১২:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গবি শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা

করোনা সংকটে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর নির্দেশনা মেনে এপ্রিল থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। এর মাঝে হাতেগোণা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তাদের একটি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। গত ১ জুলাই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, জানার চেষ্টা করেছেন দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশের প্রতিনিধি অনিক আহমেদ।

দেশের ক্রান্তিকালে সবকিছু প্রায় স্থবির অবস্থায় ছিল। জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্টের দিকে যাচ্ছিলো। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে স্বভাবতই হতাশায় আচ্ছন্ন ছিলাম। সেশন জটের আশঙ্কা যখন মাথায় ভালোমত চেপে বসে তখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দিল অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হবে। তৎক্ষণাৎ বেশ খুশি হলেও পরক্ষণে মনে হলো নতুন এই পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে খাপ খাইয়ে নেয়া কতটা সহজ হবে!

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, অল্প-বিস্তর সমস্যা হলেও সেটা মোটেও তীক্ততার পর্যায়ে পড়ে না। অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা ভার্চুয়াল জগৎ সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। স্মার্টফোনের ব্যবহার যে শুধুমাত্র ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপেই সীমাবদ্ধ নয়, অনলাইন পরীক্ষা সেটা জানান দিয়ে গেল। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ত্যাগী মনোভাব অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্তির দাবিদার। তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরনা হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করেছে। বাসায় বসে আরামে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে গেলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরীক্ষা দিতে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও কিছু বন্ধুদের এলাকায় দুর্বল ইন্টারনেট সেবা, চড়ামূল্য বেশ ভুগিয়েছে। তবে সবকিছুর পরেও সময় যে থেমে থাকেনা, এই পরীক্ষা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

কথা সাহা
ফার্মেসী বিভাগ (২য় বর্ষ)

পরীক্ষার কথা স্মরণ করলেই মনে পড়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তবে অনলাইনে পরীক্ষা হলো নতুন অভিজ্ঞতা। সরাসরি পরীক্ষার হলের যে পরিবেশ, তা অনলাইনে পাওয়া যায় না। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, সরাসরি পরীক্ষার হলে আমাদের কোন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহার করতে দেয়া হয়না। কিন্তু অনলাইন পরীক্ষায় ইলেকট্রনিকস সামগ্রীই প্রধান দরকারী জিনিস। পরীক্ষার হলে একে অন্যের সাথে কথা বলার সুযোগ না থাকলেও অনলাইনে সেই সুযোগ কিছুটা হলেও থাকে। তবে পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে সেই সুযোগ অনেকটা মূল্যহীন ছিল।

অনলাইনে নিজের মতো করে পরীক্ষা দিয়েছি, যা কোনো ধরাবাধা নিয়মে পড়ে না। আমাকে পরীক্ষায় তেমন কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। এই পরীক্ষার বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পিছিয়ে ছিলেন, তাঁরা অনেকটা আয়ত্ত করতে পেরেছেন। পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মূল্যায়ন করা। তবে অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সিদ্ধান্তটি খারাপ ছিল না। সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সময়োপযোগী ছিল।

জুয়েল মন্ডল
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (১ম বর্ষ)

সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিভাগে অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানের করোনা পরিস্থিতির জন্য বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা মেনে দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদেরও অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। আমরা যাতে পিছিয়ে না পড়ি, সেজন্য ১ জুলাই, ২০২০ তারিখ থেকে আমাদের অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে আমরা অনেকেই প্রাথমিকভাবে বিচলিত হয়েছি। কারণ করোনা পরিস্থিতির জন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেওয়া হলো তখন অনেকেই বাড়িতে যাওয়ার সময় শীট, বই, নোট কিছুই নিয়ে আসেনি।

আমরা কখনো কেউ কল্পনাই করতে পারেনি অনলাইনে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে আমাদের শিক্ষকদের সহায়তায় অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে অনেকটা ছাড় দিয়েছেন। যেমন প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার উত্তরপত্র ইমেইল করার জন্য সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে আমাদের ব্যাচের সকলের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বাসায় বসে এভাবেও যে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়, সেটা সত্যিই অভাবনীয় ছিল। তবে এটার মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।

পূজা কর্মকার
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ (২য় বর্ষ)

অনলাইন পরীক্ষা, নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমধর্মী একটি পরীক্ষা। কখনো কল্পনাও করিনি জীবনে এমন একটি পরীক্ষার স্বাক্ষী হবো। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছি। কারণ এতে করে সেশন জট বন্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় একটা দীর্ঘ বিরতির সৃষ্টি হয়েছিল। ইউজিসির নির্দেশনা মেনে অনলাইন ক্লাস শুরু করা শিক্ষার্থীদের আবার ধারাবাহিকভাবে পড়ালেখাতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এরপর ক্লাস শেষে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়।

সকল শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে প্রশাসন পরীক্ষা পদ্ধতি যথাসম্ভব সহজ করেছে, যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। অপরপক্ষে নেতিবাচক বেশ কিছু দিকও রয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে অবস্থানরত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যাদের নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট ডাটা প্রাপ্তিতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। সর্বোপরি, করোনা পরিস্থিতিতে সকলে শতভাগ প্রস্তুত না হয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। যাইহোক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ক্যারিয়ার তথা সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে আমরা বিচলিত হলেও এখন ভালো লাগছে। পরীক্ষা শেষের পর এখন মনে হচ্ছে, নতুন অভিজ্ঞতার এই পরীক্ষা বেশ উপভোগ্য ছিল।

এএসএম সায়েম আহমেদ বাধন
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ (৪র্থ বর্ষ)

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটা খুব সুন্দর একটি স্বাক্ষরের প্রমাণ বহন করে। অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কারণেই আমাদের সেশনজট হয়নি।যার ফলে আমরা খুব ভালোমতই সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছি। একটি সেমিস্টার গ্যাপ মানে ছয় মাস পিছিয়ে যাওয়া। আর ছয় মাস পিছিয়ে যাওয়া মানে জীবনের অনেকটুকু পিছিয়ে যাওয়া। তাই কর্তৃপক্ষ সেটি না করে সময়ের মূল্য দিয়ে অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরীক্ষার আগে অনলাইনে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লাস হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে , ভাইভাও নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে মার্ক ডিস্ট্রিবিউশন দারুণ ছিল। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হইনি তাও না। প্রায়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা হয়েছে, অনেকেই দুর্বল ইন্টারনেট সেবার কারণে সময়মত এক্সাম পেপার সাবমিট করতে পারেনি। কিন্তু শিক্ষকরা সেগুলো বুঝেছেন এবং সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রেখেছেন। অনেকেই তাদের ঘরে ভালো নেটওয়ার্ক না পেয়ে অন্যত্র গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটা এক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা। আর জীবনে সব ধরণের অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এটাই যে, শত সমস্যা উপেক্ষা করেও আমরা অনলাইন পরীক্ষা দিয়েছি এবং ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা স্বাক্ষী হয়েছি, যা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মাহবুবা বিনতে মুজিব
অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ (৪র্থ বর্ষ)

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

জনপ্রিয়

গবি শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা

প্রকাশিত : ০৬:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০২০

করোনা সংকটে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর নির্দেশনা মেনে এপ্রিল থেকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। এর মাঝে হাতেগোণা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। তাদের একটি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। গত ১ জুলাই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, জানার চেষ্টা করেছেন দৈনিক বিজনেস বাংলাদেশের প্রতিনিধি অনিক আহমেদ।

দেশের ক্রান্তিকালে সবকিছু প্রায় স্থবির অবস্থায় ছিল। জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্টের দিকে যাচ্ছিলো। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে স্বভাবতই হতাশায় আচ্ছন্ন ছিলাম। সেশন জটের আশঙ্কা যখন মাথায় ভালোমত চেপে বসে তখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দিল অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হবে। তৎক্ষণাৎ বেশ খুশি হলেও পরক্ষণে মনে হলো নতুন এই পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে খাপ খাইয়ে নেয়া কতটা সহজ হবে!

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, অল্প-বিস্তর সমস্যা হলেও সেটা মোটেও তীক্ততার পর্যায়ে পড়ে না। অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা ভার্চুয়াল জগৎ সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞতা পেয়েছি। স্মার্টফোনের ব্যবহার যে শুধুমাত্র ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপেই সীমাবদ্ধ নয়, অনলাইন পরীক্ষা সেটা জানান দিয়ে গেল। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ত্যাগী মনোভাব অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্তির দাবিদার। তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরনা হতাশাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করেছে। বাসায় বসে আরামে পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে গেলাম। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরীক্ষা দিতে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও কিছু বন্ধুদের এলাকায় দুর্বল ইন্টারনেট সেবা, চড়ামূল্য বেশ ভুগিয়েছে। তবে সবকিছুর পরেও সময় যে থেমে থাকেনা, এই পরীক্ষা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

কথা সাহা
ফার্মেসী বিভাগ (২য় বর্ষ)

পরীক্ষার কথা স্মরণ করলেই মনে পড়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তবে অনলাইনে পরীক্ষা হলো নতুন অভিজ্ঞতা। সরাসরি পরীক্ষার হলের যে পরিবেশ, তা অনলাইনে পাওয়া যায় না। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, সরাসরি পরীক্ষার হলে আমাদের কোন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ব্যবহার করতে দেয়া হয়না। কিন্তু অনলাইন পরীক্ষায় ইলেকট্রনিকস সামগ্রীই প্রধান দরকারী জিনিস। পরীক্ষার হলে একে অন্যের সাথে কথা বলার সুযোগ না থাকলেও অনলাইনে সেই সুযোগ কিছুটা হলেও থাকে। তবে পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে সেই সুযোগ অনেকটা মূল্যহীন ছিল।

অনলাইনে নিজের মতো করে পরীক্ষা দিয়েছি, যা কোনো ধরাবাধা নিয়মে পড়ে না। আমাকে পরীক্ষায় তেমন কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। এই পরীক্ষার বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত জ্ঞানে পিছিয়ে ছিলেন, তাঁরা অনেকটা আয়ত্ত করতে পেরেছেন। পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মূল্যায়ন করা। তবে অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সিদ্ধান্তটি খারাপ ছিল না। সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের পিছিয়ে পড়তে হবে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সময়োপযোগী ছিল।

জুয়েল মন্ডল
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ (১ম বর্ষ)

সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল বিভাগে অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানের করোনা পরিস্থিতির জন্য বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা মেনে দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদেরও অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। আমরা যাতে পিছিয়ে না পড়ি, সেজন্য ১ জুলাই, ২০২০ তারিখ থেকে আমাদের অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে আমরা অনেকেই প্রাথমিকভাবে বিচলিত হয়েছি। কারণ করোনা পরিস্থিতির জন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দেওয়া হলো তখন অনেকেই বাড়িতে যাওয়ার সময় শীট, বই, নোট কিছুই নিয়ে আসেনি।

আমরা কখনো কেউ কল্পনাই করতে পারেনি অনলাইনে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে আমাদের শিক্ষকদের সহায়তায় অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে তাঁরা আমাদের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে অনেকটা ছাড় দিয়েছেন। যেমন প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার উত্তরপত্র ইমেইল করার জন্য সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে আমাদের ব্যাচের সকলের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বাসায় বসে এভাবেও যে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়, সেটা সত্যিই অভাবনীয় ছিল। তবে এটার মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।

পূজা কর্মকার
রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ (২য় বর্ষ)

অনলাইন পরীক্ষা, নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমধর্মী একটি পরীক্ষা। কখনো কল্পনাও করিনি জীবনে এমন একটি পরীক্ষার স্বাক্ষী হবো। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছি। কারণ এতে করে সেশন জট বন্ধ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় একটা দীর্ঘ বিরতির সৃষ্টি হয়েছিল। ইউজিসির নির্দেশনা মেনে অনলাইন ক্লাস শুরু করা শিক্ষার্থীদের আবার ধারাবাহিকভাবে পড়ালেখাতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এরপর ক্লাস শেষে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়।

সকল শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে প্রশাসন পরীক্ষা পদ্ধতি যথাসম্ভব সহজ করেছে, যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। অপরপক্ষে নেতিবাচক বেশ কিছু দিকও রয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে অবস্থানরত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যাদের নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট ডাটা প্রাপ্তিতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। সর্বোপরি, করোনা পরিস্থিতিতে সকলে শতভাগ প্রস্তুত না হয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। যাইহোক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ক্যারিয়ার তথা সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিকভাবে আমরা বিচলিত হলেও এখন ভালো লাগছে। পরীক্ষা শেষের পর এখন মনে হচ্ছে, নতুন অভিজ্ঞতার এই পরীক্ষা বেশ উপভোগ্য ছিল।

এএসএম সায়েম আহমেদ বাধন
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ (৪র্থ বর্ষ)

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটা খুব সুন্দর একটি স্বাক্ষরের প্রমাণ বহন করে। অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কারণেই আমাদের সেশনজট হয়নি।যার ফলে আমরা খুব ভালোমতই সেমিস্টার শেষ করতে পেরেছি। একটি সেমিস্টার গ্যাপ মানে ছয় মাস পিছিয়ে যাওয়া। আর ছয় মাস পিছিয়ে যাওয়া মানে জীবনের অনেকটুকু পিছিয়ে যাওয়া। তাই কর্তৃপক্ষ সেটি না করে সময়ের মূল্য দিয়ে অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরীক্ষার আগে অনলাইনে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লাস হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে , ভাইভাও নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিতে মার্ক ডিস্ট্রিবিউশন দারুণ ছিল। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে যে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হইনি তাও না। প্রায়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা হয়েছে, অনেকেই দুর্বল ইন্টারনেট সেবার কারণে সময়মত এক্সাম পেপার সাবমিট করতে পারেনি। কিন্তু শিক্ষকরা সেগুলো বুঝেছেন এবং সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রেখেছেন। অনেকেই তাদের ঘরে ভালো নেটওয়ার্ক না পেয়ে অন্যত্র গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটা এক ধরনের নতুন অভিজ্ঞতা। আর জীবনে সব ধরণের অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এটাই যে, শত সমস্যা উপেক্ষা করেও আমরা অনলাইন পরীক্ষা দিয়েছি এবং ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা স্বাক্ষী হয়েছি, যা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মাহবুবা বিনতে মুজিব
অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ (৪র্থ বর্ষ)

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর