অফ্রিকার পর পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে শষ্যখেকো পতঙ্গ পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশ এর আক্রমণের ঝুঁকি নেই বলে মনে করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। একই সঙ্গে আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশে পঙ্গপাল ছড়ানোর কোনো শঙ্কাও দেখছে না কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগেও কয়েকবার ভারত ও পাকিস্তানে ফড়িং গোত্রের এই পতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলেও তখন তা বাংলাদেশে ছড়ায়নি। বিগত ৫০ বছরেও এমনটি ঘটেনি। কারণ দেশের আবহাওয়াই পঙ্গপালবিরোধী।
কৃষিসচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে ঘাসফড়িং আছে পঙ্গপাল তারই একটি জাত। ঘাসফড়িং একা থাকতে পছন্দ করে। আর পঙ্গপাল দলবেধে এগিয়ে যেতে যেতে ব্রিডিং (প্রজনন) করে। পঙ্গপাল মূলত মরুভূমির প্রাণী। এর উষ্ণ আবহওয়া ছাড়া জন্মায় না। গত ৫০ বছরেও বাংলাদেশে এর আক্রমণ হয়নি। এরা এখন যে এলাকায় আছে, আগেও সেখানে আক্রমণ হয়েছে। পাকিস্তান ও রাজস্থানে আগেও পঙ্গপালের আক্রমণ ঘটেছে। তখন কিন্তু বাংলাদেশে আক্রমণ করেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশে পঙ্গপালের আক্রমণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
কোনো কারণে দেশে পঙ্গপালের আক্রমণ দেখা দিলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকানোর অস্ত্র বিশ্বে নেই। খুব একটা কার্যকর কোনো পন্থাও নেই। তবে আমাদের আবহওয়াটাই পঙ্গপালবিরোধী। প্রকৃতিই আমাদের সে ব্যবস্থা করে রেখেছে।’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. নূর আহমেদ খন্দকার বলেন, ‘পঙ্গপাল নিয়ে আমরা আমাদের হেড কোয়ার্টার্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা বলছে বাংলাদেশে পঙ্গপাল নেই এবং আক্রমণের সম্ভাবনাও নেই।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহওয়াতে পঙ্গপাল দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আক্রমণ হবে না, তাও আবার শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। পঙ্গপাল গরম ও বালি পছন্দ করে। বাংলাদেশের রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকাও অনেকটা উত্তপ্ত। ভারত থেকে অনেক জিনিসই বাংলাদেশে আসে। তাই একেবারে বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়াও যায় না।’
গত দুই বছরে পতঙ্গ বা সাধারণ কীটনাশকে দেশে উল্লখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে তা স্বাভাবিকের চেয়েও কম। ফলে আর্মিওয়ার্মেও (অফ্রিকার দুর্ভিক্ষসৃষ্টিকারী ফসলখোকো পোকা) তেমন কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আসেনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কীটনাশক ও বালাই দমনে সব সময় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তারা কৃষককে নিয়ে কীটনাশক দমন করে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
দেশে বিদম্যান থাকা ফসলে কীটনাশক বা অন্যান্য পতঙ্গের আক্রমণ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ এবার পতঙ্গের আক্রমণের তেমন কোনো রেকর্ড নেই। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভুট্টায় সামান্য কিছু ফল আর্মিওয়ার্ম ছিল। শীতে তা কমে আসে। এখন নেই বললেই চলে। এক সপ্তাহ পর ভুট্টা উঠবে। ফল আর্মিওয়ার্মে ভুট্টার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে গমের ক্ষেত্রে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়।
এবার তেমন ব্লাস্ট দেখা যায়নি। ছিটেফোটা হয়েছে। যশোরের চৌগাছা ও ঝিনাইদহে খুবই অল্প মাত্রার ব্লাস্ট দেখা গেছে। তবে তা বড় কোনো ক্ষতির কারণ হয়নি। ধানের ক্ষেত্রে বাদামি গাছ ফড়িং দেখা দেয়। এটা হয় যখন ধান বের হয়। কেবল তো ধান গাছ লাগানো হয়েছে, ফলে এবার এর আক্রমণ হবে কি না এখনো বলা যাচ্ছে না। আরেকটি হয় মাজরা পোকা। এটি ধান লাগানোর সময় হয়।
পঙ্গপাল: পঙ্গপাল ঘাস ফড়িংয়ের একটি জাত। ঘাস ফড়িং একা থাকতে পছন্দ করলেও পঙ্গপাল দলবেঁধে উড়ে চলে। সাধারণত এক একটি ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না।
সম্প্রতিকালে অফ্রিকার কয়েকটি দেশের পর পাকিস্তান ও ভারতেও পঙ্গপালের আক্রমণ দেখা দেয়। আর চলতি বছরের প্রথম দিকে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পঙ্গপাল নিয়ে একটি সতর্কতামূলক মানচিত্র প্রকাশ করে। সেখানে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া ছাড়াও সুদান, কেনিয়া, সৌদি আরব, ইরান ও ওমানকে পঙ্গপাল আক্রান্ত দেশ হিসাবে দেখানো হয়।
পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশের পাকিস্তান ও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এর তীব্র আক্রমণের চিত্র দেখানো হয়। এমন প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও পঙ্গপালের আক্রমণ ঘটতে পারে এমন আশঙ্কার কথা আলোচনায় আসে। তবে এফএও ও দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে বাংলাদেশ পঙ্গপালের আক্রমণের ঝুঁকিতে নেই।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর