০৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

আট স্থানে হয় ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটনোর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করা হয় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ আটটি স্থানে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানিতে এ বক্তব্য পেশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামী ৬ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, আগামী ৬,৭ ও ৮ নভেম্বর টানা এ মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ চলবে। বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষকে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি যুক্তিতর্কে বলেন, রাজধানীর বনানীর হাওয়া ভবন, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ-ই আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডিস্ত সরকারী বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি নিয়ে ভয়াবহ ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাস্তবায়ন করা হয়।

তিনি বলেন, হাওয়া ভবনের বৈঠকে তারেক রহমান আসামিদের ঘটনা বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন যা আসামির জবানবন্দি ও সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যে সব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগষ্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভয়াবহ ও হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং বহু আহত হয়। যাদের মধ্যে অনেকেই ওই হামলার কারণে এখনো দূর্বিসহ জীবযাপন করছেন।

তিনি বলেন, এ মামলার অন্যতম আসামী জঙ্গি মুফতি হান্নানের দেয়া জবানবন্দিতে ওই ঘটনার বিষয়ে বিষদ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি রয়েছে। তাতে দেখা যায় ওই ঘটনায় তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহায়তা রয়েছে। মুফতি হান্নানের ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দেয়া জবানবন্দিতে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২০ আগষ্ট সকালে আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা তাহের, কাজলসহ অন্যান্য কয়েকজন আসামি ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরে ২১ আগষ্টে হামলা চালাতে কারা অংশ নিবে ওই সকাল ৮ টায় মেরুল বাড্ডায় কাজলের বাসায় বৈঠক ও পরিকল্পনা হয়। বৈঠকে বলা হয় যাদের দাড়ী আছে তারা হামলায় অংশ নিতে পারবেনা। সে অনুযায়ি ওই দিনই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ চলাকালীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ৯টি স্থানে ওই গ্রেনেডগুলো বিষ্ফোরিত হয়। পরে অবিষ্ফোরিত ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার হয়। যার ৩টি জব্দ করা হয়।

যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আজ ঘটনাস্থালের কোন কোন স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং হতাহতের ঘটনার ভয়াবহতা বিষয়ে বর্ননা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ গনমাধ্যমকর্মীসহ মামলায় দেয়া বিভিন্ন সাক্ষ্য উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহতরা কোথায় এবং কোন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তাও তুলে ধরে হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, কাজী জাফরউল্লাহ, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কথা উল্লেখ করা রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ওইসময় তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা দেন।

প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করেন আইনজীবী খন্দকার আবদুল মান্নান, আকরাম উদ্দিন শ্যামল,ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরায় হোসেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম, আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। নৃশংস, চাঞ্চল্যকর ও ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এরপর আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য পেশ ও আসামীপক্ষ সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।

মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। আদালত সূত্র জানায়, চার্জশিটে অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, ৮ জন জামিনে রয়েছে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি হয়।

মামলার আরেক আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার মামলায়। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছে।

ট্যাগ :

আট স্থানে হয় ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা

প্রকাশিত : ০৭:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটনোর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করা হয় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ আটটি স্থানে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানিতে এ বক্তব্য পেশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামী ৬ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, আগামী ৬,৭ ও ৮ নভেম্বর টানা এ মামলায় যুক্তিতর্ক পেশ চলবে। বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষকে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি যুক্তিতর্কে বলেন, রাজধানীর বনানীর হাওয়া ভবন, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ-ই আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডিস্ত সরকারী বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি নিয়ে ভয়াবহ ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাস্তবায়ন করা হয়।

তিনি বলেন, হাওয়া ভবনের বৈঠকে তারেক রহমান আসামিদের ঘটনা বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন যা আসামির জবানবন্দি ও সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যে সব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগষ্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভয়াবহ ও হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং বহু আহত হয়। যাদের মধ্যে অনেকেই ওই হামলার কারণে এখনো দূর্বিসহ জীবযাপন করছেন।

তিনি বলেন, এ মামলার অন্যতম আসামী জঙ্গি মুফতি হান্নানের দেয়া জবানবন্দিতে ওই ঘটনার বিষয়ে বিষদ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি রয়েছে। তাতে দেখা যায় ওই ঘটনায় তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ ও সহায়তা রয়েছে। মুফতি হান্নানের ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দেয়া জবানবন্দিতে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২০ আগষ্ট সকালে আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা তাহের, কাজলসহ অন্যান্য কয়েকজন আসামি ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরে ২১ আগষ্টে হামলা চালাতে কারা অংশ নিবে ওই সকাল ৮ টায় মেরুল বাড্ডায় কাজলের বাসায় বৈঠক ও পরিকল্পনা হয়। বৈঠকে বলা হয় যাদের দাড়ী আছে তারা হামলায় অংশ নিতে পারবেনা। সে অনুযায়ি ওই দিনই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ চলাকালীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ৯টি স্থানে ওই গ্রেনেডগুলো বিষ্ফোরিত হয়। পরে অবিষ্ফোরিত ৪টি গ্রেনেড উদ্ধার হয়। যার ৩টি জব্দ করা হয়।

যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আজ ঘটনাস্থালের কোন কোন স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং হতাহতের ঘটনার ভয়াবহতা বিষয়ে বর্ননা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ গনমাধ্যমকর্মীসহ মামলায় দেয়া বিভিন্ন সাক্ষ্য উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহতরা কোথায় এবং কোন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তাও তুলে ধরে হয়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, কাজী জাফরউল্লাহ, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কথা উল্লেখ করা রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ওইসময় তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা দেন।

প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করেন আইনজীবী খন্দকার আবদুল মান্নান, আকরাম উদ্দিন শ্যামল,ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরায় হোসেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম, আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। নৃশংস, চাঞ্চল্যকর ও ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এরপর আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য পেশ ও আসামীপক্ষ সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।

মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। আদালত সূত্র জানায়, চার্জশিটে অভিযুক্ত ৫২ জনের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, ৮ জন জামিনে রয়েছে এবং বাকিরা বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি হয়।

মামলার আরেক আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি হয়েছে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলার মামলায়। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদ জামিনে রয়েছে।