১১:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

পুলিশ কনস্টেবল থেকে যেভাবে ধর্মগুরু ’ভোলে বাবা’

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় একটি ধর্মীয় আয়োজনে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২১। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাথরস জেলার রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এক ধর্মগুরু। তাঁর অনুসারীরাই ওই আয়োজনে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনার পর আলোচনায় আসে ‘ভোলে বাবা’ নামটি।  ভোলে বাবা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর আসল নাম সুরাজ পাল।  উত্তর প্রদেশের ইটাহ জেলার বাহাদুর নাগারি গ্রামে এই ভোলে বাবার জন্ম। বাবা নান্নে লাল, মা কাতোরি দেবী। তাঁরা দুই ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। গ্রামে পড়াশোনা করেন তিনি।

উত্তর প্রদেশ পুলিশে হেড কনস্টেবল পদে ছিলেন সুরাজ। কাজ করতেন স্থানীয় গোয়েন্দা ইউনিটে। ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। বদলে ফেলেন নিজের নাম।ভারতে ধর্মগুরুদের সাধারণত গেরুয়া রঙের পোশাকে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ভোলে বাবা। তিনি সাদা স্যুট আর টাই পরতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সময় তাঁকে কুর্তা-পায়জামা পরতেও দেখা গেছে।

এভাবেই বাড়তে থাকে সুরজের ভক্তের সংখ্যা। গত ১৮ বছর ধরে নিজেকে একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরেন তিনি। লক্ষাধিক মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে গুরু হিসেবে অনুদান দিতে থাকেন। তাঁর আয়োজিত এক একটি সৎসঙ্গে যে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমত মঙ্গলবার মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় তা বেশ স্পষ্ট। জানা যায়, শুরু থেকেই ধোপদুরস্ত পোষাকে সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে চেয়ারে বসেই ভক্তদের প্রবচন দিতেন ভোলে বাবা। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ভক্তের সংখ্যা।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) তেমনই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল হাথরাসের মুঘলাগড়ি গ্রামে। ভোলে বাবার বাণী শুনতে সেখানে উপস্থিত হন হাজার হাজার মানুষ। যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা ও শিশু। ছোট জায়গায় বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় জমে। অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎ সেখানে ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। যার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এই ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাই ওই ধর্মীয় আয়োজনে গিয়েছিলেন। পরে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১২১ জন, আহত হন আরও অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে খুঁজছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। ভোলে বাবার স্ত্রীর নাম প্রেম বাতি। সাধুসঙ্গে সচরাচর স্বামীর পাশেই দেখা যায় তাঁকে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গতকালের আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন। আলীগড় শহরের বিভাগীয় কমিশনার চৈত্র ভি বলেন, অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ছিল প্রচণ্ড গরম। গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অনুষ্ঠান শেষে পানির জন্য একযোগে ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় কাদাপানিতে একজনের ওপর অন্যজন পড়ে আহত হন। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।

পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন তিনি। যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে, সেটা খুঁজে বের করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে।’

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক

পুলিশ কনস্টেবল থেকে যেভাবে ধর্মগুরু ’ভোলে বাবা’

প্রকাশিত : ০২:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় একটি ধর্মীয় আয়োজনে পদদলিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২১। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হাথরস জেলার রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এক ধর্মগুরু। তাঁর অনুসারীরাই ওই আয়োজনে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনার পর আলোচনায় আসে ‘ভোলে বাবা’ নামটি।  ভোলে বাবা সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর আসল নাম সুরাজ পাল।  উত্তর প্রদেশের ইটাহ জেলার বাহাদুর নাগারি গ্রামে এই ভোলে বাবার জন্ম। বাবা নান্নে লাল, মা কাতোরি দেবী। তাঁরা দুই ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। গ্রামে পড়াশোনা করেন তিনি।

উত্তর প্রদেশ পুলিশে হেড কনস্টেবল পদে ছিলেন সুরাজ। কাজ করতেন স্থানীয় গোয়েন্দা ইউনিটে। ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। বদলে ফেলেন নিজের নাম।ভারতে ধর্মগুরুদের সাধারণত গেরুয়া রঙের পোশাকে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ভোলে বাবা। তিনি সাদা স্যুট আর টাই পরতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সময় তাঁকে কুর্তা-পায়জামা পরতেও দেখা গেছে।

এভাবেই বাড়তে থাকে সুরজের ভক্তের সংখ্যা। গত ১৮ বছর ধরে নিজেকে একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরেন তিনি। লক্ষাধিক মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে গুরু হিসেবে অনুদান দিতে থাকেন। তাঁর আয়োজিত এক একটি সৎসঙ্গে যে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় জমত মঙ্গলবার মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় তা বেশ স্পষ্ট। জানা যায়, শুরু থেকেই ধোপদুরস্ত পোষাকে সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে চেয়ারে বসেই ভক্তদের প্রবচন দিতেন ভোলে বাবা। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর ভক্তের সংখ্যা।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) তেমনই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল হাথরাসের মুঘলাগড়ি গ্রামে। ভোলে বাবার বাণী শুনতে সেখানে উপস্থিত হন হাজার হাজার মানুষ। যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা ও শিশু। ছোট জায়গায় বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় জমে। অনুষ্ঠান চলাকালীন হঠাৎ সেখানে ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। যার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এই ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাই ওই ধর্মীয় আয়োজনে গিয়েছিলেন। পরে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১২১ জন, আহত হন আরও অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে খুঁজছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। ভোলে বাবার স্ত্রীর নাম প্রেম বাতি। সাধুসঙ্গে সচরাচর স্বামীর পাশেই দেখা যায় তাঁকে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গতকালের আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন। আলীগড় শহরের বিভাগীয় কমিশনার চৈত্র ভি বলেন, অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ছিল প্রচণ্ড গরম। গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অনুষ্ঠান শেষে পানির জন্য একযোগে ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় কাদাপানিতে একজনের ওপর অন্যজন পড়ে আহত হন। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।

পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন তিনি। যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে, সেটা খুঁজে বের করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে।’

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক