চারদিকে শুধু পরিবর্তন। সমাজে, পরিবারে, চালচলনে, এমনকি কুশলাদি বিনিময়েও পরিবর্তন। শুধু দেশে নয়, এই পরিবর্তন সূচিত হয়েছে আজ সারা বিশ্বে। ডিকশনারিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, জায়গা করে নিয়েছে নতুন শব্দ, নিউ-নরমাল। অতি পরিচিতি পেয়েছে কোয়ারেন্টিন কিংবা লকডাউনের মতো শব্দও। দেখা দিয়েছে নতুন এক উপসর্গ, যুক্ত হয়েছে ঝঅজঝ (সার্চ) গঊজঝ (মার্স)-এর সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)। এ পর্যন্ত মানুষের জন্য আক্রমণাত্মক ও সংক্রমণ সৃষ্টিকারী সার্চ, মার্স ভাইরাসের ক্ষতিকর মাত্রাকে ছাপিয়ে কভিড-১৯ অতিমারি সৃষ্টি করেছে। সময়ের আবর্তে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হলেও এই পরিবর্তন সারা বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। চিন্তাযুক্ত অনুধাবনের ছাপ নজরে এসেছে চিকিৎসাশাস্ত্রের শাখা ভাইরোলজিতে কর্মরত বিজ্ঞানী-ভাইরোলজিস্টদের অনুসন্ধিৎসু মনেও।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনের পর থেকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ গণতন্ত্রের সুদৃঢ় ভিত্তি পেতে চলেছে। এ দেশ যখন অর্থনৈতিক দুর্বলতা কাটিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়ে নির্দিষ্ট ভিশন-মিশনের আলোকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে অগ্রসরমাণ, ঠিক সেই সময়ে কভিড-১৯ নামের ভয়ংকর ভাইরাস সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশকেও ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ আমাদের এমনতর অতিমারি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতাও নেই। তথাপিও বর্তমান সরকারের প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব ও গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণে সীমাবদ্ধ সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই মারণব্যাধি মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে।
অপ্রতুল সম্পদ আর জনসংখ্যাধিক্যের দেশ বাংলাদেশকে কভিড-১৯ পরিস্থিতি শুরুতেই অনেকটা বেশিই উৎকণ্ঠিত করেছিল। উৎকণ্ঠার সেই জায়গা থেকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে একটু তুলনা করতে চেষ্টা করলে দেশের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না। সরকারের জনসচেতনতামূলক কর্মকাÐ গ্রহণ, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে শারীরিক দূরত্ব বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রচারণা, মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা; স্থানীয়, এলাকাভিত্তিক, জেলাভিত্তিক, পর্যায়ক্রমিক ও দেশব্যাপী লকডাউন নিশ্চিত করা; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কলকারখানা; গণপরিবহনগুলো বন্ধ ঘোষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ত্বরিতভাবে গ্রহণ করার কারণেও অতিমারি কিছুটা হলেও প্রশমিত করা সম্ভব হয়েছে। সরকারের তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক হাসপাতালকে কভিড ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষণা করা, দ্রæত কভিড টেস্ট কীট আমদানি করা, ক্রমান্বয়ে কভিড টেস্ট কেন্দ্র বৃদ্ধি ও টেস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের কঠোরতা আরোপ করা রোগীদের কিছুটা হলেও উত্তম সেবা পেতে সহায়তা করেছে। চিকিৎসকরা যাঁদের করোনাকালীন সেবা মূল্যবান জীবন বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন, তাঁদের সেবাদানে উৎসাহিত করা এবং কর্তব্যে অটুট থাকার যথাযথ নির্দেশনা প্রদান, তাঁদের কভিড যোদ্ধা হিসেবে সম্মান প্রদর্শন সরকারের কভিড ব্যবস্থাপনার বড় কৌশল। এই দুরূহ পরিস্থিতিতে যাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করে কাজ করছেনÑস্যালুট জানাই সেই কভিডযোদ্ধাদের। অবনত মস্তকে কুর্নিশ সেবাদানে রত সেই সব চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, চিকিৎসা সহায়ক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পর্যন্ত, জরুরি সেবাদানে নিয়োজিত কর্মী, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির অন্যতম অনুঘটক গণমাধ্যমকর্মীদের। সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সমম্বয় সাধন এই ব্যবস্থাপনার অন্যতম হাতিয়ারÑএ বিবেচনায় সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ অতিমারি রুখতে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে এবং হচ্ছে।
বহুবিধ দিক বিশ্লেষণে বাংলাদেশের কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা যে তুলনামূলকভাবে ভালো, তা অনেকটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান। তবে ভালোর তো শেষ নেই এবং আমাদের জনসচেতনতার বেশ কিছুটা অভাব এখনো আছে। আমাদের আমজনতার বেশ কিছু অংশই এসবের তোয়াক্কা করে না এবং ব্যক্তিগত অসচেতনতার কারণে অনেককেই যত্রতত্র মাস্কবিহীন ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এজাতীয় ব্যক্তিগত অসচেতনতা পরিহার করতে পারলে হয়তো আরো আগেই সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমানো যেত। তবে কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় পরবর্তী সময়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ প্রতিষেধক টিকা ক্রয় ও তা জনগণের মাঝে সঠিকভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। এমন পরিবর্তিত পেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দেশের জনগোষ্ঠীকে কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দিতে, আমাদের জন্য অতিমারির এই ঝঞ্ঝামুক্তিতে আলোর দেখা মিলতে চলেছে। কভিড-১৯ উত্তরণে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের জন্য সরকারপ্রধানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেই শেষ করতে চাই না, প্রকৃতপক্ষেই মানবপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সনির্বন্ধ নিবেদন রাখতে চাই, তিনি যেন টিকাকরণের অগ্রাধিকার তালিকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিবেচনা করেন, যাতে করে গত প্রায় এক বছরের জড়তা কাটিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে তাদের সব কর্মকাÐ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে।
‘হতাশায় থামা নয়’Ñআসুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার গৃহীত কার্যকরী পদক্ষেপে অংশীদারির মাধ্যমে নিউ-নরমাল জীবন থেকে চিরচেনা নরমাল (স্বাভাবিক) জীবনে ফিরতে চেষ্টা করি, যাতে জনহিতৈষী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্বেকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারায় দেশ ফিরতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকে।
লেখক : ড. প্রভাষ কুমার কর্মকার, অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ ও সাবেক প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতি
০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ
-
ড. প্রভাষ কুমার কর্মকার - প্রকাশিত : ১২:০০:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- 51
ট্যাগ :
জনপ্রিয়


























