ঢাকার কাছে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁশ-কাঠে তৈরী
রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারটি নজর কাড়ছে বিনোদন প্রেমিদের

প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে নির্মল সবুজের সমারোহ, আকাশের আলিঙ্গন, সব যেন একাকার হয়ে মিশে গেছে এ অঙিনায় । বাঁশ ও কাঠে তৈরি গ্রামীন পরিবেশ বান্ধব দৃষ্টিনন্দন রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টার । গাছপালা গেরা গাঢ় সবুজের ছোঁয়ায় মোড়ানো স্থানটি । এরই মধ্যেই মাথা তুলেছে বাঁশ-কাঠের যৌথ আলিঙ্গনে তৈরী বিশাল আকৃতির লম্বা একটি দোতলা ঘর। সারি সারি বাঁশের খুটিতে বাঁশ-কাঠের যৌথ মেলবন্ধনে ১৭০ ফিট লম্বা ও ৩০ ফিট প্রশস্থ বিশাল দোতলা পরিবেশ বান্ধব ঘরটি বিনোদন প্রেমিদের নজর কাড়ছে।
প্রামাণ্য চলচিত্র নির্মাতা ব্রাত্য আমিন ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারী রূপগাঁও রিসোর্টের যাত্রা শুরু করেন। বেশ কয়েক বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন এ প্রতিষ্ঠান। তবে তিনি ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে ১৭০ ফিট লম্বা দ্বিতল বিশাল ঘরটি বাঁশ-কাঠ দিয়ে নান্দনীক সৈন্দর্যে ভরপুর করে বাঙগালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারটি তৈরী করেছেন। চমৎকার এই রিসোর্টে প্রবেশ করতে কোনো টাকা লাগে না। গাড়ি নিয়েও অনেকে আসেন। পার্কিংয়েও কোনো টাকা নেয়া হয় না।
ইট পাথরের নগড়িকে পাশ কাটিয়ে ঢাকার অতি নিকটে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলার স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশবর্তি এলাকায় দক্ষিন দিকে জাঙ্গীর নামক স্থানে সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে রূপগাঁও রিসোর্টটি । অবশ্য এখানে এসির কোনো ব্যবস্থা নেই। ৮০ ভাগ বাঁশ দিয়ে তৈরী এ দ্বিতল স্থাপনায় ছাদ, প্রতিটি রুমের দেয়াল, দোতলার মেঝে, দোতলায় ওঠার সিঁড়িসহ কাঠ-বাঁশের তৈরী হয়েছে পরিবেশ বান্ধব স্থাপনা। তবে বাহিরে রয়েছে মনমুগ্ধকর গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য।
পরিবেশ বান্ধব দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনাটিতে রয়েছে রাত্রি যাপনের জন্য ডাবল বেডের ৭টি বেড রুম,৫০-৬০ জনের অংশগ্রহনে বিভিন্ন কর্মশালা আয়োজন, দিনব্যাপী অবস্থান কিংবা অনেকে মিলে রাত্রি যাপনের জন্য একটি বড় হলরুম ও একটি খাবারের ঘর। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা দুটি গোসলখানা ও চারটি শৌচাগার। প্রাকৃতিক ও নিরাপদ দেশজ-ভেষজ খাদ্যপন্য বিপননের জন্য রয়েছে একটি বিপনন কেন্দ্র। এছাড়াও স্থাপনার আঙিনায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা। প্রাকৃতিক চিরচেনা সবুজ মনোরম গ্রামীন পরিবেশে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ যাদের নেই, রাজধানী ঢাকার অতি নীকটে ২০ মিনিটের পথ পারিদিয়ে তারা সত্যিকারের আদর্শ গ্রামের অনুভূতি পেতে আসতে পারেন রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহড় সংলগ্ন রূপগাঁওয়ে।
ঘরের মুল সিঁড়ি ধরে উপড়ে উঠতে গেলেই চোখে পরবে বিভিন্ন জায়গায় ঝোলানো বাঁশের তৈরী কুলা। যেখানে লেখা রয়েছে আলো হাওয়া বেঁধো না রোগেভোগে মোরো না সহ অসংখ্য উক্তি। আবার পযর্টন স্পটের চার পাশে ধানের ক্ষেত। পুকুর, বিল ও ধানক্ষেতসহ বর্তমানে চারিদিকে গ্রামীন প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান। স্থাপনাটির সামনের দিকে চার পাশে আমগাছের বেষ্টনী।
অসংখ গাছে থোকায় থোকায় ধরা আম গুলো বাতাসে দুলছে। পর্যটকদের অনেকে গাছের কাঁচা আম ছিড়ে নিচ্ছেন। ঠিক পাশেই ফাঁকা ফাঁকা বসতি সবুজ অরণ্য ফসলী ভুমি। নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলী। মাটির তৈরী তৈজসপত্রে খাবার পরিবেশন সহ সব মিলিয়ে শান্ত নিরিবিলি গ্রামীন পরিবেশে বাঁশ-কাঠে নির্মিত রিসোর্টটিকে প্রতিটি পরতে পরতে গ্রাম বাংলার পুরোনো সাংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করেই নির্মিত হয়েছে রূপগাঁও।
ঢাকা থেকে রূপগাঁওয়ে পিকনিক পার্টিতে আসা শবনম খানম বলেন, পাখি ডাকা সবুজে ঘেরা শান্ত নিরিবিলি বাঁশ নির্মিত এ রিসোর্টটি প্রতিটি পরতে পরতে বাঙগালিয়ানা সংস্কৃতির উপস্থিতি রয়েছে।প্রাকৃতিক পরিবেশ অকৃত্তিম বাতাশ যা মানসিক প্রসান্তি দায়ক।
তিথি সুমনা বলেন,রূপগাঁওয়ের দৃষ্টিনন্দন বাঁশঘর প্রাকৃতিক সবুজ , মনোরম পরিবেশ সব মিলিয়ে এমন যে মনে হয় এখানেই থেকে যাই আরও কয়েকটা দিন। আমার বাচ্চারাও সুন্দও পরিবেশে দিক বেদিক ছুটা ছুটি করছে। সব মিলিয়ে রূপগাঁওয়ে আনন্দঘন একটা দিন কাটালাম।
ডেমড়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রোকন মিয়া তিনি জানান, আমাদের এতো কাছে এতো সুন্দর একটা রিসোর্ট ভাবাই যায়না। যেখানে বাঁশের তৈরী বিশাল দোতলা পরিবেশ বান্ধব দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় সময় কাটানো, সাথে মাটির তৈজসপত্রে খানাপিনা, সবুজ প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে।
রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টারের স্বপ্নদ্রষ্টা ব্রাত্য আমিন বলেন, গতানুগতিক ইট পাথর ব্যাবহার না করেই ২০ শতাংশ জমিতে তিনি নির্মান করেছেন ১৭০ ফুট লম্বা বাঁশের তৈরী একটি দ্বিতল স্থাপনা। গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁশ,কাঠ ও মাটি দিয়ে পরিবেশ বান্ধব এ স্থাপনাটি তৈরী করেছেন।
তিনি বলেন, স্থাপত্য বিষয়ক গবেষনা প্রতিষ্ঠান পার্সিভের নকশায় ও নির্দেশনায় পরিবেশ বান্ধব করে রূপগাঁও রিসোর্টটি তৈরী করা হয়েছে। ইট পাথরের নগড়ির পাশে রূপগাঁওয়ে আসলে মানুষ গ্রামীন প্রকৃতি ও পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। এখানে থাকবে রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত ফসলে উৎপাদিত সকল দেশিয় খাবার। খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে মাটির তৈরী তৈজষ পত্রে। সব মিলিয়ে গ্রাম বাংলার চিরাচরিত কৃষ্টি-কালচার ও ঐতিহ্যকে ধারণ ও উপস্থাপন করার প্রত্যয় নিয়ে রূপগাঁও নলেজ এক্সচেঞ্জ সেন্টার যাত্রা শুরু করেছে।
যেভাবে যাবেন ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতা গাউছিয়া চলাচলকারী যাত্রীবাহি বাসে কাঞ্চন ব্রিজের পশ্চিপাড় নেমে ১কিমি রাস্তা রিক্সা বা অটোতে যেতে পারেন।এ ছাড়া ডেমড়া স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডেমড়া-কালিগঞ্জ সড়কের জাঙ্গির ঈদগাহ বাজারের পাশেই রূপগাঁও রিসোর্ট অবস্থিত। এ পথে স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রিক্সা বা অটো যোগে আসা যাবে।