০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লালমনিরহাটে ঠান্ডার কারণে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা

লালমনিরহাট সীমান্ত বেষ্টিত উত্তরের একটি অবহেলিত  জেলা। হঠাৎ করে কয়েকদিন থেকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ও হিমেল হাওয়ায় নবজাতক শিশুরাসহ বয়স্ক বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসাপাতালের আউটডোরে আগের তুলনায় প্রায় কয়েকগুন বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। শুধু আউটডোরেই নয় শিশু ওয়ার্ডে ও ম্যাডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় কয়েকগুন। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে প্রায় ৪০ জন শিশুকে। এদের মধ্যে একদিনেই ভর্তি হয়েছে ২২ জন শিশু। এসব শিশুদের সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

চিকিৎসা নিতে আসা পার্শ্বতর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার শার্মী আকতার (৩) ঠান্ডাজনিত পানিবাহী রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে রোববার (৩১ ডিসেম্বর)। তার মা আমেনা বেগম বলেন, গত দুইদিনে ঠান্ডার প্রকোপ অনেক বেড়েছে, সূর্যের দেখা মিলছেনা। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অসুস্থতা বেড়েছে অনেকের। হাসপাতালে রোগী বেশি থাকায় ছেলের জন্য বেড মেলেনি। তাই কষ্ট করে মেঝেতেই বিছানা পেতে আছি।

লালমনিরহাট শহরের পার্শ্ববর্তী বানভাসা এলাকার পল্লবী রানীর ছেলে পরম রায়কে নিয়ে বিছানা পেতেছেন হাসপাতালের মেঝেতে। তিনি বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। ছেলের শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠছে, ঠান্ডার কারণে বারবার বমি হচ্ছে। ভর্তির পরপরই একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। বর্তমান আমার ছেলে একটু সুস্থ আছে।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা গফুর মিয়া (৬৫) বলেন, ঠান্ডা পড়লেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। এই দুদিনের ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে গেছে তাই হাসপাতালে এসেছি।

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিরত অন্যান্য শিশুদের স্বজনরা বলেন, সকাল থেকে বেশ কয়েকজন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই বেড না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন। ঘনকুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে রাতে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শিশু বৃদ্ধরাসহ অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা কম ছিলো। চলমান তিন দিনের অতিরিক্ত ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ার কারণে দিনদিন রোগীর চাপ আউটডোর ও শিশু ওয়ার্ডে কয়েকগুন বেড়েছে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেজওয়ানা হাফিজ বলেন, হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা ও ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এই তিনদিনে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আবার অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শীত ও ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে।

পরামর্শ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, এই সময় নবজাতক ও শিশুদের মায়ের কাছাকাছি রাখতে হবে। ঘরের মেঝে ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে শিশুদের রাখা যাবে না। শীতে তাদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি শিশুদের ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে, স্যালাইনের পানি গরম করার পর ঠান্ডা করে খাওয়াতে হবে। শিশুদের ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শীতে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এতে তাদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

লালমনিরহাটে ঠান্ডার কারণে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা

প্রকাশিত : ০৩:৫৬:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

লালমনিরহাট সীমান্ত বেষ্টিত উত্তরের একটি অবহেলিত  জেলা। হঠাৎ করে কয়েকদিন থেকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ও হিমেল হাওয়ায় নবজাতক শিশুরাসহ বয়স্ক বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসাপাতালের আউটডোরে আগের তুলনায় প্রায় কয়েকগুন বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। শুধু আউটডোরেই নয় শিশু ওয়ার্ডে ও ম্যাডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় কয়েকগুন। সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে প্রায় ৪০ জন শিশুকে। এদের মধ্যে একদিনেই ভর্তি হয়েছে ২২ জন শিশু। এসব শিশুদের সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

চিকিৎসা নিতে আসা পার্শ্বতর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার শার্মী আকতার (৩) ঠান্ডাজনিত পানিবাহী রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে রোববার (৩১ ডিসেম্বর)। তার মা আমেনা বেগম বলেন, গত দুইদিনে ঠান্ডার প্রকোপ অনেক বেড়েছে, সূর্যের দেখা মিলছেনা। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অসুস্থতা বেড়েছে অনেকের। হাসপাতালে রোগী বেশি থাকায় ছেলের জন্য বেড মেলেনি। তাই কষ্ট করে মেঝেতেই বিছানা পেতে আছি।

লালমনিরহাট শহরের পার্শ্ববর্তী বানভাসা এলাকার পল্লবী রানীর ছেলে পরম রায়কে নিয়ে বিছানা পেতেছেন হাসপাতালের মেঝেতে। তিনি বলেন, সকালে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। ছেলের শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠছে, ঠান্ডার কারণে বারবার বমি হচ্ছে। ভর্তির পরপরই একবার ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। বর্তমান আমার ছেলে একটু সুস্থ আছে।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা গফুর মিয়া (৬৫) বলেন, ঠান্ডা পড়লেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। এই দুদিনের ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে গেছে তাই হাসপাতালে এসেছি।

শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিরত অন্যান্য শিশুদের স্বজনরা বলেন, সকাল থেকে বেশ কয়েকজন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই বেড না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতেছেন। ঘনকুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারণে রাতে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শিশু বৃদ্ধরাসহ অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা কম ছিলো। চলমান তিন দিনের অতিরিক্ত ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ার কারণে দিনদিন রোগীর চাপ আউটডোর ও শিশু ওয়ার্ডে কয়েকগুন বেড়েছে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেজওয়ানা হাফিজ বলেন, হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা ও ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এই তিনদিনে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে আবার অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শীত ও ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে।

পরামর্শ হিসেবে এই চিকিৎসক বলেন, এই সময় নবজাতক ও শিশুদের মায়ের কাছাকাছি রাখতে হবে। ঘরের মেঝে ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে শিশুদের রাখা যাবে না। শীতে তাদের কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। সুষম খাবারের পাশাপাশি শিশুদের ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে, স্যালাইনের পানি গরম করার পর ঠান্ডা করে খাওয়াতে হবে। শিশুদের ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া শীতে শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এতে তাদের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS