলে যাওয়ার ফলে লালন চত্বর ফাকা হতে চলেছে। বিদায় লগ্নে অনেক সাধু লালন ভক্তরা চোখের জল ভাসিয়ে লালন চত্বরের আসন ছেড়েছে। আবার ১লা কার্তিক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই এর ধামে আসবে তারা। সাধুদের মধ্যে অনেকেই আজকের দিনও লালন চত্বরে অবস্থান করবে বলে কয়েকজন লালন ভক্তরা জানায়। এর ফলে সাধুদের ভাঙ্গল মিলন মেলা।
গত তিন দিন ধরে এক তারা দোতারা বাদ্য যন্ত্র নিয়ে সাধুরা গানের মধ্য দিয়ে লালনকে স্মরন করতে থাকে। “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”, “মায়েরে ভজলে হয় বাপেরই পরিচয়”, “মিলন হবে কত দিনে” “ রাত পোহালে পাখি বলে, দে রে খাই দে রে খাই” লালন সঙ্গীতের লালনের আধ্যাত্মিক গানে লালন চত্বর মুখরিত হয়। দিন রাত চলে সাধু ভক্তদের লালন সংগীত। লালনের আধ্যাত্মিক গানের মধ্যেই খুজে পেয়েছে লালনের দর্শন।
বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের স্মরণোসৎসব সোমবার রাতে আলোচনা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপনি ঘটে। তবে এবারও লালন স্মরোণৎসবে স্মরণকালের সব চেয়ে বেশী লালন ভক্ত আর লালন সাধুদের আগমন ঘটায় লালন চত্বর মুখোরিত হয়ে উঠে। এক দিকে সন্ধ্যায় কালিগাং নদী পারে বিশাল মঞ্চে চলছে লালনের জীবনীর উপর আলোচনা ও লালন একাডেমীর আয়োজনে লালন সংগীত অপর দিকে লালন মাজার চত্বরে সাধুদের আধ্যাতিক লালন গান। দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালন অনুসারীরা লালন চত্বরে সাধুদের পাশে বসে ভীড় জমিয়ে লালনের সন্ধ্যানে ব্যকুল হয়ে উঠে। এবার লালন স্মরোণৎসব কে ঘিরে লালন চত্বরে বাউলদের আগমনে তিলধরনের ঠাঁই ছিলনা।
বিদায়কালে লালন ভক্তরা কান্নার সুরে বলেন, মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসব (দোলপূর্ণিমা)। লালনভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতিবছর তার শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতিবছর লালন সাঁইজির আখড়াবাড়িতে দোল উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ। তবে পবিত্র শবে বরাতের কারণে এবার শত বছরের নিয়ম ভেঙে পূর্ণিমার পরিবর্তে দ্বাদশ তিথি থেকে এ উৎসব শুরু হয়। শেষ হলো পূর্ণিমার আগের দিন দুৃপুরে।
তবে লালনের মূল ধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা এসেছিলেন তারা পরম্পরা মেনে ৬ মার্চ দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করেন। ৭ মার্চ দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করলেন সাধুসঙ্গ।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব