১২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরার সাবেক এসপি, এএসপি ও ওসিসহ ২৮ জনের নামে হত্যা মামলা

একজন কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালিন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ওসি মো. ইনামুল হকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার (১৯ আগস্ট) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি তদন্ত সপেক্ষে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের একটি ছাত্রাবাসে আমিনুর রহমানকে হত্যাসহ আরো ৭জনকে গুলি করার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
নিহত কলেজ ছাত্র আমিনুর রহমান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফেজ সরদারের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক পুলিশ সুপার ও ত্যকালিন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মো. ইনামুল হক, এসআই যথাক্রমে আবুল কাশেম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল হান্নান, হান্নান শরীফ, আবুজার গিফারী, বিধান কুমার বিশ্বাস, ইয়াছিন আলী ও এএস.আই লিটন বিশ্বাস। কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, বেলায়েত হোসেন, জিল্লুর রহমান, বাবুল হোসেন, ফারুখ হোসেন, শেখ আলম, হাবিবুর রহমান, রাসেল মাহমুদ, ওমর ফারুক, আব্দুর রহমান, আবিদুর রহমান, আসাদুজ্জামান, মো. আলী হোসেন ও বদরুল আলম এবং আ’লীগ নেতা সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গ্রামের মো. আনারুল ইসলাম রনি ও মো. বাবর আলী এবং যুবলীগ নেতা এস.এম ইউসুফ সুলতান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম আমিনুর রহমান লেখাপড়া করার জন্য সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর সরকারি কবরস্থানের উত্তর পাশে জনৈক মুকুলের ছাত্রাবাসের একটি রুমে ভাড়া থাকতো। তার সাথে ওই ছাত্রাবাসে আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন নামের আরো সাতজন ছাত্র থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য ভিকটিমগণ সকলে একত্রিত হয়ে দুপুরের ভাত খাওয়াকালীন ছাত্রাবাসের বাহিরের প্রাচীরের গেট ধাক্কানোর শব্দে শুনে শেখ আব্দুল গফুর নামের এক ছাত্র গেট খুলে দেয়। এসময় আসামি এসআই আব্দুল হান্নান তার হাতে থাকা পিস্তল আব্দুল গফুরের বুকে ধরে শব্দ করতে নিষেধ করে ভিতরে ঢোকে। এসময় বাইরে অবস্থানকারী আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা অন্যান্য আসামিরা একত্রে বাড়ীর মধ্যে ও খাবার ঘরে ঢুকে খওয়ারত অবস্থায় মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমান সহ অন্যান্য ভিকটিমদের অস্ত্রের মুখে ছাত্রাবাসের বারান্দায় নিয়ে আসে। সেখানে আসামি এসআই আবুল কাশেম হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা পিস্তল দ্বারা ভিকটিম আমিনুর রহমানকে পিছন দিক থেকে পিঠের বাম পার্শ্বে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে সে মেঝেতে পড়ে গেলে পায়েও গুলি করে। একপর্যায় গুরুত্বর রক্তাক্ত অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় আমিনুর। যা মামলার স্বাক্ষীরা প্রত্যক্ষ করে।
এসময় মামলার স্বাক্ষী অন্যান্য ভিকটিম (আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন) দের প্রত্যেকের পায়ের হাটুতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আসামিরা ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) ব্যবহৃত নিজস্ব ৪টা মটর সাইকেল, বাই-সাইকেল, মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ও জিনিষপত্রাদি নিয়ে আসামিদের ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য গুরুতর জখমী ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমানের ময়না তদন্ত শেষে বাদীর মেজ ভাই মো. হাবিবুর রহমান বরাবর লাশ দাফন, কাফনের স্বার্থে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় মৃতের বাড়ীতে নিয়ে লাশ দাফন করা হয়। অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎস্যকরা জখমের গুরুত্বর প্রকৃতি অনুধাবন করে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। পুলিশের তত্ত্ববধানে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অতপর, আসামিরা পরস্পর যোগাযোগে সংঘটিত উল্লেখিত ঘটনা ভিন্ন খাতে তথা রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে পরিগনিত কবার স্বার্থে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের বিরুদ্ধে আসামিদের হেফাজতে রক্ষিত অস্ত্রাদী দ্বারা মিথ্যা বর্ণনায় সাতক্ষীরা থানার মামলা দায়ের করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. এ.টি.এম বাসারুতুল্লাহ আওরঙ্গী বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলাটি দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এমামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে এড. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সাতক্ষীরার সাবেক এসপি, এএসপি ও ওসিসহ ২৮ জনের নামে হত্যা মামলা

প্রকাশিত : ০৮:৫০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
একজন কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালিন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ওসি মো. ইনামুল হকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার (১৯ আগস্ট) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি তদন্ত সপেক্ষে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের একটি ছাত্রাবাসে আমিনুর রহমানকে হত্যাসহ আরো ৭জনকে গুলি করার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
নিহত কলেজ ছাত্র আমিনুর রহমান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফেজ সরদারের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক পুলিশ সুপার ও ত্যকালিন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মো. ইনামুল হক, এসআই যথাক্রমে আবুল কাশেম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল হান্নান, হান্নান শরীফ, আবুজার গিফারী, বিধান কুমার বিশ্বাস, ইয়াছিন আলী ও এএস.আই লিটন বিশ্বাস। কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, বেলায়েত হোসেন, জিল্লুর রহমান, বাবুল হোসেন, ফারুখ হোসেন, শেখ আলম, হাবিবুর রহমান, রাসেল মাহমুদ, ওমর ফারুক, আব্দুর রহমান, আবিদুর রহমান, আসাদুজ্জামান, মো. আলী হোসেন ও বদরুল আলম এবং আ’লীগ নেতা সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গ্রামের মো. আনারুল ইসলাম রনি ও মো. বাবর আলী এবং যুবলীগ নেতা এস.এম ইউসুফ সুলতান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম আমিনুর রহমান লেখাপড়া করার জন্য সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর সরকারি কবরস্থানের উত্তর পাশে জনৈক মুকুলের ছাত্রাবাসের একটি রুমে ভাড়া থাকতো। তার সাথে ওই ছাত্রাবাসে আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন নামের আরো সাতজন ছাত্র থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য ভিকটিমগণ সকলে একত্রিত হয়ে দুপুরের ভাত খাওয়াকালীন ছাত্রাবাসের বাহিরের প্রাচীরের গেট ধাক্কানোর শব্দে শুনে শেখ আব্দুল গফুর নামের এক ছাত্র গেট খুলে দেয়। এসময় আসামি এসআই আব্দুল হান্নান তার হাতে থাকা পিস্তল আব্দুল গফুরের বুকে ধরে শব্দ করতে নিষেধ করে ভিতরে ঢোকে। এসময় বাইরে অবস্থানকারী আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা অন্যান্য আসামিরা একত্রে বাড়ীর মধ্যে ও খাবার ঘরে ঢুকে খওয়ারত অবস্থায় মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমান সহ অন্যান্য ভিকটিমদের অস্ত্রের মুখে ছাত্রাবাসের বারান্দায় নিয়ে আসে। সেখানে আসামি এসআই আবুল কাশেম হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা পিস্তল দ্বারা ভিকটিম আমিনুর রহমানকে পিছন দিক থেকে পিঠের বাম পার্শ্বে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে সে মেঝেতে পড়ে গেলে পায়েও গুলি করে। একপর্যায় গুরুত্বর রক্তাক্ত অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় আমিনুর। যা মামলার স্বাক্ষীরা প্রত্যক্ষ করে।
এসময় মামলার স্বাক্ষী অন্যান্য ভিকটিম (আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন) দের প্রত্যেকের পায়ের হাটুতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আসামিরা ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) ব্যবহৃত নিজস্ব ৪টা মটর সাইকেল, বাই-সাইকেল, মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ও জিনিষপত্রাদি নিয়ে আসামিদের ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য গুরুতর জখমী ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমানের ময়না তদন্ত শেষে বাদীর মেজ ভাই মো. হাবিবুর রহমান বরাবর লাশ দাফন, কাফনের স্বার্থে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় মৃতের বাড়ীতে নিয়ে লাশ দাফন করা হয়। অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎস্যকরা জখমের গুরুত্বর প্রকৃতি অনুধাবন করে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। পুলিশের তত্ত্ববধানে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অতপর, আসামিরা পরস্পর যোগাযোগে সংঘটিত উল্লেখিত ঘটনা ভিন্ন খাতে তথা রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে পরিগনিত কবার স্বার্থে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের বিরুদ্ধে আসামিদের হেফাজতে রক্ষিত অস্ত্রাদী দ্বারা মিথ্যা বর্ণনায় সাতক্ষীরা থানার মামলা দায়ের করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. এ.টি.এম বাসারুতুল্লাহ আওরঙ্গী বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলাটি দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এমামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে এড. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।