বিএনপির এক সময়ের দাপুটে ও বর্ষীয়ান নেতা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়ে সব ধরনের চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎকরা। হাসপাতালে খোকার পাশে আগে থেকেই আছেন তাঁর স্ত্রী ইসমত হোসেন, মেয়ে সারিকা সাদেক, ছেলে ইশফাক হোসেন। বাবার সংকটাপন্ন অবস্থার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে ছুটে গেছেন তার তার বড় ছেলে ইশরাক ।
গত ১ নভেম্বর শুক্রবার সকাল থেকে সাদেক হোসেন খোকা মৃত্যুবরণ করেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে দলের ভেতরে ও বাইরে খোকার ভক্ত সমর্থকরা বিভ্রান্তি পড়েন। পরে শুক্রবার রাতে নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় খোতার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, বাবা এখনও বেঁচে আছেন।
তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওনার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, মৃত্যুর যে খবরটা ছড়ানো হয়েছে সেটা আসলেই গুজব। বাবার সুস্থ্যতা কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন ইশরাক।
সূত্র জানায়, লাগাতার ওষুধ সেবনের ফলে খোকার মুখে ঘা হয়ে গেছে। তিনি খাবার খেতে পারছিলেন না বিধায় ওই হাসপাতালে ভর্তির পর গত ২৭ অক্টোবর তার ফুসফুসে একটি ছোট অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাকে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে হাসপাতালেই।
খোকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী অন্তিম সময়ে তাঁকে দেশে আনাও পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে স্বজনেরা বিভ্রান্তিতে আছেন। দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খোকার শারিরীক এমন পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে পড়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
খোকার গুরুতর অসুস্থ্যতার খবর জেনে তাকে নিয়ে ফেসবুকে আবগেময় ভাষায় একটি চিঠিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস লিখেছেন, প্রিয় খোকা, তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী জানার পর থেকে আমার বুকের ভেতরটা যেন ভেঙে আসছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে দুহাত তুলে দোয়া করছি- তিনি অবশ্যই তোমাকে সুস্থ্য করে আমাদের মাঝে ফিরে আনবেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা জানান, স্থানীয় নেতাকর্মীরা খোকাকে দেখতে হাসপাতালে গেলে তিনি কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে দেশে ফেরার অকুতি জানান। হাসপাতালে যাওয়ার আগে সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আক্ষেপ করে বলেছেন, জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের মাটিতে বিদায় হবে কিনা আল্লাহ জানেন। আমার জন্য দোয়া করো।
ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক আসেন খোকা। তারপর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে থাকছেন তিনি। ভিজিট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, ছয় মাস পর পর যাওয়া-আসা করে আমেরিকার ভিসা বৈধ রাখার নিয়ম। ২০১৭ সালে খোকা ও তাঁর স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাঁরা নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে কনস্যুলেট থেকে কোনো সদুত্তর দেয়া হয়নি।
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৮ অক্টোবর তাঁর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটলে তাঁকে আইসিইউতে নেয়া হয়। খোকার সুস্থ্যতা কামনায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উদ্যোগে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যস্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি।
বিজনেস বাংলাদেশ-বি/এইচ























