১২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। উন্নত হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। সবমিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে কোন শঙ্কা বা বাধা নেই। উন্নত দেশগুলোও চলমান মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্থরতার শিকার, এই প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থা অনেক ভালো।
সোমবার, (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি কি সামলে উঠছে? এমন প্রশ্নোউত্তরে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যখন বহির্বিশ্বের কারণে হয়, অভ্যন্তরীণ কোনো নীতি অনুসরণ করে- সেটিকে কমানো বেশ কঠিন। সামগ্রিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে যদি আমরা মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করি, তাহলে সেটি প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের অর্থনীতিবিদের পরামর্শে কাজ করছি। দেশ যেহেতু সবার সেজন্য আমরা সবাই মিলে তদারকি করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমরা মনিটরিং পলিসিও পরিবর্তন করেছি। মনিটরিং পলিসি কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, সাবেক কর্মকর্তাসহ ও দেশের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠিত করা হয়েছে। আমাদের বোর্ড পর্ষদ পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন বিশ্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২৩ প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ এবার ১৪ ধাপ উন্নতি করেছে। ২০২৩ সালের সূচকে ৫৪.৪ পয়েন্ট স্কোর পেয়ে ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ১৩৭তম এবং ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।
বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সামনে যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে, শক্তভাবে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। মানে মানসিক প্রস্তুতি।

দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে যেসব খাত:
বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপির) কৃষির অবদান অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু তার পরও কৃষি এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের মতো এখনো সরাসরি কৃষি খাতে কর্মরত। আরো অনেক মানুষ কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে উন্নতি হয়েছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। স্বাধীনতার পর দেশে চালের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এখন চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিগত ৫০ বছরের বেশি সময়ে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখনো আমাদের মূল ভিত্তি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি, সংস্থা (এফএও) দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চাল উৎপাদনে চীন এবং ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিভিত্তিক অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায় বিকাশের উদ্যোগ আরো জোরালো করতে হবে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিনির্ভর ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায় বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। হাওর এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে। উপকূলীয় এলাকায় আবাদি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে কৃষিজমিকে চাষের অনুপযোগী করে তুলছে। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এসব বিষয় পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ অর্জিত অর্থনৈতিক সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে। বর্তমান সরকার নীতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সমাজে গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মিডিয়া সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh

ট্যাগ :

পরশুরামে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনে আলোচনা, র‍্যালি ও পোনা অবমুক্ত

‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো’

প্রকাশিত : ০৫:১১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। উন্নত হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। সবমিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে কোন শঙ্কা বা বাধা নেই। উন্নত দেশগুলোও চলমান মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্থরতার শিকার, এই প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থা অনেক ভালো।
সোমবার, (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি কি সামলে উঠছে? এমন প্রশ্নোউত্তরে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যখন বহির্বিশ্বের কারণে হয়, অভ্যন্তরীণ কোনো নীতি অনুসরণ করে- সেটিকে কমানো বেশ কঠিন। সামগ্রিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে যদি আমরা মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করি, তাহলে সেটি প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের অর্থনীতিবিদের পরামর্শে কাজ করছি। দেশ যেহেতু সবার সেজন্য আমরা সবাই মিলে তদারকি করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমরা মনিটরিং পলিসিও পরিবর্তন করেছি। মনিটরিং পলিসি কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, সাবেক কর্মকর্তাসহ ও দেশের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে গঠিত করা হয়েছে। আমাদের বোর্ড পর্ষদ পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন বিশ্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২৩ প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ এবার ১৪ ধাপ উন্নতি করেছে। ২০২৩ সালের সূচকে ৫৪.৪ পয়েন্ট স্কোর পেয়ে ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালে ১৩৭তম এবং ২০২১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।
বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের সামনে যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো আরও বিচক্ষণতার সঙ্গে, শক্তভাবে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। মানে মানসিক প্রস্তুতি।

দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে যেসব খাত:
বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপির) কৃষির অবদান অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু তার পরও কৃষি এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের মতো এখনো সরাসরি কৃষি খাতে কর্মরত। আরো অনেক মানুষ কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে উন্নতি হয়েছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। স্বাধীনতার পর দেশে চালের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এখন চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিগত ৫০ বছরের বেশি সময়ে দেশে কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি এখনো আমাদের মূল ভিত্তি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি, সংস্থা (এফএও) দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চাল উৎপাদনে চীন এবং ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিভিত্তিক অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায় বিকাশের উদ্যোগ আরো জোরালো করতে হবে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিনির্ভর ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসায় বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। হাওর এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে। উপকূলীয় এলাকায় আবাদি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে কৃষিজমিকে চাষের অনুপযোগী করে তুলছে। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এসব বিষয় পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ অর্জিত অর্থনৈতিক সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে। বর্তমান সরকার নীতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সমাজে গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মিডিয়া সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিজনেস বাংলাদেশ/bh