কোভিট-১৯! পুরো বিশ্বে এক আতঙ্কের নাম। অদৃশ্য এই ভাইরাসের কাছে পরাস্থ গোটা পৃথিবীর মানুষ। থমকে দিয়েছে যোগাযোগ, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সকল কিছু। জনবহুল বাংলাদেশে করোনা সংক্রামণের তাগিদে গত ১৭মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রথম ধাপে ৩১ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও দেশে করোনার সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়াতে ধাপে-ধাপে বাড়ানো হয়েছে ছুটি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে সকল শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জটের কথা মাথায় রেখে ও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনলাইনে ক্লাস শুরুও করেছে। ইউজিসির এমন সিদ্ধান্তে কি ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দৈনিক আজকের বিজনেস বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিবেদন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের নিশাত আনজুম জানান, ইতিমধ্যে তিনি অনলাইনে দুটো ক্লাস করেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মনে করেন, অনলাইনে ক্লাস করা খুব বেশী ফলপ্রসু হবে না। ইতিমধ্যে তাদের যে ক্লাস হয়েছে সেখানে উপস্থিতির পরিমাণ ছিলো খুবই নগন্য।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মোসাদ্দেক বিল্লাহ বলেন, দেশে অনলাইন ক্লাস করার জন্য যে নেট স্পিড দরকার তা একদমই নেই। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য প্রচুর মেগাবাইটের খরচ বহন করা সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব। অনলাইনে লাইভ ক্লাস করার জন্য একটা ভালো ক্যামেরা সম্পন্ন এন্ড্রয়েড ফোন দরকার যা সবার নেই, এছাড়া সাধারণ ক্লাসে যেরকম পড়াশোনার পরিবেশ পাওয়া যায়, শিক্ষককে প্রশ্ন করা, সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করা, যা অনলাইন লাইভ ক্লাসে সম্ভব নয়। ফলে সামগ্রিক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অনলাইন ক্লাসের প্রক্রিয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের জাকিয়া সুলতানা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন সবাই নিজ বাসায় অবস্থান করছে। শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ। যার ফলে শিক্ষার্থীদের এখন মুখোমুখি হতে হবে সেশনজটের। এদিকে ইউজিসি অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে। সেখানে ওয়াইফাই তো দূরের কথা অনেক সময় নেটওয়ার্কই পাওয়া যায় না। আবার অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও ইন্টারনেট সেবা দুর্বল। সুতরাং আদৌ তা দিয়ে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব কি না প্রশ্ন থেকে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহেদ ইমাম শুভ জানান, যেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সরাসরি ক্লাসেই অংশগ্রহণ করেনা সেখানে অনলাইন ক্লাসে থাকবে সেটা অকল্পনীয়। আর মূল সমস্যা বলতে নেটওয়ার্কের সমস্যাই মূল, তাছাড়া নেট খরচটাও বেশী থাকায় ইউজিসির এমন উদ্যোগ কতটা কার্যকরী হবে সেটা বোধগম্য নয়।
অনলাইন ক্লাস চালু নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ আবু সাহেব। তার মতে দেশে শিক্ষার মান ও গুণগত দিক বজায় রাখতে এবং সেশনজটের মতো সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীদের রেহাই পেতে কার্যকরী পদক্ষেপ। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের সেবার মান খুব খারাপ এবং ব্যয়বহুল। অনলাইন ক্লাস করতে যে ইন্টারনেটের প্রয়োজন সেটাই গ্রামাঞ্চলের গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য এক প্রধান সমস্যা। যদি ইন্টারনেট সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে অনেকটা উপকৃত হবে ।
ইউজিসি কর্তৃক অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা ফলপ্রসু হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোপ্রকার সুফল বয়ে আনবে না বরং এটা একপ্রকার বিলাসিতার ন্যায় বলে মনে করছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোসাব্বির হোসাইন। তিনি জানান , সারাদেশে ৪জি চালু হলেও দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তার খুব বেশী প্রভাব নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সাধারণত পড়ালেখা করে তাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত, নিম্ন -মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। করোনাকালীন এ সময়ে তাদের নিজস্ব ও পরিবারের উপার্জনের পথ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেটের মূল্য নিতান্তই কম নয় যার ফলে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করতে যাওয়া বিষয়টি ‘মরার উপর খরার ঘা’র মতোই হবে।
করোনা ভাইরাসে মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের আশঙ্কায় শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মতামত অনুযায়ী বলা যায়, শহরের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ থাকলেও গ্রামের শিক্ষার্থীদের বাঁধা হয়ে দাড়াবে নেটওয়ার্ক। তাছাড়া ক্লাস করার জন্য প্রচুর মেগাবাইটের খরচ বহন করা সকল শিক্ষার্থীর পক্ষে অসম্ভব। আর ইন্টারনেটে ক্লাস চালু করলে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে ধারণা তাদের। যদি ইন্টারনেট সুবিধা শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে অনেকটা উপকৃত হবে তাছাড়া অনলাইনে ক্লাস করতে যাওয়া বিষয়টি ‘মরার উপর খরার ঘা’র মতোই হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক




















