বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন জীববিজ্ঞানী ও ডিএনএ’র আবিষ্কারক জেমস ডিউই ওয়াটসন মারা গেছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, তিনি বৃহস্পতিবার লং আইল্যান্ডের একটি ‘হসপিস কেয়ার’ কেন্দ্রে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।
ওয়াটসন তাঁর শেষ জীবনে নিউইয়র্কের একটি হসপিস কেয়ারে ছিলেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
১৯৫৩ সালে সহকর্মী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলে ডিএনএ’র দ্বি-হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কার করে বিজ্ঞান জগতে নতুন যুগের সূচনা করেন ওয়াটসন। এই আবিষ্কার চিকিৎসা, ফরেনসিক এবং জেনেটিক গবেষণায় বিপ্লব ঘটায়। তাদের আবিষ্কারের জন্য ১৯৬২ সালে ওয়াটসন, ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারে যুক্ত হন ওয়াটসন। পরবর্তীতে ক্যান্সার গবেষণা ও মানব জিনোম মানচিত্র তৈরিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘দ্য ডাবল হেলিক্স’ বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলার হয়। বইটিতে বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতা ও গবেষণার নেপথ্যের কাহিনি সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করেন তিনি।
তবে ব্যক্তিজীবনে ওয়াটসন ছিলেন বিতর্কিত। নারী বিজ্ঞানী রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনসহ অনেক সহকর্মী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য তিনি সমালোচিত হন। রোজালিন্ডের এক্স-রে চিত্রের ওপর ভিত্তি করেই ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএ মডেল তৈরি করেছিলেন, যদিও রোজালিন্ড জীবিত থাকাকালে নোবেল পাননি।
২০০৭ সালে আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এক মন্তব্যের পর তার চ্যান্সেলর পদ বাতিল করা হয়। এরপর তার ভাবমূর্তি আর পুনরুদ্ধার হয়নি। ২০১৯ সালে আবারও এক তথ্যচিত্রে বিতর্কিত মন্তব্য করায় তাকে প্রতিষ্ঠানটির এমেরিটাস পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
১৯২৮ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্ম নেওয়া জেমস ওয়াটসন ১৫ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিকের সঙ্গে পরিচয় থেকেই শুরু হয় তাদের যুগান্তকারী গবেষণা।
লন্ডনের কিংস কলেজে রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন ও মরিস উইলকিন্সের তোলা এক্স-রে ইমেজের সূত্রে ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএ’র গঠন উন্মোচন করেন। তাদের উপস্থাপিত মডেলটি ডিএনএ’র দ্বি-হেলিক্স কাঠামোর সঠিক ব্যাখ্যা দেয় যা দেখতে ছিল বেঁকে থাকা মইয়ের মতো। এটি জেনেটিক উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
ওয়াটসন পরবর্তীতে হার্ভার্ডে অধ্যাপনা করেন এবং কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির পরিচালক হিসেবে অণুজীববিজ্ঞানের বিকাশে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ-এর অধীনে মানব জিনোম প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন।
তার স্ত্রী এলিজাবেথ, দুই পুত্র রুফাস ও ডানকানসহ তিনি অসংখ্য ছাত্র, গবেষক ও অনুরাগী রেখে গেছেন। শুক্রবার তার সাবেক গবেষণাগার এক বিবৃতিতে বলেন, “বিজ্ঞানের ইতিহাসে জেমস ওয়াটসনের অবদান যুগান্তকারী-তার গবেষণাই আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে।”
ডিএস./




















