একজন পরিশ্রমী মিডিয়াকর্মী মামুন ইমতিয়াজ। সংস্কৃতি অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ। একাধারে তিনি একজন টিভি উপস্থাপক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার, নির্দেশক এবং সংগঠক। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি মিডিয়ায় কাজ করছেন। তিনি বেশকিছু আলোচিত টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চ নাটক ‘সেনাপতি’। কলেজে পড়ার সময় আবদুল্লাহ আল মামুনের এ নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে পুরস্কার লাভ করেন। এরপর মঞ্চে ‘চাবুক’, ‘কোর্ট মার্শাল’ নাটকেও অভিনয় করেন। লোকনাট্যদলের (টিএসসি) হয়ে হাস্যকৌতুক, ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’, ‘হরিণ বাড়ী’, ‘কঞ্জুস’, ‘একাত্তরের দিনগুলি’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেন। মঞ্চের পাশাপাশি বিটিভির নাটকে অভিনয় করেন মামুন ইমতিয়াজ। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিরহী বসন্ত’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘বিরতির পর’, প্যাকেজ নাটক ‘একাত্তরের দিনগুলো’ ইত্যাদি বেশকিছু নাটকে জীবন ঘনিষ্ঠ অভিনয় করে আলোচিত হন। শুধু অভিনয় নয়, একজন সফল আবৃত্তিকার হিসেবেও মামুন ইমতিয়াজ সুপরিচিতি লাভ করেছেন। ৯০’র দশকে তার অনেক আবৃত্তির অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল ‘এক পাত্তর বিষ দাও, কেমন তোমার ভালবাসা (যৌথ), যতক্ষণ তুমি মাধবী, রক্ত নদী একা এবং জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলনের কবিতা নিয়ে ‘আমার প্রিয় কবিতা’, যেটুকু আদর ছুঁয়েছে অধর (প্রকাশিতব্য)। মামুন ইমতিয়াজ অভিনয় এবং আবৃত্তিতে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য বেশক’টি কর্মশালায়ও অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে আমেরিকার কেনেডি সেন্টারের পরিচালক মিস ডিয়ের্ডি ক্যালি লাব্রাকাস, জার্মানির ফ্রিৎস ভেনেভিৎস এবং ভারতের প্রদীপ ঘোষের কর্মশালা উল্লেখযোগ্য। সংগঠক হিসেবেও তিনি বেশ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০০ সালে নবীন-প্রবীণ একঝাঁক সংস্কৃতি কর্মীর সমন¦য়ে সোনারতরী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সোনারতরী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হল ‘তিন কন্যার লোহার বাসর’ যা এসিডদ্বগ্ধদের করুণ উপাখ্যান হিসেবে মিডিয়া অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এছাড়া এ সংগঠনটি দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১২ জন গুণী ব্যক্তিকে ২০০১ সালে সোনারতরী স্বর্ণ সম্মাননা প্রদান করে। আবৃত্তিকার মামুনুর রশীদ মামুনের ‘ভালবাসায় বসবাস’ আবৃত্তির ক্যাসেটের তিনি নির্দেশক ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মামুন ইমতিয়াজ জানান, এ জগতে টিকে থাকার জন্য শারীরিক ফিটনেস, প্রচুর পড়াশোনা দরকার, পাশাপাশি শুদ্ধ উচ্চারণ এবং দেখতে সুন্দর হলে প্লাস পয়েন্ট।
পরবর্তীতে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই প্রবাস মেলা নামে একটি টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত এ অনুষ্ঠানটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে প্রচারিত প্রথম টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, যা প্রায় এক দশক ধরে পাক্ষিক ভিত্তিতে বিটিভি এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এক যোগে প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি ২০০৬ সালে ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে টেলিভিশন বিভাগে ‘শ্রেষ্ঠ ম্যাগাজিন’ অনুষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করে। অনুষ্ঠানটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ করার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন ইমতিয়াজ জানান, মিডিয়াকর্মী হিসেবে এমনিতেই বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে পরিচয় ছিল। সে সুবাদে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা জানতে পারি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। তাদেরও দাবি-দাওয়া আছে, চাওয়া-পাওয়া আছে। কথা বলার জন্য তাদেরও একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। এই বোধ থেকেই প্রবাস মেলা অনুষ্ঠানের পথচলা শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রবাসীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। দেখেছি বিদেশে বসবাস করে তারা শুধু দেশের জন্য অর্থই উপার্জন করছেন না, বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিও তারা বিদেশের মাটিতে তুলে ধরছেন। দেখেছি তাদের দেশপ্রেমও অনেক গভীর। মূলত এই সব দেশপ্রেমিক প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতা তুলে ধরতেই আমি প্রবাস মেলা অনুষ্ঠান নির্মাণের কাজ শুরু করি। মামুন ইমতিয়াজের জন্মস্থান কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানার শোমসপুর গ্রামে। বাবা মরহুম আতাহার হোসাইন শোমসপুর হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ৪ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে মামুন ইমতিয়াজ সবার বড়। প্রথম জীবনে পারিবারিকভাবে কেউ অনুপ্রেরণা না দিলেও বর্তমানে তার মা মমতাজ বেগম এবং স্ত্রী সাবেরা আক্তার সুখী তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এ
‘স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী মামুন ইমতিয়াজ ব্যক্তিগত জীবনে মেয়ে সাম্পান ইমতিয়াজ ও ছেলে সাহস ইমতিয়াজের পিতা। অভিনয় এবং আবৃত্তি ছাড়াও তিনি মুক্তচিন্তার একজন ফ্রিল্যান্স লেখক। মামুন ইমতিয়াজ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ভারতসহ প্রায় ৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মামুন ইমতিয়াজ বলেন, দীর্ঘসময় ক্যামেরার সামনে কাজ করলেও বর্তমানে আমি নেপথ্যে থেকেই বাংলা সংস্কৃতি ও মিডিয়ার নানাবিধ কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সময় এবং সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবৃত্তি এবং উপস্থাপনায় নিয়মিত হব। বর্তমানে পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘প্রবাস মেলা’ পত্রিকার উপদেষ্টা (অনারারী) হিসেবে কাজ করছি। পত্রিকাটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রায় এক কোটি প্রবাসীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতাসহ তাদের জীবন-যাপনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। এ পত্রিকাটি নিয়ে আমার বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। প্রবাসীদের জন্য কাজ করাকে আমি একটি সেবামূলক ব্রত হিসেবে নিয়েছি। তাই তাদের স্বার্থে এবং কল্যাণে আজীবন নিয়োজিত থাকতে চাই।
বিবি / ইএম


























