০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

চার বছরেও যে খুনের সুরাহা করেননি সু চি

আজ থেকে চার বছর আগে মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় সংস্কারক ইউ কো নি’কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল- যিনি ছিলেন দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার কঠোর সমালোচক। তার হত্যার প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি।

মুসলিম এ আইনজীবী ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরার পর ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের একটি চক্রান্তে প্রকাশ্যে খুন হয়েছিলেন। ইউ কো নি ছিলেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) আইনি পরামর্শক এবং অং সান সু চির সহযোগী।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে এনএলডির বিপুল জয়ের পরে অং সান সু চির জন্য (সু চির প্রয়াত স্বামী মাইকেল আরিসসহ তার সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি দেশটির নিয়মানুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে না পারায়) রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার পদ বের করার কৃতিত্ব ইউ কো নি’র। তার এমন ভূমিকার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেনাবাহিনী। এনএলডি সরকারের প্রথম বছরেই ভাড়াটে খুনির বুলেট ৬৩ বছর বয়সী এ আইনজীবীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

মিয়ানমারের নাগরিকরা বহু দশকের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের পর বেসামরিক সরকার ক্ষমতা নেওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ওই সময় ইউ কো নি অনুভব করেছিল যে দেশটি একটি টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে। তার ছেলে কো থান্ট জিন ওও বলেন, ‘আমার মনে আছে (২০১৫ সালের) নির্বাচনের পরে তিনি কী সক্রিয় ও খুশি ছিলেন!’

২০০৮ সালের সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধানের ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন আইনজীবী ইউ কো নি। হত্যার আগে আগে তিনি এনএলডিকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন দলটির গঠনতন্ত্র সংস্কারের।

এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। সেনাবাহিনী কর্তৃক নিযোগকৃত মিয়ানমারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ঘাতকরা ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ’ থেকে এ খুন করেছে। খুনীরা ইউ কো নি’র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘বিরক্তি’ ছিল। মন্ত্রীর মন্তব্য এ খুনের প্রকৃত কারণ আড়াল করার প্রয়াস হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আইনজীবী ইউ কো নি’র সংস্কার পদক্ষেপ ঠেকাতে আরও শক্তিশালী কেউ এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে।

ইউ কো নি’র হত্যা মামলায় চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ইউ কো নি’র ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউ নে উইন ঘাতককে ধরার চেষ্টা করায় তাকেও হত্যা করা বন্দুকধারী কি লিন এবং এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী সাবেক লেফটেন্যান্ট অং উইন জাওকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে সহযোগী সাবেক সামরিক গোয়েন্দা ক্যাপ্টেন জেয়া ফিয়োকে পাঁচ বছরের এবং অং উইন জাওকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অং উন খাইং, যাকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর এখনও গোপন সুরক্ষাসহ বহালতবিয়াতে আছেন বলে জানা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তার অবস্থান সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

ইউ কো নি’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইউ ন লা বলেন, বিচার চলাকালীন কোনো মোটিভ পাওয়া যায়নি। অং উন খাইং গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার কোনো কিনারা হবে বলে তিনি আশা করেন না।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনকে গতবছর প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন, এ প্রক্রিয়াও ইউ ন লা’কে ভীত করেছে। কো থান্ট জিন ওও বলেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রায় ঘোষণার পর থেকে তাদের পরিবারের অবস্থান বদলায়নি। আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

হত্যার বিচার চলাকালীন ভিকটিমের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী এবং ইউ কো নি’র সহকর্মী উ খিন মাং হাতায় বলেন, ‘অং উন খাইংকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মামলা শেষ হবে না। আদালত তাকে পলাতক ঘোষণা করেছে। তাকে আদালতে হাজির করা এবং এই চক্রান্তের পিছনে কারা ছিলেন তা শনাক্ত করার মূল দায়িত্ব পুলিশের।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়নের পথে একটি ত্যাগ। আমাদের অবশ্যই তার মৃত্যু বৃথা দেওয়া উচিত হবে না। আমাদের সবার গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে সামনে এগিয়ে নেওয়ায় কাজ করা উচিত।’

ট্যাগ :

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

চার বছরেও যে খুনের সুরাহা করেননি সু চি

প্রকাশিত : ০৮:০২:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২১

আজ থেকে চার বছর আগে মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় সংস্কারক ইউ কো নি’কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল- যিনি ছিলেন দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকার কঠোর সমালোচক। তার হত্যার প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি।

মুসলিম এ আইনজীবী ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরার পর ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের একটি চক্রান্তে প্রকাশ্যে খুন হয়েছিলেন। ইউ কো নি ছিলেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) আইনি পরামর্শক এবং অং সান সু চির সহযোগী।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে এনএলডির বিপুল জয়ের পরে অং সান সু চির জন্য (সু চির প্রয়াত স্বামী মাইকেল আরিসসহ তার সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি দেশটির নিয়মানুযায়ী প্রেসিডেন্ট হতে না পারায়) রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতার পদ বের করার কৃতিত্ব ইউ কো নি’র। তার এমন ভূমিকার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেনাবাহিনী। এনএলডি সরকারের প্রথম বছরেই ভাড়াটে খুনির বুলেট ৬৩ বছর বয়সী এ আইনজীবীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।

মিয়ানমারের নাগরিকরা বহু দশকের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের পর বেসামরিক সরকার ক্ষমতা নেওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। ওই সময় ইউ কো নি অনুভব করেছিল যে দেশটি একটি টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে। তার ছেলে কো থান্ট জিন ওও বলেন, ‘আমার মনে আছে (২০১৫ সালের) নির্বাচনের পরে তিনি কী সক্রিয় ও খুশি ছিলেন!’

২০০৮ সালের সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধানের ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন আইনজীবী ইউ কো নি। হত্যার আগে আগে তিনি এনএলডিকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন দলটির গঠনতন্ত্র সংস্কারের।

এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি। সেনাবাহিনী কর্তৃক নিযোগকৃত মিয়ানমারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ঘাতকরা ‘চরম জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ’ থেকে এ খুন করেছে। খুনীরা ইউ কো নি’র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ‘বিরক্তি’ ছিল। মন্ত্রীর মন্তব্য এ খুনের প্রকৃত কারণ আড়াল করার প্রয়াস হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আইনজীবী ইউ কো নি’র সংস্কার পদক্ষেপ ঠেকাতে আরও শক্তিশালী কেউ এ খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন অনেকে।

ইউ কো নি’র হত্যা মামলায় চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ইউ কো নি’র ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউ নে উইন ঘাতককে ধরার চেষ্টা করায় তাকেও হত্যা করা বন্দুকধারী কি লিন এবং এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী সাবেক লেফটেন্যান্ট অং উইন জাওকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে সহযোগী সাবেক সামরিক গোয়েন্দা ক্যাপ্টেন জেয়া ফিয়োকে পাঁচ বছরের এবং অং উইন জাওকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অং উন খাইং, যাকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর এখনও গোপন সুরক্ষাসহ বহালতবিয়াতে আছেন বলে জানা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, তার অবস্থান সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

ইউ কো নি’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইউ ন লা বলেন, বিচার চলাকালীন কোনো মোটিভ পাওয়া যায়নি। অং উন খাইং গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার কোনো কিনারা হবে বলে তিনি আশা করেন না।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনকে গতবছর প্রেসিডেন্ট সাধারণ ক্ষমা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন, এ প্রক্রিয়াও ইউ ন লা’কে ভীত করেছে। কো থান্ট জিন ওও বলেন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রায় ঘোষণার পর থেকে তাদের পরিবারের অবস্থান বদলায়নি। আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

হত্যার বিচার চলাকালীন ভিকটিমের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী এবং ইউ কো নি’র সহকর্মী উ খিন মাং হাতায় বলেন, ‘অং উন খাইংকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মামলা শেষ হবে না। আদালত তাকে পলাতক ঘোষণা করেছে। তাকে আদালতে হাজির করা এবং এই চক্রান্তের পিছনে কারা ছিলেন তা শনাক্ত করার মূল দায়িত্ব পুলিশের।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড মিয়ানমারের গণতন্ত্রায়নের পথে একটি ত্যাগ। আমাদের অবশ্যই তার মৃত্যু বৃথা দেওয়া উচিত হবে না। আমাদের সবার গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে সামনে এগিয়ে নেওয়ায় কাজ করা উচিত।’