উত্তম কৃষি চর্চা বাস্তবায়ন ও সার্টিফিকেশনের প্রথম ধাপে ২টি প্রকল্পের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডের ‘কন্ট্রোল ইউনিয়ন’ এর নিরীক্ষায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মত গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও সাদুল্লাপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ৮০ জন কৃষক উত্তম কৃষি চর্চার সর্বাধিক স্বীকৃতি হিসেবে পেল ‘গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেট’। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী মান অনুসরণ নিশ্চিতকরণে কাজ করে থাকে গ্লোবাল গ্যাপ নামে এই সংস্থা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে ৮০ জন কৃষকের উত্তম কৃষি চর্চার সনদ হস্তান্তর ও শিখন শেয়ারিং অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, দলগত সার্টিফিকেশনের আওতায় এই ৮০ জন কৃষকের ‘গ্লোবাল গ্যাপ সার্টিফিকেট’ অর্জন বাংলাদেশের উত্তম কৃষি চর্চার বাস্তবায়ন ও সার্টিফিকেশনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
গোবিন্দগঞ্জের দরবস্ত ইউনিয়ন নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. তহমিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সনদ প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ওডিএসডি’র নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ সাদেকুল ইসলাম গোলাপ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এম.এ. আশিক, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তারিকুল শরিফ, শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রাজিব হোসেন, পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. ফাতেমা কাওছার মিশু, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মেহেদী হাসান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে কৃষিবিদ মো. শামীম আলমসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক, প্রকল্পের কৃষক দলের সদস্য এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উত্তম কৃষি চর্চা নিশ্চিত করতে প্রকল্পের আওতায় চার উপজেলায় ৫ হাজার কৃষকে নিয়ে ১৫০টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক দলীয় আলোচনা, উত্তম কৃষি চর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান চলমান আছে। প্রশিক্ষণ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষকের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় মডেল ফার্ম ও প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কৃষকদের উৎপাদিত সবজির মানসম্পন্ন উৎপাদন পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য থাকছে ৮টি নিরাপদ সবজি সংগ্রহ কেন্দ্র। প্রতিটি নিরাপদ সবজি সংগ্রহ কেন্দ্রে মানসম্পন্ন উৎপাদন পরবর্তী ব্যবস্থাপনার সুযোগের পাশাপাশি লোডিং আনলোডিং, কৃষক প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি উৎপাদন পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য থাকছে একটি অত্যাধুনিক সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র।
প্রকল্পের সময়সীমার মধ্যে ১০ জন কৃষককে উত্তম কৃষি চর্চার সনদ, এষড়নধষএঅচ সার্টিফিকেশনের আওতায় আনা হবে। প্রকল্পের কৃষকদের জমির লে-আউট ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেখানে জমির অবস্থান, প্রবেশ পথ, পানির উৎস, হাত ধোয়ার স্থান, স্টোর, বিশ্রামের স্থানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অবস্থান উল্লেখ করা থাকে।
নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও উত্তম কৃষি চর্চা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিরূপণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উত্তম কৃষি চর্চার আওতায় উৎপাদন ও উৎপাদন ব্যবস্থার ঝুঁকি নিরূপণ করার পর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয় যাতে উৎপাদন ব্যবস্থা উৎপাদনকারী ও ভোক্তা কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন সম্ভব হয়।
সঠিক পরিমাণ সার ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা, মাটির পুষ্টি ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে, নিরাপদ সবজি চাষের জন্য সার ও কৃষি চর্চার সুপারিশ প্রদান করার জন্য প্রকল্পের আওতায় থাকা সকল কৃষকের মাটি ও পানি পরীক্ষা নিশ্চিত করার কাজ চলমান আছে। প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকদের নিরাপত্তা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দলীয় আলোচনা চলমান আছে। মডেল ফার্ম ও নিরাপদ সবজি সংগ্রহ কেন্দ্রগুলোতে পিপিইসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রাখা হয়েছে এবং উপকরণসমূহ ব্যবহার করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ চলমান রয়েছে।
উত্তম কৃষি চর্চা নিশ্চিত করার নিমিত্তে কৃষি চর্চা, কার্যক্রম, ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদির তথ্য লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করার বাধ্যকতা রয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা নিশ্চিত কল্পে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের কর্মীরা তথ্য লিপিবদ্ধকরণে সহায়তা করছে। তথ্য লিপিবদ্ধকরণ নিশ্চিত করতে কৃষক দল, মডেল ফার্ম, সবজি সংগ্রহ কেন্দ্র ও কৃষকদের কাছে লগ বই, চেকলিস্ট ও রেজিস্টার বই সরবরাহ করা হয়েছে।
দেশের জনগণের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা বিধানকল্পে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য বছরব্যাপী সবজি উৎপাদনের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে নিরাপদ সবজি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। নিরবচ্ছিন্ন সবজি উৎপাদন ও সঠিক মূল্য নিশ্চিতকল্পে দরকার টেকসই বাজার সংযোগ। নিরাপদ সবজি উৎপাদনকে ভবিষ্যৎ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা ও রপ্তানি সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার প্রভাব দৃশ্যমান। এ প্রকল্প সফল হলে দেশ ও জাতি পাবে স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী সুনাগরিক। সেই সঙ্গে প্রকল্পের কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস