১০:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন এখন চিকিৎসাধীন

১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন এখন চিকিৎসাধীন

সোমবার লঞ্চডুবির ঘটনায় ১৩ ঘণ্টা পরে জীবিত উদ্ধার সুমন বেপারির বেঁচে থাকার ঘটনা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। উদ্ধারের খবর প্রচারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন ‘সুমন’।

যারা ঘটনাস্থলে দিনভর প্রতিবেদনের কাজে ছিলেন সেই সাংবাদিকরা মিরাকলের সংবাদ দিতে দিতেই সন্দেহ দানা বাধে ফেসবুকের স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে- কীভাবে পানির নিচে ১৩ ঘণ্টা জীবিত থাকা সম্ভব। কেউ বলছেন, এটা মিরাকল ছাড়া কিছু নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা কেবল মিরাকলের বিষয় নয়। এটা সায়েন্স। নৌযান ডুবে গেলে সেই যানের অবস্থানগত কারণে এয়ার পকেট তৈরি হয়, সেখানে কেউ আটকা পড়লে তিনি সহজেই দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারেন। সেটা একদিনও হতে পারে। এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।

কোথায় ছিলেন সে সময় সুমন? বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারি মঙ্গলবার (৩০ জুন) হাসপাতালের বেডে বসে দুর্ঘটনা মুহূর্তের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় আমার ঘুম ভাঙে। শুধু বুঝতে পারলাম লঞ্চটি ধাক্কা খাইলো। আর কিছু খেয়াল নাই। কীসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায়া ছিলাম রড ধইরা।’ সুমন এখন চিকিৎসাধীন, এখনও সেই সময়টাকে ব্যাখ্যা করতে মানসিকভাবে সক্ষম হয়ে ওঠেননি তিনি।

সুমনের বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলো একমাত্র তিনিই একসময় ভালো করে বলতে পারবেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিজ্ঞানে এভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষণ হাজির করেন তারা।

যত দ্রুত লঞ্চ ডুববে ভেতরে এয়ার পকেট তৈরির সম্ভাবনা তত বেশি থাকে উল্লেখ করে নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রাশেদ তানভীর বলেন, সুমনের বেঁচে থাকার গল্প আমরা তার কাছ থেকে জানতে পারবো। কিন্তু এটা সম্ভব না এভাবে বলা যাবে না। বিষয়টা সম্ভব। যখন কোনও লঞ্চ ধীরে ধীরে ডুবে তখন এয়ার পকেট হয় না। কিন্তু যখন কোনও যান মুহূর্তে ডুবে যায় তখন এয়ার পকেট তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে ওই পকেটে যদি কেউ স্থান নেন, তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টার। এই লঞ্চটি মাত্র কুড়ি সেকেন্ডের মতো সময় নিয়েছে ডুবতে। ফলে সেখানে এয়ার পকেট তৈরি হতে পারে এবং সুমন সেখানে অবস্থান করে বেঁচে থাকতেও পারেন।

প্রত্যেকটা ঘটনা ইউনিক উল্লেখ করে নৌ প্রকৌশলী ওমর এস আরেফিন বলেন, ‘স্পষ্ট করে এই ঘটনায় কী হয়েছিল বলা যাবে না। তবে যদি নৌযান উল্টে যায় তাহলে বাতাসটা বের হতে পারে না। আপনি হাঁড়িতে পানি দেন, সে সময় বাতাস ঢুকে গেলে কিছু অক্সিজেন রয়ে যায়, ফলে তার মধ্যে কোনও প্রাণী যদি থাকে সেটা বেঁচে যাবে। এটা পপুলার সায়েন্স। উনি কী পজিশনে ছিলেন সেটাই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। পানির ভেতরে শ্বাস নিয়ে টিকে থাকার কোনও কারণ নেই।’

কেমন আছেন সুমন বেপারি? স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা এম এ সাত্তার সরকার জানান, সুমনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এখনও। তিনি স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন, কথাবার্তাও বলছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে বেঁচে থাকা সম্ভব। যদি তিনি কোনও এয়ারটাইট রুমের মধ্যে থাকেন, যেখানে পানি ঢোকেনি এবং এয়ার পকেট সৃষ্টির মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ সচল থাকে।

এক্ষেত্রে পানি থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ব্যক্তির ভাষ্য জানা খুব জরুরি বলে মনে করেন শাকিল নেওয়াজ। তিনি নিশ্চিতভাবে এয়ার পকেট সৃষ্টি হয়েছে এমন কোনও স্থানে আটকা পড়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, অতীতেও এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। দীর্ঘ সময় পর পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভবন ধসে ভ্যাকুয়াম কোনও ঘরে ২৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার নজির রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

জনপ্রিয়

ফরিদপুরের নির্মাণ শ্রমিকের হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ধর্মমন্ত্রীর

১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন এখন চিকিৎসাধীন

প্রকাশিত : ০৮:২০:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০

সোমবার লঞ্চডুবির ঘটনায় ১৩ ঘণ্টা পরে জীবিত উদ্ধার সুমন বেপারির বেঁচে থাকার ঘটনা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। উদ্ধারের খবর প্রচারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন ‘সুমন’।

যারা ঘটনাস্থলে দিনভর প্রতিবেদনের কাজে ছিলেন সেই সাংবাদিকরা মিরাকলের সংবাদ দিতে দিতেই সন্দেহ দানা বাধে ফেসবুকের স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে- কীভাবে পানির নিচে ১৩ ঘণ্টা জীবিত থাকা সম্ভব। কেউ বলছেন, এটা মিরাকল ছাড়া কিছু নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা কেবল মিরাকলের বিষয় নয়। এটা সায়েন্স। নৌযান ডুবে গেলে সেই যানের অবস্থানগত কারণে এয়ার পকেট তৈরি হয়, সেখানে কেউ আটকা পড়লে তিনি সহজেই দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারেন। সেটা একদিনও হতে পারে। এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।

কোথায় ছিলেন সে সময় সুমন? বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন বেপারি মঙ্গলবার (৩০ জুন) হাসপাতালের বেডে বসে দুর্ঘটনা মুহূর্তের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় আমার ঘুম ভাঙে। শুধু বুঝতে পারলাম লঞ্চটি ধাক্কা খাইলো। আর কিছু খেয়াল নাই। কীসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায়া ছিলাম রড ধইরা।’ সুমন এখন চিকিৎসাধীন, এখনও সেই সময়টাকে ব্যাখ্যা করতে মানসিকভাবে সক্ষম হয়ে ওঠেননি তিনি।

সুমনের বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলো একমাত্র তিনিই একসময় ভালো করে বলতে পারবেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বিজ্ঞানে এভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষণ হাজির করেন তারা।

যত দ্রুত লঞ্চ ডুববে ভেতরে এয়ার পকেট তৈরির সম্ভাবনা তত বেশি থাকে উল্লেখ করে নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রাশেদ তানভীর বলেন, সুমনের বেঁচে থাকার গল্প আমরা তার কাছ থেকে জানতে পারবো। কিন্তু এটা সম্ভব না এভাবে বলা যাবে না। বিষয়টা সম্ভব। যখন কোনও লঞ্চ ধীরে ধীরে ডুবে তখন এয়ার পকেট হয় না। কিন্তু যখন কোনও যান মুহূর্তে ডুবে যায় তখন এয়ার পকেট তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে ওই পকেটে যদি কেউ স্থান নেন, তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টার। এই লঞ্চটি মাত্র কুড়ি সেকেন্ডের মতো সময় নিয়েছে ডুবতে। ফলে সেখানে এয়ার পকেট তৈরি হতে পারে এবং সুমন সেখানে অবস্থান করে বেঁচে থাকতেও পারেন।

প্রত্যেকটা ঘটনা ইউনিক উল্লেখ করে নৌ প্রকৌশলী ওমর এস আরেফিন বলেন, ‘স্পষ্ট করে এই ঘটনায় কী হয়েছিল বলা যাবে না। তবে যদি নৌযান উল্টে যায় তাহলে বাতাসটা বের হতে পারে না। আপনি হাঁড়িতে পানি দেন, সে সময় বাতাস ঢুকে গেলে কিছু অক্সিজেন রয়ে যায়, ফলে তার মধ্যে কোনও প্রাণী যদি থাকে সেটা বেঁচে যাবে। এটা পপুলার সায়েন্স। উনি কী পজিশনে ছিলেন সেটাই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। পানির ভেতরে শ্বাস নিয়ে টিকে থাকার কোনও কারণ নেই।’

কেমন আছেন সুমন বেপারি? স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা এম এ সাত্তার সরকার জানান, সুমনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে এখনও। তিনি স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন, কথাবার্তাও বলছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ১৩ ঘণ্টা পানির নিচে বেঁচে থাকা সম্ভব। যদি তিনি কোনও এয়ারটাইট রুমের মধ্যে থাকেন, যেখানে পানি ঢোকেনি এবং এয়ার পকেট সৃষ্টির মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ সচল থাকে।

এক্ষেত্রে পানি থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ব্যক্তির ভাষ্য জানা খুব জরুরি বলে মনে করেন শাকিল নেওয়াজ। তিনি নিশ্চিতভাবে এয়ার পকেট সৃষ্টি হয়েছে এমন কোনও স্থানে আটকা পড়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, অতীতেও এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। দীর্ঘ সময় পর পানি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভবন ধসে ভ্যাকুয়াম কোনও ঘরে ২৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার নজির রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ