০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়

সকলের সহযোগীয় সম্ভব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। আইনের প্রয়োগও সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত। আমাদের দেশে আইনের কোন ঘাটতি নেই। এই আইন আমাদের যথযথ প্রয়োগ করা উচিত। পরিবেশ হলো আমাদের জন্য, আমাদের স্বাস্থের জন্য, আমাদের ভবিৎষতের জন্য। এই কানেকশন মানুষ যখন করবে তখনি সচেতন হবে। পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষা করাটাই আমাদের এক মাত্র লক্ষ্য। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবেশ ও উন্নয়নের বিষয় গুলো সংযুক্ত করা ও শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো প্রয়োজন। আমরাই দ্বিতীয় যে, আমাদের দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের আইন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এর কোন প্রয়োগ না থাকায় আমাদের দেশের নদী ও খালবিলের অবস্থা অনেকটাই করুন। হারিয়ে যাচ্ছে জীব ও বৈচিত্র। পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংঘর্ষিক এটা মনে করার কারণ নেই। উন্নয়ন ও পরিবেশ বান্ধব হওয়া সম্ভব। দেশের প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে সচেতন। উন্নয়ন তো শুধু উন্নয়ন নয় টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য দেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করাটাও জরুরি পরিবেশ বন ও জলবায়ুর জন্য মন্ত্রণালয়ে কাঠামো পরিবর্তনও করা দরকার বলে মনে করেন নতুন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশ যেন বাসযোগ্য স্থান হয় সে দিকে খেয়াল করতে হবে। এছাড়া সুমদ্র ইকনোমিক নিয়ে কাজ করাটাও জরুরী। এ বিষয়ে আইন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলের সচেতন হতে হবে। এর সঠিক বাস্তবায়ন দরকার।

বায়ুমানের বৈশ্বিক সূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীগুলোর তালিকায় ঢাকা ছিল শীর্ষে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বাইরের শিল্পাঞ্চলগুলোয় দূষণ ঘটছে সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি। কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যনিঃসৃত দূষিত পদার্থ মিশছে কৃষিজমি ও নদী-খাল-বিলসহ জলাশয়ের পানিতে। হুমকিতে প্রাণ-প্রতিবেশ, বাস্তুসংস্থান ও জনস্বাস্থ্য। বিষয়টি নিয়ে দিনে দিনে উদ্বেগ বাড়ছে পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে বা ভূমিকা রাখতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তরও। অভিযোগ উঠেছে, ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রাই বদলে ফেলছে সংস্থাটি। পরিবেশ বিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নেয়া হচ্ছে দেশের পরিবেশ সূচকে উন্নতি দেখানোর প্রয়াস।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদরা বলছেন, দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হলে বা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা দেশের সার্বিক পরিবেশের জন্য কোনো ভালো রেজাল্ট আসবে না। একদিকে বাড়বে প্রতিবেশগত বিপর্যয়, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক।

দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ভাটার গ্রহণযোগ্য দূরত্বসংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া কিছু বিধিমালায় পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব বিধিমালায় দ্রুত পরিবর্তন আনতে চায় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিধিমালাগুলো হলো পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩; কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১; বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২; চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাত) বিধিমালা, ২০০৮; বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা, ২০১১; প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬; শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ ইত্যাদি।

গত বছরের মার্চে পাস হওয়া বিধিমালায় দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বিধিমালার তফসিল-৫ শিল্পশ্রেণীভিত্তিক তরল বর্জ্য নির্গমনসংক্রান্ত বিধিতে বলা হয়েছে, ট্যানারি শিল্পে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার লিটার সোডিয়াম ক্লোরাইড নিঃসরণ করা যাবে। কিন্তু বর্তমানে সাভারের ট্যানারিপল্লীর সিইটিপি থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড নিঃসরণ হচ্ছে পাঁচ হাজার লিটারের বেশি। শিল্প মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাই নির্ধারিত মানমাত্রা দ্বিগুণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে পানি ও বায়ু দূষণের মানমাত্রায়ও পরিবর্তনের জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানায়, ‘শুধু ব্যবসায়ী নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের ওপর চাপ আছে। বিধিমালা পরিবর্তনের বিষয়টি দ্রুত করা হবে। এসব পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিভিন্ন দেশের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার উদাহরণ টানা হচ্ছে। যদিও এসব দেশের বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের বাস্তবতার অনেক অমিল রয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে হলে এতে বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের মতামত নেয়া অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানিতে আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা দিয়েছে দশমিক শূন্য ১। আমরা সেটাকে দশমিক শূন্য ৫ রেখেছি। আমরা দেখেছি আমাদের দেশে এটা সহনীয়। কিন্তু তাই বলে যে সব মানমাত্রায় গণহারে পরিবর্তন করা হবে, আর এজন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টানা হবে তা মোটেও মেনে নেয়ার মতো নয়।

বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞগণের মতে, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি দুর্বলতা ও সম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও উচ্চপ্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে দূষণ রোধ করা এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। শহরগুলোতে পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে, যা বাংলাদেশের উচ্চপ্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে সঠিক নীতি ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর শিল্পগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের আর্বান স্টাডিজ প্রোগ্রামের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার আবাসিক এলাকায় পরিবেশ দূষণকারী ১ হাজার ৪২টি শিল্পকারখান রয়েছে। এসব শিল্পকারখানার ৭৫ শতাংশই লালবাগ, সূত্রাপুর, মিরপুর ও কোতোয়ালির মতো চারটি জনবহুল আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া ঢাকার প্রায় সব আবাসিক এলাকাতেই কম-বেশি দূষণকারী শিল্পকারখানা রয়েছে। দূষণকারী কারখানা হতে নির্গত ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস, চলমান যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ ও শ্রমিকদের কলরব, শিল্পবর্জ্য প্রভৃতির মাধ্যমেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দূষণকারী শিল্পের মাধ্যমে বাতাস, পানি, মাটি এবং শব্দদূষণ হয়ে হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে আবাসিক এলাকায় অসহনীয় যানজট। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের এবং অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে হলে তা হতে হবে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। দেশের মানুষ বর্তমান দূষণই সহ্য করতে পারছে না, আরো বেশি মাত্রার দূষণ কীভাবে সহ্য করবে? অন্যান্য দেশের মানমাত্রা বাংলাদেশের জন্য অনুসরণ করতে গেলে বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে।’

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়

প্রকাশিত : ০৯:১৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

সকলের সহযোগীয় সম্ভব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। আইনের প্রয়োগও সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত। আমাদের দেশে আইনের কোন ঘাটতি নেই। এই আইন আমাদের যথযথ প্রয়োগ করা উচিত। পরিবেশ হলো আমাদের জন্য, আমাদের স্বাস্থের জন্য, আমাদের ভবিৎষতের জন্য। এই কানেকশন মানুষ যখন করবে তখনি সচেতন হবে। পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষা করাটাই আমাদের এক মাত্র লক্ষ্য। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবেশ ও উন্নয়নের বিষয় গুলো সংযুক্ত করা ও শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো প্রয়োজন। আমরাই দ্বিতীয় যে, আমাদের দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের আইন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এর কোন প্রয়োগ না থাকায় আমাদের দেশের নদী ও খালবিলের অবস্থা অনেকটাই করুন। হারিয়ে যাচ্ছে জীব ও বৈচিত্র। পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংঘর্ষিক এটা মনে করার কারণ নেই। উন্নয়ন ও পরিবেশ বান্ধব হওয়া সম্ভব। দেশের প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে সচেতন। উন্নয়ন তো শুধু উন্নয়ন নয় টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য দেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করাটাও জরুরি পরিবেশ বন ও জলবায়ুর জন্য মন্ত্রণালয়ে কাঠামো পরিবর্তনও করা দরকার বলে মনে করেন নতুন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশ যেন বাসযোগ্য স্থান হয় সে দিকে খেয়াল করতে হবে। এছাড়া সুমদ্র ইকনোমিক নিয়ে কাজ করাটাও জরুরী। এ বিষয়ে আইন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকলের সচেতন হতে হবে। এর সঠিক বাস্তবায়ন দরকার।

বায়ুমানের বৈশ্বিক সূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই) সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরীগুলোর তালিকায় ঢাকা ছিল শীর্ষে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বাইরের শিল্পাঞ্চলগুলোয় দূষণ ঘটছে সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি। কারখানার রাসায়নিক বর্জ্যনিঃসৃত দূষিত পদার্থ মিশছে কৃষিজমি ও নদী-খাল-বিলসহ জলাশয়ের পানিতে। হুমকিতে প্রাণ-প্রতিবেশ, বাস্তুসংস্থান ও জনস্বাস্থ্য। বিষয়টি নিয়ে দিনে দিনে উদ্বেগ বাড়ছে পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে বা ভূমিকা রাখতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তরও। অভিযোগ উঠেছে, ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রাই বদলে ফেলছে সংস্থাটি। পরিবেশ বিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নেয়া হচ্ছে দেশের পরিবেশ সূচকে উন্নতি দেখানোর প্রয়াস।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদরা বলছেন, দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হলে বা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা দেশের সার্বিক পরিবেশের জন্য কোনো ভালো রেজাল্ট আসবে না। একদিকে বাড়বে প্রতিবেশগত বিপর্যয়, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক।

দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ভাটার গ্রহণযোগ্য দূরত্বসংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া কিছু বিধিমালায় পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব বিধিমালায় দ্রুত পরিবর্তন আনতে চায় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিধিমালাগুলো হলো পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ২০২৩; কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১; বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২; চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাত) বিধিমালা, ২০০৮; বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজ ভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিধিমালা, ২০১১; প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬; শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ ইত্যাদি।

গত বছরের মার্চে পাস হওয়া বিধিমালায় দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বিধিমালার তফসিল-৫ শিল্পশ্রেণীভিত্তিক তরল বর্জ্য নির্গমনসংক্রান্ত বিধিতে বলা হয়েছে, ট্যানারি শিল্পে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার লিটার সোডিয়াম ক্লোরাইড নিঃসরণ করা যাবে। কিন্তু বর্তমানে সাভারের ট্যানারিপল্লীর সিইটিপি থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড নিঃসরণ হচ্ছে পাঁচ হাজার লিটারের বেশি। শিল্প মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাই নির্ধারিত মানমাত্রা দ্বিগুণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে পানি ও বায়ু দূষণের মানমাত্রায়ও পরিবর্তনের জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানায়, ‘শুধু ব্যবসায়ী নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের ওপর চাপ আছে। বিধিমালা পরিবর্তনের বিষয়টি দ্রুত করা হবে। এসব পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিভিন্ন দেশের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার উদাহরণ টানা হচ্ছে। যদিও এসব দেশের বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের বাস্তবতার অনেক অমিল রয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দূষণের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে হলে এতে বিশেষজ্ঞসহ অংশীজনদের মতামত নেয়া অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানিতে আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রা দিয়েছে দশমিক শূন্য ১। আমরা সেটাকে দশমিক শূন্য ৫ রেখেছি। আমরা দেখেছি আমাদের দেশে এটা সহনীয়। কিন্তু তাই বলে যে সব মানমাত্রায় গণহারে পরিবর্তন করা হবে, আর এজন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টানা হবে তা মোটেও মেনে নেয়ার মতো নয়।

বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞগণের মতে, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি দুর্বলতা ও সম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও উচ্চপ্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে দূষণ রোধ করা এবং দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। শহরগুলোতে পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে, যা বাংলাদেশের উচ্চপ্রবৃদ্ধিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে সঠিক নীতি ও আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর শিল্পগুলোকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের আর্বান স্টাডিজ প্রোগ্রামের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার আবাসিক এলাকায় পরিবেশ দূষণকারী ১ হাজার ৪২টি শিল্পকারখান রয়েছে। এসব শিল্পকারখানার ৭৫ শতাংশই লালবাগ, সূত্রাপুর, মিরপুর ও কোতোয়ালির মতো চারটি জনবহুল আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া ঢাকার প্রায় সব আবাসিক এলাকাতেই কম-বেশি দূষণকারী শিল্পকারখানা রয়েছে। দূষণকারী কারখানা হতে নির্গত ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস, চলমান যন্ত্রপাতির তীব্র শব্দ ও শ্রমিকদের কলরব, শিল্পবর্জ্য প্রভৃতির মাধ্যমেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দূষণকারী শিল্পের মাধ্যমে বাতাস, পানি, মাটি এবং শব্দদূষণ হয়ে হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে আবাসিক এলাকায় অসহনীয় যানজট। এর ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের এবং অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানমাত্রায় পরিবর্তন আনতে হলে তা হতে হবে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। দেশের মানুষ বর্তমান দূষণই সহ্য করতে পারছে না, আরো বেশি মাত্রার দূষণ কীভাবে সহ্য করবে? অন্যান্য দেশের মানমাত্রা বাংলাদেশের জন্য অনুসরণ করতে গেলে বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে।’

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি