বর্তমান সরকারের গ্রামবাংলার অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিকরণের ফলে চরফ্যাশন উপজেলার গ্রামের দৃশ্যপটে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পাল্টে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট।
যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। বন্যাপ্লাবিত ও নদীভাঙনের জনপদ হিসেবে পরিচিত চরফ্যাশন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। পদে পদে নদীভাঙন, বর্ষায় কাদাজলমাখা ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট আর নিত্য দুর্ভোগ যেন এখানকার মানুষের জীবনের অংশ ছিল।
কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। সরকারের টিআর (টেস্ট রিলিফ), কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের সুফল এখন পৌঁছে গেছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা, বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। তবে কাজের গুণগতমান বজায় রাখতে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চরফ্যাশন উপজেলায় ২১ ইউনিয়নে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য ১৫৯টি ছোট ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে টিআরের ২ কোটি ৬৮ লাখ, কাবিখার অনুকূলে ২৫৫ টন গম ও কাবিটা প্রকল্পের আওয়াতায় ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বিনিময়ে সড়ক নির্মাণ, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নকাজ চলছে। ওই বরাদ্দের কাজ মার্চ মাস থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও অতি বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু প্রকল্পের কাজের বিঘ্ন ঘটে। ইতোমধ্যেই ওই সব কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার একাধিক প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, গ্রামগঞ্জের অবহেলিত কাঁচাসড়কগুলো নির্মাণের ফলে নিত্যদূর্ভোগের লাগব হয়েছে। এতে দুর্দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে চরফ্যাশন উপজেলার ২১ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মফিজল ইসলাম জানান, ওই ইউনিয়নের সিকদারের দোকান থেকে প্রায় দুই কিলো মিটারের এই কাঁচা সড়কটি ছিল দুই গ্রামের মানুষের গলার কাঁটা। বর্ষায় হাঁটু পানি বয়ে স্কুলে যেতে দুর্ভোগে ছিলেন শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ। বর্তমান সময়ে গ্রামীণ জনউন্নয়নের বরাদ্দ থেকে সড়কটি নির্মাণ করে দেওয়ার কারণে দূর্ভোগ কেটেছে মানুষের।
রসুলপুর ইউনিয়নের মালেক ডুবাই জানান, ওই ইউনিয়নের ৬নং নম্বর মসজিদের মুসুল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘ ৪০ বছরেও কোনো মাটির ছোঁয়া লাগেনি। চলতি বছরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করলে তিনি এই সড়কটির জন্য বরাদ্দ দেন। সেই বরাদ্দ দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করে দিয়ে দুই গ্রামের মানুষের দুর্দশা লাগব হয়েছে।
এওয়াজপুর ইউনিয়নের শিক্ষার্থী তানহা জানান, সড়কে হাঁটু পানির কারণে বর্ষার মৌসুমে স্কুলে যেতে পারিনি। সড়কে বর্ষায় হাঁটু পানি দিয়ে স্কুলে যেতে প্রায় সময় বই খাতা ও জামা কাপড় ভিঁজে যেত। কিন্তু এ বছর রাস্তাটি নির্মাণ করায় এখন আর স্কুলে যেতে কোনো কষ্ট হয় না।
রসুলপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঢালচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম জানান, এ বিদ্যালয়টি ঢালচরের নদীভাঙন কবলিত এলাকা থেকে রসুলপুর ইউনিয়নে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার বিদ্যালয়ে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে; কিন্তু বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে থাকার কারণে খেলাধুলা বঞ্চিত হতো শিক্ষার্থীরা।
জিন্নাগড় তিন নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, তার ওয়ার্ডে তিনটি প্রকল্পের কাজের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন। তার ইউনিয়নের অবহেলিত তিনটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গুণগতমান নিশ্চিত করে কাজগুলো সম্পন্ন করায় ওই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কেটেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম ওয়ালিউল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইউএনও নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কাজ পরিদর্শন করছেন। প্রতিটি প্রকল্পে নিয়মিত প্রতিবেদন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন জানান, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নেই। অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ামাত্রই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক সভাপতিই জানিয়েছেন, এই প্রথম তারা দেখছেন ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কঠোর তদারকি।
ইউএনও রাসনা শারমিন মিথি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন, এটিই আমাদের বড় অর্জন।
এবারের জনবান্ধব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে চরফ্যাশনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করছে, এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে উপজেলার চিত্র আরও বদলে যাবে। পাশাপাশি চরফ্যাশনকে একটি উন্নয়নমুখী মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতেই আমরা কাজ করছি। জনগণের কল্যাণে এ প্রকল্পগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।
ডিএস.