১০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

স্যানিটেশনে নারী শীর্ষক জাতীয় সংলাপ: স্যানিটেশন সেক্টরে সমতা

ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর আয়োজনে গুলশানের, আমারি ঢাকায় স্যানিটেশন সেক্টরে নারীদের অবদানের গুরুত্ব নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে স্যানিটেশন সেক্টরে কর্মরত প্রতিনিধিগণ একত্রিত হয়ে সমতা ভিত্তিক স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণের অন্তরায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

সংলাপটি বিভিন্ন পেশার নারীদের আলোচনায় যুক্ত হওয়ার ও তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরার একটি সুযোগ তৈরি করে। পাশাপাশি, এ সংলাপে স্যানিটেশন বিষয়ক নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলায় নারীদের অবদান নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৬ অর্জনে কার্যকরী সমাধান উপস্থাপন করা হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে, এই সংলাপ, সিদ্ধান্তগ্রহনে নারীদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার উপর গুরুত্ব দেয়।

সংলাপের শুরুতে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর টেকনিক্যাল অফিসার সামিয়া আনোয়ার রাফা স্যানিটেশন সেক্টরে নারীদের বর্তমান অবস্থা উপস্থাপন করেন। তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও নারীরা এখনো ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) সেক্টরে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থানগুলোতে উপেক্ষিত রয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার মাধ্যমে, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করার গুরুত্ব সংলাপে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে একটি প্রাণবন্ত প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা সঞ্চালনা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর জেন্ডার ইকুয়ালিটি এন্ড সোশাল ইনক্লুশন (জেসি) এক্সপার্ট তুনাজ্জিনা হক। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ভূমিজ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা রশিদ, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)-এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ডা. রোজিনা আফরোজ রানা।

আলোচনার সময় হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ স্যানিটেশন সম্পর্কিত সংলাপে নারীদের অংশগ্রহণ দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নেটওয়ার্কিংয়ে নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে থাকায়, সিদ্ধান্ত গ্রহনেও তাদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। তিনি আরও বলেন, নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না থাকায় এমন অবকাঠামো তৈরি হয় যা নারী-বান্ধব নয়। তাই নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা বহুমুখী এবং ডিজিটালি উন্নত হওয়া প্রয়োজন, এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন শিক্ষা কে শিক্ষার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সালমা মাহবুব স্যানিটেশন খাতে প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, বিশেষভাবে সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নির্দেশিকা অনুসরণের ওপর। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে নির্দেশিকায় স্যানিটেশন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট মানদণ্ড অন্তর্ভুক্ত করায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

ফারহানা রশিদ নারীদের দৃষ্টিকোণ অন্তর্ভুক্ত করে নারী-বান্ধব পাবলিক টয়লেট তৈরি করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পাবলিক টয়লেটে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে ছোট আকারের অবকাঠামোগত পরিবর্তন যেমন নিরাপদ জানালা এবং কার্যকর দরজা নিশ্চিত করা এবং নারী উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ডা. রোজিনা আফরোজ উল্লেখ করেন কিভাবে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে নারীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন ইউরিনারি সংক্রমণ, ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ এবং কিছু পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া ও ডায়সেন্ট্রি এর শিকার হন। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, কমিউনিটি সিদ্ধান্তে নারীদের এবং স্যানিটেশন সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীবান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতার জোরালো আহ্বানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে। এই সংলাপটি বিভিন্ন সেক্টরের নারীদের একত্রিত করে ভবিষ্যৎ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাদেরকে নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মেন্টরশিপ এবং সহায়তা প্রদানের উপর জোর দেয়।

এই উদ্যোগটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদেরকে স্থান দিয়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সমতা নিশ্চিত করার প্রতি ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন করে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট একদিনে ৩টি অভিযান

স্যানিটেশনে নারী শীর্ষক জাতীয় সংলাপ: স্যানিটেশন সেক্টরে সমতা

প্রকাশিত : ০৫:৩৪:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর আয়োজনে গুলশানের, আমারি ঢাকায় স্যানিটেশন সেক্টরে নারীদের অবদানের গুরুত্ব নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে স্যানিটেশন সেক্টরে কর্মরত প্রতিনিধিগণ একত্রিত হয়ে সমতা ভিত্তিক স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণের অন্তরায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

সংলাপটি বিভিন্ন পেশার নারীদের আলোচনায় যুক্ত হওয়ার ও তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরার একটি সুযোগ তৈরি করে। পাশাপাশি, এ সংলাপে স্যানিটেশন বিষয়ক নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলায় নারীদের অবদান নিশ্চিত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৬ অর্জনে কার্যকরী সমাধান উপস্থাপন করা হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে, এই সংলাপ, সিদ্ধান্তগ্রহনে নারীদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার উপর গুরুত্ব দেয়।

সংলাপের শুরুতে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর টেকনিক্যাল অফিসার সামিয়া আনোয়ার রাফা স্যানিটেশন সেক্টরে নারীদের বর্তমান অবস্থা উপস্থাপন করেন। তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও নারীরা এখনো ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) সেক্টরে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অবস্থানগুলোতে উপেক্ষিত রয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার মাধ্যমে, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করার গুরুত্ব সংলাপে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে একটি প্রাণবন্ত প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা সঞ্চালনা করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর জেন্ডার ইকুয়ালিটি এন্ড সোশাল ইনক্লুশন (জেসি) এক্সপার্ট তুনাজ্জিনা হক। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, ভূমিজ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা রশিদ, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)-এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ডা. রোজিনা আফরোজ রানা।

আলোচনার সময় হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ স্যানিটেশন সম্পর্কিত সংলাপে নারীদের অংশগ্রহণ দেখে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নেটওয়ার্কিংয়ে নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে থাকায়, সিদ্ধান্ত গ্রহনেও তাদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। তিনি আরও বলেন, নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না থাকায় এমন অবকাঠামো তৈরি হয় যা নারী-বান্ধব নয়। তাই নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, স্যানিটেশন ব্যবস্থা বহুমুখী এবং ডিজিটালি উন্নত হওয়া প্রয়োজন, এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন শিক্ষা কে শিক্ষার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

সালমা মাহবুব স্যানিটেশন খাতে প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, বিশেষভাবে সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নির্দেশিকা অনুসরণের ওপর। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে নির্দেশিকায় স্যানিটেশন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট মানদণ্ড অন্তর্ভুক্ত করায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।

ফারহানা রশিদ নারীদের দৃষ্টিকোণ অন্তর্ভুক্ত করে নারী-বান্ধব পাবলিক টয়লেট তৈরি করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, পাবলিক টয়লেটে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে ছোট আকারের অবকাঠামোগত পরিবর্তন যেমন নিরাপদ জানালা এবং কার্যকর দরজা নিশ্চিত করা এবং নারী উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ডা. রোজিনা আফরোজ উল্লেখ করেন কিভাবে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে নারীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন ইউরিনারি সংক্রমণ, ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ এবং কিছু পানিবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া ও ডায়সেন্ট্রি এর শিকার হন। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, কমিউনিটি সিদ্ধান্তে নারীদের এবং স্যানিটেশন সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীবান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরির জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতার জোরালো আহ্বানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে। এই সংলাপটি বিভিন্ন সেক্টরের নারীদের একত্রিত করে ভবিষ্যৎ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তাদেরকে নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মেন্টরশিপ এবং সহায়তা প্রদানের উপর জোর দেয়।

এই উদ্যোগটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দুতে নারীদেরকে স্থান দিয়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সমতা নিশ্চিত করার প্রতি ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন করে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস