০২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শেখ হাসিনার স্বর্ণযুগ

অনেক টানাপড়েন, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে টানা ১৫ বছরে পা রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে এক যুগের অধিক সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ।

এই সময়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই নতুন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ে তুলতে তিনি একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। টানা তিন মেয়াদের এই সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে-গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে (৪-জি) প্রবেশ করেছে। পরীক্ষামূলক ভাবে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ৫জিও চালু করেছে সরকার।

উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

টানা তিন মেয়াদের সরকারের এই সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দ্রত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ, যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারা। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং ওই অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।

দ্রত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। শেখ হাসিনা এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদাপর্ণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় এক লাখ ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে। এটা সরকারের গত এক যুগের সফলতার বড় একটি দিক।

আওয়ামী লীগ সরকারের এই সময়ে বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপন করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট বিশ্বে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনেরও প্রস্তুতি চলছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রতিতেই এ সব কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারেও সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল চালু হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল এই মেট্রো রেল এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমান বন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুইটি মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নতুন উদ্যমে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

দেশে বিদ্যুতের বিশাল ঘাটতির বোঝা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত বিদ্যুতের চাহিদা মোটাতে শেখ হাসিনার সরকার এই সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের ও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এরপর আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটিয়ে সারা দেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতায়ন পূর্ণ করেছে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির উপর এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে নির্মাণাধীন পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প হতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকার নিয়েছে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনী গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।

এই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেছেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব ওমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসহায় এই মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি (মানবতার মা) উপাধিতে ভূষিত হন। আওয়ামী লীগ একদিকে সংগ্রামের ঐতিহ্য ধারণ করে আরেক দিকে সরকার পরিচালায় উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা আধুনিক ও বিজ্ঞান মনোস্ক। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তার সরকার গত ১২ বছরে সেটা হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে দেশ আজ একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশে পরিণত হয়েছে। এসব করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ- যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প-২০২১
বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহা সোপানে। গত এক যুগের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অর্জন উন্নয়নের স্বর্ণ যুগ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে। লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

শেখ হাসিনার স্বর্ণযুগ

প্রকাশিত : ০২:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০২৩

অনেক টানাপড়েন, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে টানা ১৫ বছরে পা রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে এক যুগের অধিক সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ।

এই সময়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই নতুন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্ণাঙ্গ আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ে তুলতে তিনি একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছেন। টানা তিন মেয়াদের এই সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে-গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে (৪-জি) প্রবেশ করেছে। পরীক্ষামূলক ভাবে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ৫জিও চালু করেছে সরকার।

উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার দেশকে আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ করে তুলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর থেকেই মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

টানা তিন মেয়াদের সরকারের এই সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষ করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। দ্রত গতিতে এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ, যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারা। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার সরকার বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং ওই অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে।

দ্রত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। শেখ হাসিনা এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদাপর্ণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করে। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় এক লাখ ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে। এটা সরকারের গত এক যুগের সফলতার বড় একটি দিক।

আওয়ামী লীগ সরকারের এই সময়ে বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপন করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্যাটেলাইট বিশ্বে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনেরও প্রস্তুতি চলছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রতিতেই এ সব কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দ্রত এগিয়ে নিতে কৃষি, শিল্প উৎপাদনের পাশাপাশি অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপরও তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারেও সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।

আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল চালু হয়েছে। উত্তরা থেকে মতিঝিল এই মেট্রো রেল এখন দৃশ্যমান। রাজধানীর উপকণ্ঠ হেমায়েতপুর থেকে গুলশান হয়ে ভাটারা এবং বিমান বন্দর থেকে রামপুরা হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত আরও দুইটি মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নতুন উদ্যমে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

দেশে বিদ্যুতের বিশাল ঘাটতির বোঝা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত বিদ্যুতের চাহিদা মোটাতে শেখ হাসিনার সরকার এই সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের ও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এরপর আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটিয়ে সারা দেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতায়ন পূর্ণ করেছে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির উপর এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে নির্মাণাধীন পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প হতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকার নিয়েছে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনী গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।

এই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন। বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড লাভ করেছেন। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব ওমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রধানমন্ত্রীকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসহায় এই মানুষগুলোর প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি (মানবতার মা) উপাধিতে ভূষিত হন। আওয়ামী লীগ একদিকে সংগ্রামের ঐতিহ্য ধারণ করে আরেক দিকে সরকার পরিচালায় উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন পরিকল্পনা আধুনিক ও বিজ্ঞান মনোস্ক। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তার সরকার গত ১২ বছরে সেটা হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে দেশ আজ একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশে পরিণত হয়েছে। এসব করতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ- যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প-২০২১
বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহা সোপানে। গত এক যুগের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অর্জন উন্নয়নের স্বর্ণ যুগ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে। লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে