অভিলাষী আমি অভিমানী তুমি
হাজারো স্বপ্ন নিয়ে সবকিছু ভুলে গিয়ে
পৃথিবীতে বসে আছি সংসার সাজিয়ে
জানে অন্তরযামী কে বা আগে পরে
সবাইকে একা করে চলে যাব অন্ধ ঘরে
এই শহর গাড়ী বাড়ি কিছুই যাবে না
আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে
আর বেশী কাঁদালে উড়াল দেবো আকাশে…..
গানের কথার মতো শিল্পী নিজেও যেনো আজ উড়াল দিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার এই শুণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়।
দেশের তরুণদের রক গানের স্বাদ দিয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পী দীর্ঘ চার দশক ধরে সুরের আলো ছড়িয়ে গেছেন। এছাড়া গিটারের ছয় তারেও জয় করেছেন উপমহাদেশ। আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে দেশে বিদেশে সমাদৃত ছিলেন। মঞ্চ পারফরমেন্সে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি।
এই বেদনা ভরা সময়ে তাকে স্বরণে দেখে নিন তার জনপ্রিয় গানগুলো
এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নি
শুধু অডিও গানে নয়, প্লেব্যাকেও তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তার গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় গান। এছাড়া ‘আম্মাজান’ সিনেমার শিরোনাম গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।
আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে এ দেশীয় ব্যান্ড সংগীত অনন্য মাত্রা পেয়েছে। সেই আশির দশক থেকে আজ অবধি গানের সুরে ও কথায় তিনি মন জয় করে নিয়েছেন বাঙালি হৃদয়। জনপ্রিয় হয়ে উঠেন দেশে বিদেশে।
তার জনপ্রিয় গানগুলো মধ্যে রয়েছে- ‘এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘উড়াল দেব আকাশে’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে’। বাচ্চুর কয়েকশ’ গান আজও দর্শকশ্রোতাদের ঠোটে। এসব গান তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
ছোটবেলা থেকেই গিটারের প্রেমে পড়েছিলেন এলআরবি ব্যান্ডের এই অগ্রপথিক। তবে ব্যান্ডের সঙ্গে তার যাত্রা শুরু ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি ‘সোলস’ ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ প্রকাশ হয়েছিলো ১৯৮৬ সালে। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি।
আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু ‘এলআরবি’ ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো।
১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ পুরো দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এর মধ্যে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গান।
গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে।
বিবি/জেজে


























