১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফোনে আসক্তি কাটাতে অ্যাপ!

সকালে ঘুম ভাঙা মাত্র হাত চলে যায় মাথার কাছে রাখা মোবাইলের দিকে। কাজ বা পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আনাগোনা। আড্ডা মারতে মারতে বা কোথাও খেতে গিয়েও মন পড়ে মোবাইলে। নতুন কোনও নোটিফিকেশন না এলে সন্দেহ হয়, ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক আছে তো?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ সবই হতে পারে মোবাইলে আসক্তির লক্ষণ। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, এই আসক্তি থাবা বসিয়েছে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও। মোবাইলে আসক্তির প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন জীবনে। বিভিন্ন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার ডেকে আনছে নানা রোগও।

স্বাভাবিক ভাবেই কী ভাবে সেই আসক্তি কাটানো যায়, চলছে তার খোঁজ। এ জন্য তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে কোনও অ্যাপ সতর্কবার্তা পাঠায়, কোনওটি আবার বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট সংযোগ। কোনও অ্যাপ আবার একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে বাধা দেয়। এ ভাবেই ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যবহারের সময় কমিয়ে ফেলা যাবে বলে দাবি করেছেন ওই অ্যাপ-নির্মাতারা।

এই ধরনের একটি অ্যাপ ব্যবহার করছেন কলেজপড়ুয়া লিয়ানা । তিনি জানাচ্ছেন, দিনে কত ক্ষণ মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে, তা নজরে রাখার কাজে আসে অ্যাপটি। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মোবাইল ব্যবহার করলেই বন্ধ হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত অন্য অ্যাপগুলি। লিয়ানা বলেন, ‘‘মোবাইল ছাড়া তো চলবে না। কিন্তু এই অ্যাপের সাহায্যে বুঝতে পারি যে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে। তার পরে নিজে থেকেই সেই ব্যবহার খানিকটা কমাতে পেরেছি।’’

কিন্তু যে বস্তুটির প্রতি আসক্তি রয়েছে, তার মাধ্যমেই কি এই আসক্তি কাটানো সম্ভব?

মনোরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যে কোনও ধরনের আসক্তি কমানোর পদ্ধতি ব্যক্তিবিশেষে বদলে যায়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলছেন, কেউ ধূমপান ছাড়েন ধীরে ধীরে, কেউ আবার এক দিনেই ছেড়ে দেন। ফলে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ সকলের মোবাইল আসক্তির জন্য কার্যকর হবে, এমনটা মনে করেন না তিনি।

‘‘যে কোনও ধরনের আসক্তি একটা জটিল, বহুস্তরীয় বিষয়। এই ধরনের অ্যাপের ভাবনাটা ভাল, কিন্তু কতটা কার্যকর হবে? বর্তমান জীবনযাত্রার ধরনই নানা আসক্তির সৃষ্টি করছে। কার্টুন বা গান চালিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর মতো রোজকার আচরণেই লুকিয়ে রয়েছে আসক্তির বীজ। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটিই পরে বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে যে, স্বাভাবিক বুদ্ধি কাজ করছে না। ঝুমা বলছেন, ঠিক হচ্ছে না জেনেও শুধু তাৎক্ষণিক আনন্দের খোঁজে হয়তো মোবাইল ঘাঁটছেন কেউ। ক্রমশ ওই ছোট গণ্ডীই হয়ে উঠছে তাঁদের ধ্যানজ্ঞান।

তা হলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসক্তি থেকে বেরোনোর কোনও ওষুধ হয় না। এর প্রথম ধাপ নিজে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, ক্রমাগত মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাসে একটা ধাক্কা দেওয়া। সারা দিনে কত ঘণ্টা মোবাইলে চোখ রেখে কাটছে, সেটা হিসেব করতে এই ধরনের অ্যাপ কাজে লাগতে পারে। তার পরে সম্বল একমাত্র মনের জোর। কারণ কোনও অ্যাপ ইন্টারনেটের সংযোগ বা অন্য অ্যাপ আর কিছু বন্ধ করে দিলেও ‘সেটিং’ পাল্টে ফের তা চালু করার উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে আসক্তি কাটিয়ে উঠতে বিষয়টির রাশ রাখতে হবে নিজের হাতেই। বাইরে থেকে অন্য কোনও ব্যক্তি বা প্রযুক্তির সাহায্যে এর সমাধান সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।

বিজনেস বাংলাদেশ-/ এমএ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

ফোনে আসক্তি কাটাতে অ্যাপ!

প্রকাশিত : ১১:৪৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯

সকালে ঘুম ভাঙা মাত্র হাত চলে যায় মাথার কাছে রাখা মোবাইলের দিকে। কাজ বা পড়াশোনার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আনাগোনা। আড্ডা মারতে মারতে বা কোথাও খেতে গিয়েও মন পড়ে মোবাইলে। নতুন কোনও নোটিফিকেশন না এলে সন্দেহ হয়, ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক আছে তো?

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ সবই হতে পারে মোবাইলে আসক্তির লক্ষণ। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, এই আসক্তি থাবা বসিয়েছে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও। মোবাইলে আসক্তির প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন জীবনে। বিভিন্ন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার ডেকে আনছে নানা রোগও।

স্বাভাবিক ভাবেই কী ভাবে সেই আসক্তি কাটানো যায়, চলছে তার খোঁজ। এ জন্য তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মোবাইল ব্যবহার করলে কোনও অ্যাপ সতর্কবার্তা পাঠায়, কোনওটি আবার বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট সংযোগ। কোনও অ্যাপ আবার একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে বাধা দেয়। এ ভাবেই ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যবহারের সময় কমিয়ে ফেলা যাবে বলে দাবি করেছেন ওই অ্যাপ-নির্মাতারা।

এই ধরনের একটি অ্যাপ ব্যবহার করছেন কলেজপড়ুয়া লিয়ানা । তিনি জানাচ্ছেন, দিনে কত ক্ষণ মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে, তা নজরে রাখার কাজে আসে অ্যাপটি। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি মোবাইল ব্যবহার করলেই বন্ধ হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত অন্য অ্যাপগুলি। লিয়ানা বলেন, ‘‘মোবাইল ছাড়া তো চলবে না। কিন্তু এই অ্যাপের সাহায্যে বুঝতে পারি যে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে। তার পরে নিজে থেকেই সেই ব্যবহার খানিকটা কমাতে পেরেছি।’’

কিন্তু যে বস্তুটির প্রতি আসক্তি রয়েছে, তার মাধ্যমেই কি এই আসক্তি কাটানো সম্ভব?

মনোরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যে কোনও ধরনের আসক্তি কমানোর পদ্ধতি ব্যক্তিবিশেষে বদলে যায়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলছেন, কেউ ধূমপান ছাড়েন ধীরে ধীরে, কেউ আবার এক দিনেই ছেড়ে দেন। ফলে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ সকলের মোবাইল আসক্তির জন্য কার্যকর হবে, এমনটা মনে করেন না তিনি।

‘‘যে কোনও ধরনের আসক্তি একটা জটিল, বহুস্তরীয় বিষয়। এই ধরনের অ্যাপের ভাবনাটা ভাল, কিন্তু কতটা কার্যকর হবে? বর্তমান জীবনযাত্রার ধরনই নানা আসক্তির সৃষ্টি করছে। কার্টুন বা গান চালিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর মতো রোজকার আচরণেই লুকিয়ে রয়েছে আসক্তির বীজ। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটিই পরে বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছচ্ছে যে, স্বাভাবিক বুদ্ধি কাজ করছে না। ঝুমা বলছেন, ঠিক হচ্ছে না জেনেও শুধু তাৎক্ষণিক আনন্দের খোঁজে হয়তো মোবাইল ঘাঁটছেন কেউ। ক্রমশ ওই ছোট গণ্ডীই হয়ে উঠছে তাঁদের ধ্যানজ্ঞান।

তা হলে এর থেকে মুক্তির উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসক্তি থেকে বেরোনোর কোনও ওষুধ হয় না। এর প্রথম ধাপ নিজে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, ক্রমাগত মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাসে একটা ধাক্কা দেওয়া। সারা দিনে কত ঘণ্টা মোবাইলে চোখ রেখে কাটছে, সেটা হিসেব করতে এই ধরনের অ্যাপ কাজে লাগতে পারে। তার পরে সম্বল একমাত্র মনের জোর। কারণ কোনও অ্যাপ ইন্টারনেটের সংযোগ বা অন্য অ্যাপ আর কিছু বন্ধ করে দিলেও ‘সেটিং’ পাল্টে ফের তা চালু করার উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে আসক্তি কাটিয়ে উঠতে বিষয়টির রাশ রাখতে হবে নিজের হাতেই। বাইরে থেকে অন্য কোনও ব্যক্তি বা প্রযুক্তির সাহায্যে এর সমাধান সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।

বিজনেস বাংলাদেশ-/ এমএ