০৬:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নওগাঁয় মরিচ চাষিদের মুখে হাঁসি

নওগাঁয় চলতি মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়ে খুশি হেেচ্ছন মরিচ চাষিরা। মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা নিয়মিত মরিচ পরিচর্যায় করছেন। জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। তবে গত ১৫ দিন আগে টানা ৬ দিন বৃষ্টিতে জেলায় প্রায় ১শ’ ৪০ বিঘার (২০ হেক্টর) মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানের আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচ চাষিরা বেশি করে মরিচ উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামে বিক্রি করে আরো বেশি লাভবান হবেন এমনটাই আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে বদলগাছীতে ২শ’৬০ হেক্টর। আর নওগাঁ সদরে ২শ’৫০ হেক্টর এবং মহাদেবপুরে ২শ’২০ হেক্টর। জেলায় মরিচের (শুকনো) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১১শ’ মেট্রিকটন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করছে সংশ্লিষ্টরা।
মরিচ চাষিরা জানান, বর্ষা হলে মরিচ ভালো হয়, ফলনও ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাজার দর কিছুটা কম থাকলেও এখন প্রতি মণ কাঁচা মরিচ ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচ চাষে লাভ তুলনামূলক বেশি। সে কারণে কৃষকদের আগ্রহও বেশি। ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে গিয়ে উল্টো অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। এই লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক আস্তে আস্তে মরিচ ও সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষক যারা সাধারণত নিজেরা শ্রম দিতে পারেন, এমন কৃষকেরা ধান চাষ ছেড়ে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কৃষকরা যেন মরিচ আবাদে আর্থিক ক্ষতির শিকার না হয় এবং রোগ বালাই দমনে চাষিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এক বিঘা মরিচ চাষে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। মরিচ গাছ লাগানো প্রায় ৪৫-৫০ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো শুরু হয়। ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পরপর ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল, কীত্তিপুর, হাঁপানিয়া ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম সবচেয়ে মরিচ চাষ হয়ে থাকে। বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান রহমান জানান, কয়েকদিন আগে কয়েক দিনের মধ্যে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮ মণ কাঁচা মরিচ উঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত মরিচ উঠানো যায়।
গোবিন্দপুর গ্রামের রঘু সরকার, গফুর হোসেনসহ মরিচ চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। ভালো মরিচ উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া গেলে ১ লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। রোমজান মাসে প্রতি কেজি মরিচ পাইকারি ১শ’ ৬০ টাকা থেকে ১শ’ ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। এতে তাদের ভালো লাভ হয়েছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের খবির উদ্দিন জানান, তিনি ১০ কাটা জমিতে মরিচ চাষ করতে ১২ হাজার টাকা খরচ করেছেন। মাত্র ১১ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছেন। কিছুদিন আগে টানা ৬/৭ দিনের বৃষ্টিতে সব গাছ মরে গেছে। সেই জমিতে এখন শীতকালীন সবজি লাগানো জন্যে জমি চাষ করবো।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ কুমার জানান, জমিতে ধান চাষে ঝামেলা বেশি। সময় মতো পানি, সার, নিড়ানীসহ বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করছি। এতে ঝামেলা কম, লাভও বেশি। শুধু বিকাশই নন, গত কয়েক মৌসুম থেকে কৃষকরা মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উপজেলার সফাপুর, উত্তরগ্রাম, মহাদেবপুর সদর ও খাজুর ইউনিয়নের মাঠে এ বছর ব্যাপক হারে স্থানীয় বর্ষালী জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে।
সফাপুর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল বলেন, প্রতিবিঘা জমি থেকে ১০-১৫ দিন পরপর প্রায় ১০-১২ মণ হারে মরিচ উঠানো যায়। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ২ হাজার টাকা থেকে ২২শ’ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই মরিচ প্রতিমণ ৬হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, তার পাঁচ বিঘা আবাদি জমে রয়েছে। মরিচ চাষের জন্য এবার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেননি। বর্তমানে মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, রোগ বালাই যেন মরিচের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন কৃষক।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে মরিচের ভালো আবাদ হলেও কিছুদিন আগে ৬/৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে ২০ হেক্টর জমিতে মরিচের ক্ষতি হয়েছে। সেই সকল ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষক আগাম শীতকালীন ফসল আবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও জেলায় মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ হয় এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত দেওয়া হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

নওগাঁয় মরিচ চাষিদের মুখে হাঁসি

প্রকাশিত : ০৭:০৯:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২০

নওগাঁয় চলতি মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়ে খুশি হেেচ্ছন মরিচ চাষিরা। মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা নিয়মিত মরিচ পরিচর্যায় করছেন। জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। তবে গত ১৫ দিন আগে টানা ৬ দিন বৃষ্টিতে জেলায় প্রায় ১শ’ ৪০ বিঘার (২০ হেক্টর) মরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানের আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচ চাষিরা বেশি করে মরিচ উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি ভালো দামে বিক্রি করে আরো বেশি লাভবান হবেন এমনটাই আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে বদলগাছীতে ২শ’৬০ হেক্টর। আর নওগাঁ সদরে ২শ’৫০ হেক্টর এবং মহাদেবপুরে ২শ’২০ হেক্টর। জেলায় মরিচের (শুকনো) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১১শ’ মেট্রিকটন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করছে সংশ্লিষ্টরা।
মরিচ চাষিরা জানান, বর্ষা হলে মরিচ ভালো হয়, ফলনও ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাজার দর কিছুটা কম থাকলেও এখন প্রতি মণ কাঁচা মরিচ ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচ চাষে লাভ তুলনামূলক বেশি। সে কারণে কৃষকদের আগ্রহও বেশি। ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে গিয়ে উল্টো অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। এই লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক আস্তে আস্তে মরিচ ও সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষক যারা সাধারণত নিজেরা শ্রম দিতে পারেন, এমন কৃষকেরা ধান চাষ ছেড়ে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কৃষকরা যেন মরিচ আবাদে আর্থিক ক্ষতির শিকার না হয় এবং রোগ বালাই দমনে চাষিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এক বিঘা মরিচ চাষে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। মরিচ গাছ লাগানো প্রায় ৪৫-৫০ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো শুরু হয়। ৭ দিন থেকে ১৫ দিন পরপর ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল, কীত্তিপুর, হাঁপানিয়া ইউনিয়নে গ্রামের পর গ্রাম সবচেয়ে মরিচ চাষ হয়ে থাকে। বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান রহমান জানান, কয়েকদিন আগে কয়েক দিনের মধ্যে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮ মণ কাঁচা মরিচ উঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। ক্ষেত থেকে প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত মরিচ উঠানো যায়।
গোবিন্দপুর গ্রামের রঘু সরকার, গফুর হোসেনসহ মরিচ চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। ভালো মরিচ উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া গেলে ১ লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। রোমজান মাসে প্রতি কেজি মরিচ পাইকারি ১শ’ ৬০ টাকা থেকে ১শ’ ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। এতে তাদের ভালো লাভ হয়েছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের খবির উদ্দিন জানান, তিনি ১০ কাটা জমিতে মরিচ চাষ করতে ১২ হাজার টাকা খরচ করেছেন। মাত্র ১১ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পেরেছেন। কিছুদিন আগে টানা ৬/৭ দিনের বৃষ্টিতে সব গাছ মরে গেছে। সেই জমিতে এখন শীতকালীন সবজি লাগানো জন্যে জমি চাষ করবো।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ কুমার জানান, জমিতে ধান চাষে ঝামেলা বেশি। সময় মতো পানি, সার, নিড়ানীসহ বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করছি। এতে ঝামেলা কম, লাভও বেশি। শুধু বিকাশই নন, গত কয়েক মৌসুম থেকে কৃষকরা মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উপজেলার সফাপুর, উত্তরগ্রাম, মহাদেবপুর সদর ও খাজুর ইউনিয়নের মাঠে এ বছর ব্যাপক হারে স্থানীয় বর্ষালী জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে।
সফাপুর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল বলেন, প্রতিবিঘা জমি থেকে ১০-১৫ দিন পরপর প্রায় ১০-১২ মণ হারে মরিচ উঠানো যায়। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ২ হাজার টাকা থেকে ২২শ’ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই মরিচ প্রতিমণ ৬হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, তার পাঁচ বিঘা আবাদি জমে রয়েছে। মরিচ চাষের জন্য এবার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেননি। বর্তমানে মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, রোগ বালাই যেন মরিচের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন কৃষক।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে মরিচের ভালো আবাদ হলেও কিছুদিন আগে ৬/৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে ২০ হেক্টর জমিতে মরিচের ক্ষতি হয়েছে। সেই সকল ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষক আগাম শীতকালীন ফসল আবাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও জেলায় মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ হয় এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত দেওয়া হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ