০২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বেড়েছে অনলাইন শপিং প্রতারণা

করোনার কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে কেনাকাটা। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক মেতেছে অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্ক, পিপিই, গ্লাভসের চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।

জানা যায়, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেই প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে অধিকাংশ মানুষ। এছাড় পণ্য ডেলিভারির সময়ও প্রতারকের পাতা ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ক্রেতারা। আবার অবিশ্বাস্য রকম মূল্য হ্রাসের ঘোষণা দিয়ে ‘আর মাত্র ৩টি ফোন সেট বাকি আছে’ এরকম বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে প্রলুব্ধ করছে ক্রেতাদের।

ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নির্দিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে ডেলিভারি নেয়ার জন্য বলা হয়। পণ্য ডেলিভারি নেয়ার পর ক্রেতা দেখতে পান তাকে অন্য কোন পণ্য কিংবা নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে। ক্রেতা পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বলা হয়, ‘এ প্যাকেজের সাথে রিটার্ন পলিসি না থাকায় রিটার্ন নেয়া সম্ভব নয়।’ কিংবা এ অবস্থায় বিক্রেতাকে ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখা যায় তাকে আগেই ব্লক করে দেয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেলের মত বড় অঙ্কের অর্থের পণ্য কেনা-বেচার সময় ঘটে আরো বড় প্রতারণা। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র অবিশ্বাস্য মূল্য ছাড় দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। দেড় লাখ টাকার মটরসাইকেল তারা অফার করে ৮০ হাজার টাকা। বলা হয় সারাসরি মটরসাইকেল দেখে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দ হলে সেখান থেকেই মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা হবে। প্রি-ইনস্টলমেন্ট মাত্র ৫ হাজার টাকা। এরকম বিজ্ঞাপনে সাড়া দিলে ঘটতে পারে দুই রকম ঘটনা। টাকা দিলেই ক্রেতাকে হয় ব্লক করে দেয়া হবে। অথবা টাকা দেবার পর সরাসরি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলা হয়। টাকা নিয়ে সেখানে গেলে ক্রেতা শিকার হন ছিনতাইয়ের।

প্রতারণা চলছে স্ক্রিল, নিটেলার, বিটকয়েন কেনার ক্ষেত্রেও। এসব সাইটেও আগে পেমেন্ট করে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

সিআইডি আরো পরামর্শ দিয়েছে অনলাইন প্লাটফরমের মাধ্যমে কেনা-বেচা না করতে। এ ধরনের প্লাটফরমে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা ক্রেতা/বিক্রেতার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করা হয় না। ডিল হয় সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। কোনো ক্রেতা প্রতারিত হলে এ প্লাটফরমের কিছু করার থাকে না।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার প্রতারক পেজগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতারকরা তাদের পেজগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন কাস্টমারদের পজেটিভ রিভিউর স্কিনশট দেয়। তারা বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে ভালো ভালো রিভিউ দিয়ে রাখে তাদের সাইটে।

তাদের পণ্য মূল্য বাজারের একই পণ্যের তুলনায় থাকে অবিশ্বাস্যরকম কম। এসব পেজের বিজ্ঞাপন অন্য কোন পেজ থেকে কপি করা থাকে। যা নেটে সার্স করলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা আগে টাকা দিতে বলে। এসব পেজগুলোর কোনো শোরুম থাকে না বা থাকলেও তা হয় ভুয়া।

এসব পেজগুলোর লাইকের সংখ্যা বেশ কম হয়। তবে বেশি লাইক দেখেই সেটিকে নির্ভরযোগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এমন অনেক পেজ আছে যা তৈরি হয়েছিল কোনো নামকরা মডেলের ফ্যান ক্লাব হিসেবে। ফলে দ্রুতই সেটির লাইকের সংখ্যা বেড়ে লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে রাতারাতি ওই পেজের নাম ও ছবি চেঞ্জ করে তা কোনো প্রোডাক্টের মার্কেটপ্লেসে রূপান্তর করা হয়।

অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ প্রসঙ্গে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদুল হাসান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, করোনার এ সময়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জাতীয় সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রির সাইটগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় সন্দেহজনক এরকম সাইটের এডমিনদের সতর্ক করা হচ্ছে। আবার অতি ক্ষতিকর সাইটগুলোকে বন্ধ করা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থাও। তিনি আরো বলেন এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আগে টাকা না দেয়া। দ্বিতীয়ত রিটার্ন পলিসি না থাকলে অর্ডার না করা। কুরিয়ার থেকে পণ্য রিসিভ করেই সঙ্গে সঙ্গে তা চেক করা। যে পেজ থেকে পণ্য কেনা হচ্ছে সে পেজের সব রিভিউ পড়ে দেখা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খাটানো। যে দামে পণ্য অফার করা হচ্ছে সত্যিই ওই দামে সেই পণ্য বিক্রি করা সম্ভব কিনা তা বিবেচনা করা।

প্রতারিত হলে চুপচাপ না থেকে সিআইডির সাইবার পুলিশকে ১৭৩০-৩৩৬৪৩১ নম্বরে অবগত করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ

জনপ্রিয়

বেড়েছে অনলাইন শপিং প্রতারণা

প্রকাশিত : ০৮:০৫:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ জুন ২০২০

করোনার কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অনলাইনে কেনাকাটা। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির প্রতারক মেতেছে অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাস্ক, পিপিই, গ্লাভসের চাহিদা বেশি থাকায় এসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার।

জানা যায়, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেই প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে অধিকাংশ মানুষ। এছাড় পণ্য ডেলিভারির সময়ও প্রতারকের পাতা ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ক্রেতারা। আবার অবিশ্বাস্য রকম মূল্য হ্রাসের ঘোষণা দিয়ে ‘আর মাত্র ৩টি ফোন সেট বাকি আছে’ এরকম বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে প্রলুব্ধ করছে ক্রেতাদের।

ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে ক্রেতাকে নির্দিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে ডেলিভারি নেয়ার জন্য বলা হয়। পণ্য ডেলিভারি নেয়ার পর ক্রেতা দেখতে পান তাকে অন্য কোন পণ্য কিংবা নিম্নমানের পণ্য দেয়া হয়েছে। ক্রেতা পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বলা হয়, ‘এ প্যাকেজের সাথে রিটার্ন পলিসি না থাকায় রিটার্ন নেয়া সম্ভব নয়।’ কিংবা এ অবস্থায় বিক্রেতাকে ফেসবুকে নক করতে গিয়ে দেখা যায় তাকে আগেই ব্লক করে দেয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেলের মত বড় অঙ্কের অর্থের পণ্য কেনা-বেচার সময় ঘটে আরো বড় প্রতারণা। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার সূত্রে জানা যায়, এ ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র অবিশ্বাস্য মূল্য ছাড় দিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। দেড় লাখ টাকার মটরসাইকেল তারা অফার করে ৮০ হাজার টাকা। বলা হয় সারাসরি মটরসাইকেল দেখে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। পছন্দ হলে সেখান থেকেই মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা হবে। প্রি-ইনস্টলমেন্ট মাত্র ৫ হাজার টাকা। এরকম বিজ্ঞাপনে সাড়া দিলে ঘটতে পারে দুই রকম ঘটনা। টাকা দিলেই ক্রেতাকে হয় ব্লক করে দেয়া হবে। অথবা টাকা দেবার পর সরাসরি ক্রেতাকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বলা হয়। টাকা নিয়ে সেখানে গেলে ক্রেতা শিকার হন ছিনতাইয়ের।

প্রতারণা চলছে স্ক্রিল, নিটেলার, বিটকয়েন কেনার ক্ষেত্রেও। এসব সাইটেও আগে পেমেন্ট করে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

সিআইডি আরো পরামর্শ দিয়েছে অনলাইন প্লাটফরমের মাধ্যমে কেনা-বেচা না করতে। এ ধরনের প্লাটফরমে প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বা ক্রেতা/বিক্রেতার আইডেন্টিটি ভেরিফাই করা হয় না। ডিল হয় সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। কোনো ক্রেতা প্রতারিত হলে এ প্লাটফরমের কিছু করার থাকে না।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার প্রতারক পেজগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতারকরা তাদের পেজগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন কাস্টমারদের পজেটিভ রিভিউর স্কিনশট দেয়। তারা বিভিন্ন ফেইক আইডি থেকে ভালো ভালো রিভিউ দিয়ে রাখে তাদের সাইটে।

তাদের পণ্য মূল্য বাজারের একই পণ্যের তুলনায় থাকে অবিশ্বাস্যরকম কম। এসব পেজের বিজ্ঞাপন অন্য কোন পেজ থেকে কপি করা থাকে। যা নেটে সার্স করলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই তারা আগে টাকা দিতে বলে। এসব পেজগুলোর কোনো শোরুম থাকে না বা থাকলেও তা হয় ভুয়া।

এসব পেজগুলোর লাইকের সংখ্যা বেশ কম হয়। তবে বেশি লাইক দেখেই সেটিকে নির্ভরযোগ্য ভাবার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এমন অনেক পেজ আছে যা তৈরি হয়েছিল কোনো নামকরা মডেলের ফ্যান ক্লাব হিসেবে। ফলে দ্রুতই সেটির লাইকের সংখ্যা বেড়ে লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরে রাতারাতি ওই পেজের নাম ও ছবি চেঞ্জ করে তা কোনো প্রোডাক্টের মার্কেটপ্লেসে রূপান্তর করা হয়।

অনলাইনে কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ প্রসঙ্গে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাসুদুল হাসান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, করোনার এ সময়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জাতীয় সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতারণা বেশি হচ্ছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রির সাইটগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেক সময় সন্দেহজনক এরকম সাইটের এডমিনদের সতর্ক করা হচ্ছে। আবার অতি ক্ষতিকর সাইটগুলোকে বন্ধ করা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থাও। তিনি আরো বলেন এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আগে টাকা না দেয়া। দ্বিতীয়ত রিটার্ন পলিসি না থাকলে অর্ডার না করা। কুরিয়ার থেকে পণ্য রিসিভ করেই সঙ্গে সঙ্গে তা চেক করা। যে পেজ থেকে পণ্য কেনা হচ্ছে সে পেজের সব রিভিউ পড়ে দেখা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খাটানো। যে দামে পণ্য অফার করা হচ্ছে সত্যিই ওই দামে সেই পণ্য বিক্রি করা সম্ভব কিনা তা বিবেচনা করা।

প্রতারিত হলে চুপচাপ না থেকে সিআইডির সাইবার পুলিশকে ১৭৩০-৩৩৬৪৩১ নম্বরে অবগত করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ