আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মাঠের ক্ষেতে বা আইলে কৃষকের খাবার-দাবার। কাজের ফাঁকে সকালে নাস্তা আর দুপুরের খাবার সারেন তারা। এই প্রথা চলে আসছে আদিকাল থেকেই। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই চিত্রগুলো।
ভোর বা সকালে কৃষক ও শ্রমিক চলে যান মাঠের ক্ষেতের কাজে। কাঁধে থাকে লাঙ্গল-জোয়াল, মই। ধান পাকার পর কারো হাতে কাস্তে বা হাসুয়া। কেউবা কোদাল হাতে মাঠে চলে যায়। রোদ, ঝড়-বৃষ্টিতে একমনে কাজ করেন তারা। সকালে বাড়ি ছাড়েন বলে নাস্তা ও দুপুরের খাবারটি মাঠে সারেন তারা।
কৃষাণ বধূরা গামছায় বেঁধে নাস্তা নেন। কোনো সময় দুপুরে খাবার পোটলায় বেঁধে প্রিয় মানুষটির খাবার নিয়ে যান। সঙ্গে থাকে বাসি তরকারি, ভর্তা, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ। তরকারি বাসি কিংবা টাটকা এবং পদ যাই থাক না কেন, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ থাকতেই হবে। কর্মজীবী মানুষগুলো অপেক্ষায় থাকেন খাবারের। অবশেষে আসে সেই মহেদ্রক্ষণ। কাজের ফাঁকে মাঠের ক্ষেতে বা আইলে কিংবা উঁচু জায়গায় বসে খাবার খান। খাওয়া-দাওয়া শেষে কৃষাণী বধূ বাড়ির পানে ফিরেন।
রংপুর জেলার সব উপজেলায় এই প্রথা চলে আসছে আদিকাল থেকে।মজার ব্যাপার হলো এ জেলার একটি দোলার নামকরণ রয়েছে ‘ভাতার মারির পাথার অর্থাৎ স্বামী মারার দোলা’। প্রচলিত আছে, হাল নিয়ে স্বামী ওই দোলায় যান। একসময় পানি তৃষ্ণা লাগলে স্ত্রীকে পানি আনার জন্য বলেন। কিন্ত দোলাটি এতই বড় যে, পানি নিয়ে যেতে যেতে স্বামী প্রাণ হারান। ফলে ওই দোলাটির নামকরণ করা হয়েছে ভাতার মারির পাথার।
কথা হয় ওই দোলায় কাজ করা শ্রমিক জয়নালের (৪৫) সঙ্গে। জয়নাল বলেন, আমি অন্যের জমিতে কাজ করছি। আসার সময় সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার আনার জন্য স্ত্রী হাজেরাকে বলেছি। আমার একটি সাত বছরের সন্তান রয়েছে। খাবার এলে পরিবারের সবাই মিলে মাঠের ক্ষেতে বা আইলে বসে খাবার খেয়ে নেবো। এর মধ্যে অন্যরকম মজাই আছে যা কাউকে বোঝানো যাবে না।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কারণে লাঙ্গল-জোয়াল কিছুটা কমেছে। মাঠে কৃষক ও শ্রমিকদের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের রেওয়াজ আগের মতো আর চোখে পরে না। এই জনপদে প্যালকা ও সিঁদুল খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন ছিল একসময়।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা মাজেদা বেগম পিংকি বলেন, রংপুরে স্বামী মারার দোলার চিত্র ও গ্রামীণ ঐতিহ্য হচ্ছে মাঠে-ঘাটে কৃষক ও শ্রমিকের খাবার-দাবার।তবে এই প্রথা এখন আর আগের মতো চালু নেই। অনেক প্রচলিত শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। এসব ভাষা সংরক্ষণের জন্য ও এলাকার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছিল। নতুন প্রজন্ম এই বইটি পড়ে অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর


























