০২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশে এখনো টিকে আছে ‘বন কুকুর’

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ০৫:৪৭:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • 7

সম্প্রতি ভারতের গুজরাটের ভানসদা ন্যাশনাল পার্কে ক্যামেরায় ৫০ বছর পর ধরা পরে ঢোল বা বন কুকুর। এর ৫০ বছর আগে বন কুকুরটি বিলুপ্ত হয়ে যায় গুজরাট থেকে। তবে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিপন্নপ্রায় প্রাণিটি এখনো কিছু সংখ্যক টিকে আছে।

বাংলাদেশে কতগুলো আছে তা নিয়ে কোনো গবেষণা বা জরিপ এখনো হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এ বন কুকুরের দেখা পেয়েছেন। সেই সাথে ক্রিয়েটিভ ফর কনজারভেশনের অ্যালায়েন্সের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে বান্দরবানে দেখা মিলেছে এ কুকুরের। গবেষকদের ধারণা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের কিছু বনে এ কুকুর এখনো টিকে আছে। তবে তা অত্যন্ত দুর্লভ।

আইইউসিএনের বাংলাদেশের কর্মকর্তা সীমান্ত দিপু জানান, বন কুকুরকে বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করেছে আইইউসিএন। আইইউসিএনের হিসেবে পৃথিবীতে এ প্রাণি মাত্র ২ হাজারের মত টিকে আছে।

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বন কুকুরের দেখা পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেষক দলটির পরিচালক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, অঞ্চলভিত্তিক বন কুকুরকে জংলি কুকুর, বন কুকুর, রাম কুকুর, লাল কুকুর বা ঢোল নামেই ঢাকা হয়। এর ইংরেজি নাম এশিয়াটিক ওয়াইল্ড ডগ। বৈজ্ঞানিক নাম Cuon alpinus। নেকড়ে ও কুকুরের সাথে অনেক মিল থাকলেও চেহারা অনেকটা শেয়ালের সাথে মেলে। পা খাটো কিন্তু নাকের উপরের অংশ উঁচু, লেজ ঝোপালো, লেজের আগা কালো। মাথা এবং দেহের উপরের অংশ লালচে বাদামি রং, কানের ভেতর, মুখের নিচ গলা ও দেহের নিচের অংশ সাদা।

একসময় বাংলাদেশে এদের সচরাচর দেখা গেলেও বর্তমানে একেবারেই বিরল ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ কুকুর আকারে জার্মান শেফার্ডের মত। কিন্তু হিংস্র ও ক্ষীপ্রতায় অন্য যেকোনো প্রাণি থেকে ভয়ঙ্কর। দলের সামনে বাঘ বা চিতা পড়লেও সমজে চলতে হয়। এরা ২ থেকে ২০টির মতো দলবেঁধে ঘোরে এবং শিকার ধরে। পছন্দের খাবার হরিণ, শূকর, বন ছাগল জাতীয় প্রাণি। তবে প্রয়োজনে গরু-মহিষকেও আক্রমণ করে।

নিজেদের ওজনের দশ কেজি বেশি ওজনদার প্রাণিকেও অনায়াসে মেরে ফেলতে পারে। দলের সামনে যেকোনো বড় প্রাণিও অসহায়। বড় শিকার ধরার বেলায় প্রাণিকে সামনে-পেছনে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করে বা তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাড়াতে তাড়াতে ক্লান্ত করে মারে। এরা যে প্রাণিকে টার্গেট করে, তাকে প্রথমে চোখে আক্রমণ করে না মরা পর্যন্ত ছাড়ে না। তাড়িয়ে তাড়িয়ে ক্লান্ত করে মেরে ফেলে। তাড়ানো অবস্থায়ই জীবিত প্রাণিটিকে খাবলে খেতে থাকে।

এভাবে ১০ থেকে ১৫টি কুকুর মিলে খুব কম সময়ের মধ্যেই যেকোনো বড় প্রাণিকে শেষ করে ফেলতে পারে। কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না বরং শিস দেওয়ার মতো শব্দ করে ডাকে। ইংরেজিতে এদের তাই হুইসলিং ডগও বলা হয়। এরা সচরাচর ভালুক, চিতাবাঘ বা বাঘকে এড়িয়ে চলে; তবে আক্রান্ত হলে তাদেরও ছাড়ে না।

প্রাকৃতিক বন নষ্ট এবং গণহারে হত্যার কারণে এ প্রাণি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মুনতাসির আকাশ জানান, এখনো এ প্রাণিকে রক্ষা করা সম্ভব।

গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত এস.এন. মিত্রর লেখা ‘বাংলার শিকার প্রাণী’ বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নেকড়ে বিপন্ন হওয়ার কারণ ছিল নির্বিচারে হত্যা। একইভাবে বন কুকুর মারতেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষণা করেছিল। যা প্রাণিটিকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

ট্যাগ :

বাংলাদেশে এখনো টিকে আছে ‘বন কুকুর’

প্রকাশিত : ০৫:৪৭:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

সম্প্রতি ভারতের গুজরাটের ভানসদা ন্যাশনাল পার্কে ক্যামেরায় ৫০ বছর পর ধরা পরে ঢোল বা বন কুকুর। এর ৫০ বছর আগে বন কুকুরটি বিলুপ্ত হয়ে যায় গুজরাট থেকে। তবে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিপন্নপ্রায় প্রাণিটি এখনো কিছু সংখ্যক টিকে আছে।

বাংলাদেশে কতগুলো আছে তা নিয়ে কোনো গবেষণা বা জরিপ এখনো হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এ বন কুকুরের দেখা পেয়েছেন। সেই সাথে ক্রিয়েটিভ ফর কনজারভেশনের অ্যালায়েন্সের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে বান্দরবানে দেখা মিলেছে এ কুকুরের। গবেষকদের ধারণা, সিলেট এবং চট্টগ্রামের কিছু বনে এ কুকুর এখনো টিকে আছে। তবে তা অত্যন্ত দুর্লভ।

আইইউসিএনের বাংলাদেশের কর্মকর্তা সীমান্ত দিপু জানান, বন কুকুরকে বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করেছে আইইউসিএন। আইইউসিএনের হিসেবে পৃথিবীতে এ প্রাণি মাত্র ২ হাজারের মত টিকে আছে।

হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বন কুকুরের দেখা পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গবেষক দলটির পরিচালক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মুনতাসির আকাশ জানান, অঞ্চলভিত্তিক বন কুকুরকে জংলি কুকুর, বন কুকুর, রাম কুকুর, লাল কুকুর বা ঢোল নামেই ঢাকা হয়। এর ইংরেজি নাম এশিয়াটিক ওয়াইল্ড ডগ। বৈজ্ঞানিক নাম Cuon alpinus। নেকড়ে ও কুকুরের সাথে অনেক মিল থাকলেও চেহারা অনেকটা শেয়ালের সাথে মেলে। পা খাটো কিন্তু নাকের উপরের অংশ উঁচু, লেজ ঝোপালো, লেজের আগা কালো। মাথা এবং দেহের উপরের অংশ লালচে বাদামি রং, কানের ভেতর, মুখের নিচ গলা ও দেহের নিচের অংশ সাদা।

একসময় বাংলাদেশে এদের সচরাচর দেখা গেলেও বর্তমানে একেবারেই বিরল ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ কুকুর আকারে জার্মান শেফার্ডের মত। কিন্তু হিংস্র ও ক্ষীপ্রতায় অন্য যেকোনো প্রাণি থেকে ভয়ঙ্কর। দলের সামনে বাঘ বা চিতা পড়লেও সমজে চলতে হয়। এরা ২ থেকে ২০টির মতো দলবেঁধে ঘোরে এবং শিকার ধরে। পছন্দের খাবার হরিণ, শূকর, বন ছাগল জাতীয় প্রাণি। তবে প্রয়োজনে গরু-মহিষকেও আক্রমণ করে।

নিজেদের ওজনের দশ কেজি বেশি ওজনদার প্রাণিকেও অনায়াসে মেরে ফেলতে পারে। দলের সামনে যেকোনো বড় প্রাণিও অসহায়। বড় শিকার ধরার বেলায় প্রাণিকে সামনে-পেছনে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করে বা তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাড়াতে তাড়াতে ক্লান্ত করে মারে। এরা যে প্রাণিকে টার্গেট করে, তাকে প্রথমে চোখে আক্রমণ করে না মরা পর্যন্ত ছাড়ে না। তাড়িয়ে তাড়িয়ে ক্লান্ত করে মেরে ফেলে। তাড়ানো অবস্থায়ই জীবিত প্রাণিটিকে খাবলে খেতে থাকে।

এভাবে ১০ থেকে ১৫টি কুকুর মিলে খুব কম সময়ের মধ্যেই যেকোনো বড় প্রাণিকে শেষ করে ফেলতে পারে। কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না বরং শিস দেওয়ার মতো শব্দ করে ডাকে। ইংরেজিতে এদের তাই হুইসলিং ডগও বলা হয়। এরা সচরাচর ভালুক, চিতাবাঘ বা বাঘকে এড়িয়ে চলে; তবে আক্রান্ত হলে তাদেরও ছাড়ে না।

প্রাকৃতিক বন নষ্ট এবং গণহারে হত্যার কারণে এ প্রাণি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মুনতাসির আকাশ জানান, এখনো এ প্রাণিকে রক্ষা করা সম্ভব।

গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত এস.এন. মিত্রর লেখা ‘বাংলার শিকার প্রাণী’ বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নেকড়ে বিপন্ন হওয়ার কারণ ছিল নির্বিচারে হত্যা। একইভাবে বন কুকুর মারতেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষণা করেছিল। যা প্রাণিটিকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত