নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাড়ির আঙিনায় ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে সফল মোস্তাফিজ ও জহিরুল হক নামে দুইব্যক্তি। পরিক্ষামূলক করা দুইটি ট্যাঙ্কের মাছ এরই মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫৬ হাজার টাকার মতো আয় হয়েছে বলে তাদের দাবি। ২০১৯ সালে তারা এ প্রকল্প শুরু করেন। ভারত, ভিয়েতনাম ও থ্রাইল্যান্ড থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের প্রদ্ধতির উপর মোস্তাফিজ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রকল্পে দুই যুবকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তৈরি খাবার (ফিড)।
মাছ চাষের এ আধুনিক পদ্ধতি দেখতে প্রতিদিন উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন কৌতুহল নিয়ে ভিড় করছেন। অনেকেই মাছ চাষে উদ্ধুব্ধও হচ্ছেন। এতে অনেকের আত্মকর্ম সংস্থানেরও সুযোগ হচ্ছে। হাইজাদী ইউপির ভল্লবদী পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায় সারি সারি করে বসানো হয়েছে ৮টি বড় আকারের ট্যাঙ্ক ও পাশে রয়েছে ৪টি ছোট ট্যাঙ্ক। ওপরে পলিথিন দিয়ে সেড তৈরি করা হয়েছে। যাতে পানিতে বাইরের আবর্জনা না পড়ে। প্রতিটি ট্যাঙ্কেই চাষ করা হয়েছে আলাদা প্রজাতির মাছ। এতে আছে শিং, তেলাপিয়া ও গোলসা। এতে খাদ্য বাবদ গড়ে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০টাকা খরচ হচ্ছে। দৈনিক দুইবার খাবার দেওয়া হচ্ছে। একটি মটরের সাহায্যে পানিতে বুঁদ বুঁদ দেয়া হচ্ছে। এতে পানিতে অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে। ট্যাঙ্কে নেমে শ্রমিকরা পানির নিচে জমে থাকা বিভিন্ন ধরনের তরল ময়লা পাইপের মাধ্যমে নিস্কাশন করে দিচ্ছেন।
শ্রমিক রাকিব জানান, প্রতিটি বড় ট্যাঙ্কে ১৭,৫০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। মাছের প্রকার ভেদে তেলাপিয়ার রেণু ৪ হাজার, শিং ১০ থেকে ১৫ হাজার ও গোলসা মাছের রেণু ৪০ হাজার পিস রেণু ট্যাঙ্কে চাষ করা যাচ্ছে। বড়ো আকার একটি ট্যাঙ্কের রাউন্ড ৪৮ ফিট, ডায়া ১৫ ফিট ও গভীরতা ৪ফিট। লোহার রড দিয়ে এ আকারের খাঁচা তৈরি করে তাতে (সাপোর্ট প্রি ফোর্স) তলাসহ চারোপাশে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প দেখতে আসা কুমিল্লা জেলার মাহাবুব আলম নামে এক যুবক বলেন, আমি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম থেকে এই প্রকল্পের বিষয়টি অবহিত হয়ে এখানে এসেছি। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক বলে মনে হয়েছে। পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজের বাড়িতে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছি। ঢাকা কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদ্দাম বলেন, আধুনিক প্রদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি চেষ্টা করব এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে।
উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বাড়ির উঠানে মাছের চাষ শুরু করি। এর আগে ভারত, থ্রাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমি একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে কর্মরত ছিলাম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি চাকরী ছেড়ে দেই। এ পর্যন্ত দুইটি ট্যাঙ্কের মাছ বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদে প্রতিটিতে ২৮ হাজার টাকা করে আয় হয়েছে। স্থানীয় কান্দা এলাকায় আরো একটি প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। সেখানে মাছের রেণু উৎপাদনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আড়াইহাজার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তবে এ প্রদ্ধতি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমার মনে হচ্ছে এতে খাদ্যের অপচয় রোধ হবে; মাছের রোগবালাই কম হবে। বাড়ির উঠানে বা পতিত জমিতে ট্যাঙ্ক তৈরি করে মাছ চাষ করা যাবে। তবে পদ্ধতিতে বিদ্যুতের সম্পৃক্ততা থাকায় কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

























