বেশিরভাগ পেশাদাররা তাদের উচ্চপদস্থ ও সহকর্মীদের নিয়ে ভাবেন। যার ফলে মানুষ আপনাকে কিভাবে গ্রহন করছে তা নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন থাকেন। আপনার পদোন্নতির পেছনে বাধা হিসেবে আপনি আপনার কাজের ব্যর্থতাকে দ্বায়ী না করে তাদের চিন্তাভাবনাকে প্রাধন্য দেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আরো অনেক কারন বা বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনার কাজে খ্যাতি এনে দিতে পারে। অর্থাৎ অফিসে আপনার রেপুটেশন বৃদ্ধি করবে। বলাবাহুল্য সেগুলো যথেষ্ট সহজ ও নয়। যেগুলো আপনার কাজের ওপর একটা আলাদা ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সহায়ক। কয়েকটি বিষয় এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা দরকার।
১. সবসময় ‘হ্য’ বলুন।।
এটা মনে হতে পারে অফিস হতে সব কাজ আপনার ওপর কেন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? যেখানে আপনি কাজের চাপে যথেষ্ট ব্যস্ত রয়েছেন। কিন্তু সত্যি বলতে এটা আপনার ওপর একটা আলাদা আস্থা সৃষ্টি হওয়ার ফলস্বরুপ ঘটছে সেটা আপনি বুঝতেই পারছেন না।
যদি আপনি সবসময় কাজ বুঝে নেয়ার জন্য সক্ষম থাকেন তাহলে একটা সময়ে আপনি বস এর চোখে অন্যতম ও অপুরনীয় ব্যক্তি হয়ে উঠবেন।
প্রায়শই দেখা যায় যারা কোন কাজের ক্ষেত্রে ‘হ্য’ সুচক মাথা নেড়ে নিজেকে এগিয়ে দেন তারা পরবর্তীতে অফিসের একমাত্র ভরসার ব্যক্তি হয়ে ওঠেন যে যেকোন কাজ করে দিতে সক্ষম। উচ্চপদস্থ বা বস এর কাছে আস্থাভাজন হওয়ার এটাই প্রথম পর্যায়।
এটা আপনার পদোন্নতি বাড়াতে আরেক ধাপ এগিয়ে দেবে। তাই কষ্ট হবে জেনেও কাজের ক্ষেত্রে ‘না’ বলাই উত্তম।
২. অফিসিয়াল কাজের সান্নিধ্যে থাকুন।।
কাজের ক্ষেত্রে নিবিড় মনযোগের ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে এটা গুরুত্বপূর্ন যে দিনে দিনে আপনি কাজের বাইরে অন্যদের সাথে কেমন আচরন করছেন। কারন গভীর মনযোগে কাজ করার সময়ে অনেকেই অন্যদিকে খেয়াল দেন না। এর ফলে যে আপনি কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কি না সেটাও লক্ষ রাখতে হবে। যদি এরকম হয় তাহলে সেটা আপনার জন্য মারাত্বক ভুল। কাউকে কথায় বা কাজে আপনি হাসিমুখে নাকি কটুভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন সেটাও মুখ্য এখানে। হাই, হ্যলো, এক্সকিউজ মি বলে আপনি সহকর্মীদের কতটা সান্নিধ্যে রয়েছেন সেটা খতিয়ে দেখাও জরুরী।
এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের মত হলো “মাথা নিচু করে পুরষ্কার নেওয়া সত্যি এক বড় ভুল বৈকি।” এটা একপ্রকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরন এবং এটা প্রমান করে আপনি যথেষ্ট বন্ধুসুলভ নন। এসব ছোটখাটো ভুলগুলোকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। নিশ্চিত থাকুন আপনার কার্যাবলী আপনার আচরনে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
৩. বস এর চিন্তাভাবনার ওপর প্রাধন্য দিন।।
যদিও কাজের ক্ষেত্রে অফিসের বস’ই যে মুখ্য ব্যক্তিত্ব তা নয়। আপনার সহকর্মীদেরও মাথায় রাখতে হবে আপনার। তারপরেও বস এর চিন্তাভাবনার ওপর প্রাধন্য দিলে সেটা আশানুরুপ ফল এনে দেবে। তবে কোনক্রমেই সহকর্মীদের বিরুদ্ধে যাওয়া চলবেনা।
৪. খাপ খাইয়ে নেয়া।।
একটা সাধারন বিষয় সবসময় লক্ষ্য করা যায় অনেকেই নিজের খ্যতি ও ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার জন্য সবার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না। আবার সবক্ষেত্রে খাপ খাইয়ে নেয়াও সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। তবে অফিসে চাকরী করার ক্ষেত্রে সেখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নানা অসুবিধার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেটা পরবর্তীতে অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
৫. প্রয়োজন বুঝে কম বা অতিরিক্ত কথা বলা।।
প্রয়োজন অনুযায়ী কথা বলা এবং অপ্রয়োজনে চুপ থাকাটা অতীব জরুরী। কথার ভেতরে ভারসাম্য বজায় রাখলে নিজের প্রতি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক থাকে। কথা যেখানে একটু বেশি বলা প্রয়োজন বা নিজেকে উপস্থাপন করতে দুটি কথা বেশি বলা দোষের কিছুই নয়। কিন্তু বাচনভঙ্গী ও অন্যের কথা ধৈর্যসহকারে শোনার মাঝেও মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে।
৬. ছোটখাটো দ্বন্দ সমাধানে উর্ধ্বতনদের সাহায্য নিন।।
কাজের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তবে তা বড় না করাই উত্তম। আর যদি কোন বড় ধরনের ঝামেলা হয়েই থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে উর্ধ্বতনদের সাহায্য নিয়ে মিমাংসা করাই শ্রেয়। তবে প্রতিটা বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ত করা বোকামি। অফিসে যদি কারো সাথে দ্বন্দ থেকেই থাকে তাহলে সেটা মিমাংসা করার জন্য জন্য নিজে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ। অন্যথায় এটা আপনার কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৭. কারো বিরক্তিকর অভ্যাস উপেক্ষা না করা।।
সহকর্মীদের এমন কিছু অভ্যাস থাকবে যেগুলো আপনার কাছে চরম বিরক্তিকর মনে হতে পারে। অর্থাৎ যেগুলো আপনি করতে বা দেখতে অভ্যস্ত নন। তবে সেটা সরাসরি উপেক্ষা করা বা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন অধিকার আপনি রাখেন না। যেমন ধরা যাক অনেকে সারাদিন চুইংগাম চিবোতে থাকেন, কেউ গায়ে পড়ে কথা বলেন, কেউ ধুমপান করেন, হয়তো কেউ আপনার ডেস্কে বসে আপনার হেডফোনটাও ব্যবহার করে থাকেন।
আবার আপনার এমন কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো অন্যদের কাছে বিরক্তিকর বটে কিন্তু আপনি সেগুলো নিজেও জানেন না। এবং এটা খুজে বের করাও কঠিন যে আপনার এমন কি বদ অভ্যাস রয়েছে। কারন নিজের দোষ কখনোই নিজের কাছে ধরা দেয়না এবং আপাতদৃষ্টিতে আপনার কাছে সেগুলো দোষের কিছুই মনে হবেনা।
৮. অতিরিক্ত কাজ করা।।
অনেকেরই বিশ্বাস অতিরিক্ত কাজ করলে সেটা দ্রুত সাফল্যের দ্বারে পৌছে দেয়। ফলে অনেকেই প্রয়োজনের বাইরে বেশি কাজ করে থাকেন। কিন্তু প্রত্যোক ক্ষেত্রেই তা সঠিক নয়। মাঝে মাঝে যখন আপনি আপনার সহকর্মীদের তুলনায় বেশি কাজ করবেন তখন আপনি তাদের চক্ষুশুল হয়ে দাড়াতে পারেন। তখন তারা আপনার বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করতে পারে। তখন দেখবেন আপনি আপানর সর্বোচ্চ দিয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন।
কাজ করুন প্রয়োজন মতো। কাজের ক্ষেত্রে যতটা পারেন নিজকে নম্র ও বিনয়ী ভাবে উপস্থাপন করুন। ওভার পারফর্মিং করে অন্যের দৃষ্টিকটু না হয়ে বরং তাদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার চেষ্টা করুন।
ছবি ও তথ্যসুত্রঃ অনলাইন।।


























