গত বছর দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় করোনা মহামারির প্রকোপ। এর ওপরে ছিল প্রলম্বিত বন্যা। যে কারণে ৪ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার। খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ানো হয়েছিল সেই সঙ্গে দ্বিগুণ হয়েছিল খাদ্য সহায়তার পরিমাণ। এর ওপর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চালের উৎপাদন। যে কারণে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ কমে যায়। ২০১৯ সালের ১ জুলাই সরকারের হাতে খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল প্রায় ১৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে ২৫ জানুয়ারি মজুদ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টনে। সরকারি গুদামে খাদ্য মজুদ কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়েছে মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা। বাজারে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিল জনজীবনে। স্বল্পমেয়াদে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে শুল্ক কমিয়ে দিয়ে চাল আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। এর প্রভাবে স্থিতিশীল হয় চালের বাজার। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলতি বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
করোনাভাইরাস মহামারি ও প্রলম্বিত বন্যার কারণে গত বছর চালের উৎপাদনে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঘাটতি মেটাতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ করা হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। উৎপাদন বাড়াতে ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষাবাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড বীজের দাম বেশি হওয়ায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য এরই মধ্যে কৃষকদের মাঝে ৭৩ কোটি টাকার বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই দুই লাখ হেক্টর জমি থেকে চার থেকে পাঁচ লাখ টন ধানের উৎপাদন বেশি হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বোরো উৎপাদনের আগ পর্যন্ত ঘাটতি মেটাতে সরকারি পর্যায়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, কয়েক দফা বন্যায় ৩৫ জেলার আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয়ের এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রলম্বিত বন্যায় এক লাখ হেক্টরেরও বেশি জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে – যার প্রভাব পড়েছে চালের দামে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, চালের দাম গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এবছরের জানুয়ারিতে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিপুল পরিমাণ চাল বিতরণ এবং সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমে যাওয়া ঘাটতির আরেকটি বড় কারণ বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী।
চালের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে এবার বাজার স্থিতিশীল রাখতে খোলাবাজারে নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছে কমদামে চাল বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। কারণ, গত বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান-চাল কৃষি অধিদফতর বা কৃষি মন্ত্রণালয় কেনার আগেই মিল মালিক ও আড়তদাররা সব কিনে নিয়েছিল। আর এটাকেই তারা বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এবার বিপুল মুনাফা লুটেছে। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারের চাল সংগ্রহের আগেই মিল মালিক ও আড়তদাররা চাল সংগ্রহ করে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এমন পরিস্থিতিতে বাজার মনিটরিং করা এবং কৃষকদের বিনামূল্যে সার বীজ দেয়ার পাশাপাশি শস্য-বীমার সুবিধা দিয়ে অধিক ফলনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে মূলত আউশ, আমন ও বোরো-এই তিন জাতের ধানের আবাদ হয়ে থাকে। জুন-জুলাই মাসে অর্থাৎ বর্ষায় আমন ধান বোনা হয় এবং নভেম্বর মাসে বা হেমন্তে সেই ধান কাটা হয়। অন্যদিকে বোরো ধান শীতকালীন রবিশস্য। আমনের মৌসুম শেষ হবার পরে অর্থাৎ ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই ধানের সময় চলে। বোরো ও আমন ধানের মৌসুমের মাঝে যে সাত মাসের ব্যবধান, এই সময়ে আউশ ধানের ফলন বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের হাওড় এলাকাসহ কয়েকটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় আগাম বন্যা আঘাত হানার আশঙ্কা থাকে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ওইসব এলাকায় আগাম ফলনশীল বীজ ও চারা রোপণের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
০৩:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
ঘাটতি মেটাতে ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ
-
এ. আর আকাশ
- প্রকাশিত : ১২:০১:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- 48
ট্যাগ :
জনপ্রিয়