সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ থেকে তুলে নিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি এম সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, সোমবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে মামলাটির ১ নম্বর আসামি এম সাইফুর রহমান এবং ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এসময় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে বিচারক তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যান্য আসামিদেরও আদালতে হাজিরের প্রক্রিয়া চলছে।
গতকাল সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক খেয়াঘাট এলাকা থেকে গণধর্ষণ ও অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি এম সাইফুর রহমানকে ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের মনতলা থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে সন্ধ্যায় এই মামলার আরেক আসামি মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯। কাছাকাছি সময়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে মামলার অন্যতম আসামি রবিউল হাসানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাত ১টার দিকে ফেঞ্জুগঞ্জের কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজন আহমদ (২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৯ এর একটি দল। সে ওই মামলাটির অজ্ঞাত আসামি। এসময় তাকে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করায় আইনুল ইসলাম নামে আরেকজনকেও আটক করা হয়। পরে রাতেই রাজন ও আইনুলকে সিলেট নিয়ে আসা হয়।
এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন ঘটনার শিকার ওই তরুণী। এ সময় আদালতে তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়।
ঘটনার পরদিনই ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে নগরীর শাহপরান থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৯ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এরা হলেন— এমসি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, এম সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম এবং তারেক আহমদ। এছাড়া বাকি তিন জনকে মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এদের মধ্যে রনির গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে, সাইফুরের বাড়ি বালাগঞ্জে, অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জে ও তারেকের বাড়ি জগন্নাথপুরে। এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের টিলাগড় এলাকায় স্বামীর সাথে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ওই তরুণী। তারা বেশ কিছুক্ষণ মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ ক্যাম্পাসে সময় কাটান।
অভিযুক্ত ৫-৬ জন ছাত্রলীগ কর্মী এসময় ওই তরুণীকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তার স্বামী প্রতিবাদ করলে ওই যুবকরা তাকে স্বামীকে মারধর শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ওই যুবকেরা এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে রেখে একটি কক্ষে চার যুবক ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মধ্যরাতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা এটি ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রথমদিকে গণমাধ্যমকর্মীরাও ঘটনার সংবাদ পাননি। এতে সময়ক্ষেপণ হলে অভিযুক্ত সকলেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এদের সকলেই ছাত্রাবাসে জুয়া ও মাদকের আসর বসাতো বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এছাড়া এরাই টিলাগড় ও বালুচর এলাকায় ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত। করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকা কলেজ ছাত্রাবাসে এরা প্রতিদিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক-জুয়ার আড্ডা বসাতো।
বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত