চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে হতে পারে, এ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক গণমাধ্যমেও অক্টোবরের ৬-৯ তারিখের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হতে পারে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে ফলাফল প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
এমনকি যে বিষয়ের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়নি, সেগুলোর ফল কী উপায়ে তৈরি করা হবে, সেটা নিয়েও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি প্রস্তাবনা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তাতে এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে কবে নাগাদ ফল প্রকাশ হবে, তা নিয়ে অন্ধকারে খোদ বোর্ড চেয়ারম্যানরা।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, কবে ফল প্রকাশ করা হবে, এর কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। শুরুতে ৪০ দিনের মধ্যে আমরা ফল প্রস্তুতের কাজ শেষ করার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু কী উপায়ে বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর ফলাফল তৈরি করা হবে, সেটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ফল প্রকাশ কবে হবে, তা নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমাদের একটি প্রস্তাবনা পাঠানো আছে। সেটা অনুমোদন হয়ে এলে কতদিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে, এর ধারণা দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে তো কাজই শুরু হবে না। অনুমোদনের পর কাজ শুরু হবে। কাজ শুরুর পর ফল প্রকাশের তারিখ জানানো হবে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ বলেন, এবারের ফল কবে প্রকাশ হবে, সেই তারিখ সম্পর্কে আমি অবহিত নয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কাজ করছে। যতটুকু বলতে পারি যে, এবারের পরিস্থিতিটা যেহেতু ভিন্ন, সার্বিক দিক বিবেচনায় পরীক্ষার্থীদের জন্য যেটা মঙ্গলজনক, সেভাবে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডগুলো।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে ১৬ জুলাইয়ের পর এইচএসসির আর কোনো পরীক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাকি ছিল, তা বাতিলের দাবি তোলেন পরীক্ষার্থীরা।
টানা এক সপ্তাহের আন্দোলনের পর তারা ২০ আগস্ট সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান। তাদের আন্দোলনের মুখে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সেই হিসেবে পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার ২০ দিন পরও কীভাবে ফল তৈরি ও কবে প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। শিক্ষা বোর্ডগুলো যে প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে, সেটাও এখনো অনুমোদন হয়নি।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সূচি অনুযায়ী—১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তা বাতিল করা হয়।
যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এরমধ্যে রয়েছে আবশ্যক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) ও আইসিটি। বাকি ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (বিভাগভিত্তিক)।
সিলেট বোর্ড ছাড়া বাকি বোর্ডগুলোর আবশ্যক ছয়টি এবং কেউ কেউ বিভাগভিত্তিক একটি পরীক্ষাসহ ৭টি পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে কারও ছয়টি, কারও সাতটি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, যেগুলো সবই বিভাগভিত্তিক।
বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস