০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

“বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব”

সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়া এক বাঙালি, মূলত কবি, স্বর্গগমন নিশ্চিত করেই দেহ রেখেছেন। ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। যমরাজ ‘কাল’ ছুটিতে আছেন। বহিঃস্বর্গ ছুটি। বিনা বেতনে। চিত্রগুপ্তকে ভারপ্রাপ্ত যমরাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চিত্রগুপ্ত ভাবলেন একটুও ছুটিছাটা পাইনা। খালি কাজ আর কাজ। সুযোগ পেয়েছি একটু আরাম করি। স্বর্গ আর নরক। যার বরাতে যা আছে সে যাবেই। বিষয়টা এরকম দাঁড়ালো যে অনেক সময় অনেক দেশ ভিসা নীতিতে ঔদাসীন্য দেখায়। তখন আইন কানুনের শীতলতার কারণে সঠিক ব্যক্তি ভিসা পায় না আবার অনেক অযোগ্য লোকও দেশে ঢুকে পড়ে। এ সময়ে স্বর্গ নরকের ট্রানজিট ক্যাম্পের অবস্থা তাই ভালো না খারাপ বলা যাবে না। স্বর্গ নরক প্রাপ্তি আপাতত কদিন পাপ পূণ্যের চেয়ে ভাগ্যের উপর বেশি নির্ভর করবে।

চিত্রগুপ্ত যমের চরদের ডেকে বললেন , চরেরা শোন, বহুদিন পর যমের থেকে ছাড়া পেয়েছি তোরা আমাকে একটু বিশ্রাম করার সুযোগ দে। নিজেদের মত চালিয়ে নে। চরদের লিডারকে উদ্দেশ করে বললেন এই হনু, দেখিস হাল্লাগোল্রা যেন না হয়। চরের লিডার ভাবল বউকে নিয়ে বেড়াবার এই সুযোগ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে অফিস বন্ধ করতে হবে। চরেরা দেখল আজ ক্লায়েন্টের ভীড় বেশি, জনে জনে ভাইবা নিলে দিন শেষে বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যাবে না। রাজার অনুপস্থিতে একটু বাড়তি বিশ্রামের সুযোগ না পেলে কী হয় ? তারা তাদের নেতা হনুকে বলল বস আজ গ্রুপে ভাইবা নেই। তাহলে তাড়াতাড়ি কাজ ফুরোবে।

আমাদের সেই প্রথম হওয়া ব্যক্তি, যিনি রান্না-বান্না, কবিতা লেখা, সাংবাদিকতা, তেলবাজি , জমি দখল ,রাজনীতি, চাকরী-বাকরি, চুরি চামারি সবকিছুতেই দেশে বিদেশে প্রথম হতেন। তাই এক্ষেত্রেও প্রথম গ্রুপে যায়গা করে নিলেন। জমের শ্রেষ্ঠ চর হনু গ্রুপের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল, আপনাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি পাপ করেছেন তিনি হাত তোলেন । মহামতি পূণ্যবান শ্রেষ্ঠ কবি শুনলেন প্রশ্ন হচ্ছে জীবনে সবচেয়ে বেশি মাপ করেছেন কে? তিনি ভাবলেন আরে এ তো আমিই। আমিই ক্ষমাসুন্দর। আমিই সবাইকে ক্ষমা করেছি বেশি। আমিই ক্ষমাতে শ্রেষ্ঠ। প্রথম হওয়ার জন্যে আমি চোরকে মাপ করেছি। ডাকাতকে, সন্ত্রাসীকে ভাই বানিয়েছি। তার আনুকুল্য চেয়েছি পেয়েছি। আমার চেয়ে ক্ষমাশীল আর কে ? কবিই হাত তোললেন প্রথমে। এইবার ইষ্ট লাভ হলো উল্টো। যমের চরেরা নিমিষেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিল নরকে।

শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণাটি আপনি যখন জনসন্মুখে উন্মুখ হয়ে প্রকাশ করছেন তখন আপনার জানা উচিৎ আপনি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড এডলার এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আপনি আপনার হীনমন্যতাকে ঢাকতে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছেন। প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাইদের কথায় আপনার বিশ্বাস করা উচিৎ, শরমিন্দা হওয়া উচিৎ। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে যেয়ে আপনি কখনও ভাবেননি, শ্রেষ্ঠত্ব কী? আপনি প্রথম হয়েছেন এটা একটা সাফল্য। প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাইদের ধারণা -সাফল্য খুব কাম্য জিনিস হলেও বড় জিনিস নয়। সাফল্য একপ্রকার দক্ষতা। চোর –বাটপারও অনেক সময় সফল হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে সফল লোকদের মধ্যে আশি ভাগই দুবৃত্ত। এমন জিনিস নিয়ে পাগল হওয়ার কী আছে? সবচেয়ে যা বড় জিনিস, তা সাফল্য নয়, সার্থকতা। ফুলের অনেক বৈচিত্র বা রঙের জৌলুশ আছে। এগুলো তার সাফল্য। কিন্তু যে গন্ধ দিয়ে সে আমাদের মন ভোলায় তা হল তার স্বার্থকতা । সেই সার্থকতাই আমাদের কাম্য হওয়া উচিৎ।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রথম হওয়ার জন্যে কবিতা লিখেছিলেন ? না। যাদের হাতে যে বিষয় বিকশিত হয়েছে তারা কেউ প্রথম হওয়া, শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা পুরষ্কারের লোভে কাজ করেননি। কাজ করেছেন মানব কল্যাণে। মানব সেবায় ব্রতী হওয়া মানুষ কোন ভাষা, অঞ্চল, ধর্ম-বর্ণের নন। তারা মানবতার। মৃত্যুর হাজার বছর পরেও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। তাদের অবস্থান ঠিক রাখা্র জন্যে মন্ত্রী, এমপি ,পরিচালক, উপপরিচালক কারোর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে না। অথচ হে দুনির্বার বাঙালি নিজের দিকে তাকান, প্রথম স্থান বগলদাবা করার জন্যে আপনি কিনা করেছেন। বাছুরের অনাহারী বাচ্ছার মত হাম্বা হাম্বা রব করে রটিয়ে বেড়িয়েছেন আপনার কর্ম। কী কর্ম ? একদিন আপনার ঘরে খাবার ছিল না। কিন্তু ছিলেন কৃষক। কৃষকের সন্তান। লেখাপড়া শিখে কী হয়েছেন? কৃষক থেকে উন্নত মানুষ। শহুরে শিক্ষিত উন্নত মানুষ। এখন আপনি কৃষককে সবক শিখান। কাদায় নামতে হয়না। আপনার যায়গা দখল করেছে আরেক কৃষক। পৃথিবীর আশি কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে সেও রাতে না খেয়ে ঘুমায়। আর আপনি মনের আনন্দে কৃত্রিম বেদনা বিলিাসিতায় কবিতা লিখে ফুর্তিতে নির্ঘুম রাত কাটান। এটাই আপনার শ্রেষ্ঠত্ব ?

আপনি এটা মানবেন না কারণ আপনি বাঙালি শ্রেষ্ঠ। সুপিরিওরিটি ও ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স থিওরি আপনার বেলায় প্রযোজ্য হবে না। শুধু শ্রেষ্ঠ হওয়ার বাসনা, এ এক আলাদারকম ব্যমো। শ্রেষ্ঠত্বেও খুশি নয় এরা ,পাশের জনের ঠ্যাং ভেঙ্গে লুলা করে রাখতে চায় এরা। যাতে প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে না পারে। তাই বাঙালির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আছে। কিন্তু অর্জন বলতে ঐ শেষ পর্য্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান আর রবীন্দ্রনাথ। হাজার বছরে এই দুই কালোত্তীর্ণ।
মানুষ এমনিতেই সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেয়ে চণ্ডীদাস বলেন- সবার উপরে মানুষ সত্য । মানুষ ছাড়া চণ্ডীদাসের চোখে আর কিছু পড়ল না। তাই পৃথিবীর বুকে আর যত জীব জন্তু আছে সবাইকে মেরে খাচ্ছে মানুষ। পশু-পাখি বিলীন হওয়ার পথে। মানুষ এখন মানুষের মাংস খাচ্ছে। এটাই কী শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা ? আমরা বাঙালিরা শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বরঞ্চ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছি। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে রাজা সেজে নিজের হীনমন্যতাকে ঢাকতে চাচ্ছি। অন্ধ হয়ে দেখছি না, চোখের সামনেই আমাদের জাতির পিতা। একটা দেশের জন্ম দিয়েও নিজেকে বলেলনি আমি শ্রেষ্ঠ। জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন শ্রেষ্ঠ বাঙালি কী করে ? আর কবি মহোদয় আপনি, বঙ্গবন্ধু মুজিবের ছবির নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন আর স্ট্যাটাস দিচ্ছেন আমি শ্রেষ্ঠ, দেশ সেরা , বিশ্ব সেরা। সেরার মত হোন, নিজের সাফল্য দিয়ে অন্যের জীবন সার্থক করুন। তবেই না লোকে বলবে আপনি শ্রেষ্ঠ।

গল্প দিয়েই শুরু করেছিলাম। গল্প দিয়েই শেষ করি।
কারখানার সবচেয়ে পরিশ্রমী শ্রমিক ঘামে ভিজে. ভেজা শরীরে একই কারখানার শ্রেষ্ঠ শ্রমিকের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল, ভাই তুমি কোন পরিশ্রম করো না। সারাদিন ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়াও। তারপরেও তুমি কিভাবে শ্রেষ্ঠ শ্রমিক হও ? পুরষ্কার পাও। সেই নায়ক চেহারার শ্রমিক লাল টুকটুকে ঠোটের ফাঁক দিয়ে জবাব দিল, আমি যে কাম করি সেটা তুমি করলে শ্রেষ্ঠ হওয়া তো দূরের কথা, জেলে যেতে হবে তোমাকে। পরিশ্রমী শ্রমিক চোখ কপালে না মাথায় তুলে বলল, বল কী ভাই ! এত কঠিন ? কী কাম করো তুমি ? শ্রেষ্ঠ শ্রমিক গৌরবের সঙ্গে বলল ‘আকাম’।

পুণশ্চঃ লেখা আর গল্পের সাথে কেউ মিল খুঁজতে চাইবেন না নিশ্চই। কারণ গল্পটা আমার নিজের।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

“বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব”

প্রকাশিত : ১২:১৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়া এক বাঙালি, মূলত কবি, স্বর্গগমন নিশ্চিত করেই দেহ রেখেছেন। ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। যমরাজ ‘কাল’ ছুটিতে আছেন। বহিঃস্বর্গ ছুটি। বিনা বেতনে। চিত্রগুপ্তকে ভারপ্রাপ্ত যমরাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চিত্রগুপ্ত ভাবলেন একটুও ছুটিছাটা পাইনা। খালি কাজ আর কাজ। সুযোগ পেয়েছি একটু আরাম করি। স্বর্গ আর নরক। যার বরাতে যা আছে সে যাবেই। বিষয়টা এরকম দাঁড়ালো যে অনেক সময় অনেক দেশ ভিসা নীতিতে ঔদাসীন্য দেখায়। তখন আইন কানুনের শীতলতার কারণে সঠিক ব্যক্তি ভিসা পায় না আবার অনেক অযোগ্য লোকও দেশে ঢুকে পড়ে। এ সময়ে স্বর্গ নরকের ট্রানজিট ক্যাম্পের অবস্থা তাই ভালো না খারাপ বলা যাবে না। স্বর্গ নরক প্রাপ্তি আপাতত কদিন পাপ পূণ্যের চেয়ে ভাগ্যের উপর বেশি নির্ভর করবে।

চিত্রগুপ্ত যমের চরদের ডেকে বললেন , চরেরা শোন, বহুদিন পর যমের থেকে ছাড়া পেয়েছি তোরা আমাকে একটু বিশ্রাম করার সুযোগ দে। নিজেদের মত চালিয়ে নে। চরদের লিডারকে উদ্দেশ করে বললেন এই হনু, দেখিস হাল্লাগোল্রা যেন না হয়। চরের লিডার ভাবল বউকে নিয়ে বেড়াবার এই সুযোগ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে অফিস বন্ধ করতে হবে। চরেরা দেখল আজ ক্লায়েন্টের ভীড় বেশি, জনে জনে ভাইবা নিলে দিন শেষে বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যাবে না। রাজার অনুপস্থিতে একটু বাড়তি বিশ্রামের সুযোগ না পেলে কী হয় ? তারা তাদের নেতা হনুকে বলল বস আজ গ্রুপে ভাইবা নেই। তাহলে তাড়াতাড়ি কাজ ফুরোবে।

আমাদের সেই প্রথম হওয়া ব্যক্তি, যিনি রান্না-বান্না, কবিতা লেখা, সাংবাদিকতা, তেলবাজি , জমি দখল ,রাজনীতি, চাকরী-বাকরি, চুরি চামারি সবকিছুতেই দেশে বিদেশে প্রথম হতেন। তাই এক্ষেত্রেও প্রথম গ্রুপে যায়গা করে নিলেন। জমের শ্রেষ্ঠ চর হনু গ্রুপের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল, আপনাদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি পাপ করেছেন তিনি হাত তোলেন । মহামতি পূণ্যবান শ্রেষ্ঠ কবি শুনলেন প্রশ্ন হচ্ছে জীবনে সবচেয়ে বেশি মাপ করেছেন কে? তিনি ভাবলেন আরে এ তো আমিই। আমিই ক্ষমাসুন্দর। আমিই সবাইকে ক্ষমা করেছি বেশি। আমিই ক্ষমাতে শ্রেষ্ঠ। প্রথম হওয়ার জন্যে আমি চোরকে মাপ করেছি। ডাকাতকে, সন্ত্রাসীকে ভাই বানিয়েছি। তার আনুকুল্য চেয়েছি পেয়েছি। আমার চেয়ে ক্ষমাশীল আর কে ? কবিই হাত তোললেন প্রথমে। এইবার ইষ্ট লাভ হলো উল্টো। যমের চরেরা নিমিষেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিল নরকে।

শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণাটি আপনি যখন জনসন্মুখে উন্মুখ হয়ে প্রকাশ করছেন তখন আপনার জানা উচিৎ আপনি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড এডলার এর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। আপনি আপনার হীনমন্যতাকে ঢাকতে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছেন। প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাইদের কথায় আপনার বিশ্বাস করা উচিৎ, শরমিন্দা হওয়া উচিৎ। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে যেয়ে আপনি কখনও ভাবেননি, শ্রেষ্ঠত্ব কী? আপনি প্রথম হয়েছেন এটা একটা সাফল্য। প্রফেসর আবদুল্লাহ আবু সাইদের ধারণা -সাফল্য খুব কাম্য জিনিস হলেও বড় জিনিস নয়। সাফল্য একপ্রকার দক্ষতা। চোর –বাটপারও অনেক সময় সফল হয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে সফল লোকদের মধ্যে আশি ভাগই দুবৃত্ত। এমন জিনিস নিয়ে পাগল হওয়ার কী আছে? সবচেয়ে যা বড় জিনিস, তা সাফল্য নয়, সার্থকতা। ফুলের অনেক বৈচিত্র বা রঙের জৌলুশ আছে। এগুলো তার সাফল্য। কিন্তু যে গন্ধ দিয়ে সে আমাদের মন ভোলায় তা হল তার স্বার্থকতা । সেই সার্থকতাই আমাদের কাম্য হওয়া উচিৎ।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রথম হওয়ার জন্যে কবিতা লিখেছিলেন ? না। যাদের হাতে যে বিষয় বিকশিত হয়েছে তারা কেউ প্রথম হওয়া, শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা পুরষ্কারের লোভে কাজ করেননি। কাজ করেছেন মানব কল্যাণে। মানব সেবায় ব্রতী হওয়া মানুষ কোন ভাষা, অঞ্চল, ধর্ম-বর্ণের নন। তারা মানবতার। মৃত্যুর হাজার বছর পরেও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। তাদের অবস্থান ঠিক রাখা্র জন্যে মন্ত্রী, এমপি ,পরিচালক, উপপরিচালক কারোর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে না। অথচ হে দুনির্বার বাঙালি নিজের দিকে তাকান, প্রথম স্থান বগলদাবা করার জন্যে আপনি কিনা করেছেন। বাছুরের অনাহারী বাচ্ছার মত হাম্বা হাম্বা রব করে রটিয়ে বেড়িয়েছেন আপনার কর্ম। কী কর্ম ? একদিন আপনার ঘরে খাবার ছিল না। কিন্তু ছিলেন কৃষক। কৃষকের সন্তান। লেখাপড়া শিখে কী হয়েছেন? কৃষক থেকে উন্নত মানুষ। শহুরে শিক্ষিত উন্নত মানুষ। এখন আপনি কৃষককে সবক শিখান। কাদায় নামতে হয়না। আপনার যায়গা দখল করেছে আরেক কৃষক। পৃথিবীর আশি কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে সেও রাতে না খেয়ে ঘুমায়। আর আপনি মনের আনন্দে কৃত্রিম বেদনা বিলিাসিতায় কবিতা লিখে ফুর্তিতে নির্ঘুম রাত কাটান। এটাই আপনার শ্রেষ্ঠত্ব ?

আপনি এটা মানবেন না কারণ আপনি বাঙালি শ্রেষ্ঠ। সুপিরিওরিটি ও ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স থিওরি আপনার বেলায় প্রযোজ্য হবে না। শুধু শ্রেষ্ঠ হওয়ার বাসনা, এ এক আলাদারকম ব্যমো। শ্রেষ্ঠত্বেও খুশি নয় এরা ,পাশের জনের ঠ্যাং ভেঙ্গে লুলা করে রাখতে চায় এরা। যাতে প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে না পারে। তাই বাঙালির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আছে। কিন্তু অর্জন বলতে ঐ শেষ পর্য্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান আর রবীন্দ্রনাথ। হাজার বছরে এই দুই কালোত্তীর্ণ।
মানুষ এমনিতেই সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেয়ে চণ্ডীদাস বলেন- সবার উপরে মানুষ সত্য । মানুষ ছাড়া চণ্ডীদাসের চোখে আর কিছু পড়ল না। তাই পৃথিবীর বুকে আর যত জীব জন্তু আছে সবাইকে মেরে খাচ্ছে মানুষ। পশু-পাখি বিলীন হওয়ার পথে। মানুষ এখন মানুষের মাংস খাচ্ছে। এটাই কী শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা ? আমরা বাঙালিরা শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বরঞ্চ কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছি। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে রাজা সেজে নিজের হীনমন্যতাকে ঢাকতে চাচ্ছি। অন্ধ হয়ে দেখছি না, চোখের সামনেই আমাদের জাতির পিতা। একটা দেশের জন্ম দিয়েও নিজেকে বলেলনি আমি শ্রেষ্ঠ। জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন শ্রেষ্ঠ বাঙালি কী করে ? আর কবি মহোদয় আপনি, বঙ্গবন্ধু মুজিবের ছবির নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন আর স্ট্যাটাস দিচ্ছেন আমি শ্রেষ্ঠ, দেশ সেরা , বিশ্ব সেরা। সেরার মত হোন, নিজের সাফল্য দিয়ে অন্যের জীবন সার্থক করুন। তবেই না লোকে বলবে আপনি শ্রেষ্ঠ।

গল্প দিয়েই শুরু করেছিলাম। গল্প দিয়েই শেষ করি।
কারখানার সবচেয়ে পরিশ্রমী শ্রমিক ঘামে ভিজে. ভেজা শরীরে একই কারখানার শ্রেষ্ঠ শ্রমিকের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল, ভাই তুমি কোন পরিশ্রম করো না। সারাদিন ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়াও। তারপরেও তুমি কিভাবে শ্রেষ্ঠ শ্রমিক হও ? পুরষ্কার পাও। সেই নায়ক চেহারার শ্রমিক লাল টুকটুকে ঠোটের ফাঁক দিয়ে জবাব দিল, আমি যে কাম করি সেটা তুমি করলে শ্রেষ্ঠ হওয়া তো দূরের কথা, জেলে যেতে হবে তোমাকে। পরিশ্রমী শ্রমিক চোখ কপালে না মাথায় তুলে বলল, বল কী ভাই ! এত কঠিন ? কী কাম করো তুমি ? শ্রেষ্ঠ শ্রমিক গৌরবের সঙ্গে বলল ‘আকাম’।

পুণশ্চঃ লেখা আর গল্পের সাথে কেউ মিল খুঁজতে চাইবেন না নিশ্চই। কারণ গল্পটা আমার নিজের।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব