০৭:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশ

১১ মে ২০১৮। ঘড়ির কাঁটায় তখন বাংলাদেশ সময় রাত ২টা পেরিয়ে ১৪ মিনিট। বিশ্বের সব বাঙালির বিস্ময়-উৎসুক দৃষ্টি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। তীব্র আগুনের হলকা ছড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা লাল-সবুজের ফ্যালকন-৯ ডানা মেলে মহাকাশের পথে। কেনেডি স্পেস সেন্টারজুড়ে তখন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…।’ এর ঠিক ৩৩ মিনিট পরই নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছে যায় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।

মহাকাশ বিজয়ের ৬১ বছর পর ৫৭তম দেশের গর্বিত সদস্য হয় লাখো শহীদের রক্তে কেনা বাংলাদেশ। সরকারের ১০ বছরে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে দেশ, বদলে গেছে জীবন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহাবিশ্বÑ সর্বত্র চলছে ডিজিটাল সরকারের ডিজিটাল পথচলা। টার্গেট রূপকল্প ২০২১। এর মধ্যেই ৯০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর সরকার।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ২০০ ই-পোস্ট থেকে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে জনগণ। ৩ হাজার ৮টি সেন্টারে চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ১১টি সিটি করপোরেশনে ৪০৭টি ডিজিটাল সেন্টার ও ৩২১টি পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে।

আইসিটি ডিভিশন এবং এটুআই প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ মানুষ এসব কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছেন। ডিজিটাল সেন্টার থেকে উদ্যোক্তাদের আয় হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি দপ্তরে কানেক্টিভিটি স্থাপন, ৮০০ অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম চালু, ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন ফাইবার অপটিক্যাল কানেক্টিভিটি এবং ৮ হাজার ৫০০ শাখা ডাকঘরকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম।

সারা দেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই চালু হবে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। ইতোমধ্যে ২৩ লাখ ২০ হাজার রেকর্ড ডিজিটাল সিস্টেমে রাখা হয়েছে। সরকারি অফিসে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এখন দক্ষ নাগরিক তৈরিতে জোর দিচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করে, রোবোটিক্স নিয়ে ব্যাপকভাবে চর্চা করে। আগামী দিনে তারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে। সেই নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দায়িত্ব নেয়ার পর সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করে তারা। বর্তমানে ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ এ এখন ৪৩ হাজার দপ্তর সংযুক্ত।

অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার হওয়ায় কমছে বেকারত্ব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগর। ১৬২৬৩ নম্বরে ডায়াল করে ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসা পরামর্শ। ভিডিও কনফারেন্স এবং নানা ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি কাজ দ্রুত এবং সহজ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকলেও তিনি ডিজিটাল ব্যবস্থায় অফিস করেন, ফাইল সই করেন। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই মিলছে জরুরি সেবা। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ই-কমার্সের সেবা।

আর এর স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর পাঁচবার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস)’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১৩ কোটিরও বেশি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি। ২০২১ সালের আগেই ৯০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর আমরা। তিনি জানান, মানবসম্পদ তৈরি, ইন্টারনেট, ই-গভর্নেন্স, এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিজ ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ নিয়ে কাজ করছে সরকার।

বিবি/রেআ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১২:১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

১১ মে ২০১৮। ঘড়ির কাঁটায় তখন বাংলাদেশ সময় রাত ২টা পেরিয়ে ১৪ মিনিট। বিশ্বের সব বাঙালির বিস্ময়-উৎসুক দৃষ্টি ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। তীব্র আগুনের হলকা ছড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ লেখা লাল-সবুজের ফ্যালকন-৯ ডানা মেলে মহাকাশের পথে। কেনেডি স্পেস সেন্টারজুড়ে তখন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…।’ এর ঠিক ৩৩ মিনিট পরই নিজস্ব কক্ষপথে পৌঁছে যায় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।

মহাকাশ বিজয়ের ৬১ বছর পর ৫৭তম দেশের গর্বিত সদস্য হয় লাখো শহীদের রক্তে কেনা বাংলাদেশ। সরকারের ১০ বছরে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে দেশ, বদলে গেছে জীবন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহাবিশ্বÑ সর্বত্র চলছে ডিজিটাল সরকারের ডিজিটাল পথচলা। টার্গেট রূপকল্প ২০২১। এর মধ্যেই ৯০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর সরকার।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ২০০ ই-পোস্ট থেকে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে জনগণ। ৩ হাজার ৮টি সেন্টারে চালু হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ১১টি সিটি করপোরেশনে ৪০৭টি ডিজিটাল সেন্টার ও ৩২১টি পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে।

আইসিটি ডিভিশন এবং এটুআই প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ মানুষ এসব কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছেন। ডিজিটাল সেন্টার থেকে উদ্যোক্তাদের আয় হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি দপ্তরে কানেক্টিভিটি স্থাপন, ৮০০ অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম চালু, ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন ফাইবার অপটিক্যাল কানেক্টিভিটি এবং ৮ হাজার ৫০০ শাখা ডাকঘরকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম।

সারা দেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই চালু হবে ডিজিটাল রেকর্ড রুম। ইতোমধ্যে ২৩ লাখ ২০ হাজার রেকর্ড ডিজিটাল সিস্টেমে রাখা হয়েছে। সরকারি অফিসে ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এখন দক্ষ নাগরিক তৈরিতে জোর দিচ্ছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করে, রোবোটিক্স নিয়ে ব্যাপকভাবে চর্চা করে। আগামী দিনে তারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে। সেই নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দায়িত্ব নেয়ার পর সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করে তারা। বর্তমানে ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ এ এখন ৪৩ হাজার দপ্তর সংযুক্ত।

অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার হওয়ায় কমছে বেকারত্ব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগর। ১৬২৬৩ নম্বরে ডায়াল করে ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাচ্ছে চিকিৎসা পরামর্শ। ভিডিও কনফারেন্স এবং নানা ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি কাজ দ্রুত এবং সহজ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকলেও তিনি ডিজিটাল ব্যবস্থায় অফিস করেন, ফাইল সই করেন। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই মিলছে জরুরি সেবা। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ই-কমার্সের সেবা।

আর এর স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর পাঁচবার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস)’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ১৩ কোটিরও বেশি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি। ২০২১ সালের আগেই ৯০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর আমরা। তিনি জানান, মানবসম্পদ তৈরি, ইন্টারনেট, ই-গভর্নেন্স, এবং আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিজ ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ নিয়ে কাজ করছে সরকার।

বিবি/রেআ