যশোর চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আমবটতলা বাজারের পাশেই লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি নির্মিত “তোতা ব্রিকস” নামের ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে পুরোদমে । ভাটার গা ঘেঁষেই রয়েছে একটি মসজিদ ও এতিম মাদ্রাসা । এছাড়াও ভাটাটির ১ কিমি এর মধ্যে অবস্থিত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) সহ আর ২ টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । অন্যদিকে চুড়ামনকাটি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তায় আইনত নিষিদ্ধ এলাকায় স্থাপিত আরও ২ টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে হরদমে। তিনটি ভাটার নামেই ২০১৮ সালে মামলা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে মামলাগুলো। কিন্তু প্রশাসনের নীরব ভূমিকার সুযোগে থেমে নেই ভাটা মালিকদের ইট পোড়ানোর কাজ।
গত ২০১৮ সালের জুন মাসে চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের পাওয়ার হাউজের পাশে অবস্থিত সহিদুল ব্রিকস ও ২ স্টার ব্রিকস সহ আমবটতলা গ্রামে অবস্থিত তোতা ব্রিকস এর নামে পরিবেশ আইন অমান্য করে ভাটা চালানোর অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর , যশোর জেলা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে যশোর সদর থানায় ৩ টি মামলা দেওয়া হয় । মামলার পর প্রায় আড়াই বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে মামলাগুলো । অন্যদিকে ভাটাগুলোতে থেমে নেই ইট পোড়ানো কাজ ।
ভাটাগুলোর কারণে অত্র এলাকায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ছাই, ধুলা সহ বায়ু ও পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাপক হারে । তাছাড়াও ফসলি জমিতে নির্মিত এইসব ভাটার জন্য প্রতিনিয়ত হছে মাটি দূষণ ও ভূমিক্ষয় । পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরতাশক্তি হ্রাস, শস্যাহানির মত অন্যান্য সমস্যাও রয়েছে । রাস্তা, জনবসতি , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খুব নিকটে ভাটাগুলো নির্মিত হওয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে স্থানীয় লোকজন সহ স্কুল ,মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন,২০১৩ ( সংশোধিত-২০১৯) এর কতিপয় স্থানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইন (৮) অনুসারে ছাড়পত্র থাকুক বা না থাকুক “আবাসিক এলাকা” অর্থ এমন কোন এলাকা যেখানে কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) টি পরিবার বসবাস করে এবং বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেবর্তী এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তি কোন ইটভাটা স্থাপন করিতে পারবেন না । আইন ( সংশোধিত-২০১৯) কার্যকর হইবার পূর্বে, ছাড়পত্র গ্রহণকারী কোন ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে বা উল্লিখিত দূরত্বের মধ্যে বা স্থানে ইটভাটা স্থাপন করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি, এই আইন কার্যকর হইবার ২ (দুই) বৎসর সময়সীমার মধ্যে, উক্ত ইটভাটা, এই আইনের বিধানাবলি অনুসারে, যথাস্থানে স্থানান্তর করিবেন, অন্যথায় তাহার লাইসেন্স বাতিল হইয়া যাইবে।
আইনত নিষিদ্ধ এলাকায় স্থাপিত হয়েও এবং স্থানান্তরের সময় সীমা ২ (দুই) বৎসর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ভাটাগুলো । এই বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর , যশোর জেলা কার্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর সাইদ আনোয়ার মুঠোফোনে জানান , চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের সহিদুল ব্রিকস , ২ স্টার ব্রিকস ও তোতা ব্রিকস এর নামে আগেই পরিবেশ আইনে মামলা করা হয়েছে । মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারবোনা। কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে আমাদেরকে যে নির্দেশ দেওয়া হবে সেই অনুযায়ী আমরা বাবস্থা নিব।
( সাইদ আনোয়ার মুঠোফোন নাম্বার ঃ ০১৭১২৫৬২১৬৪)
এইদিকে স্থানীয় লোকজন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি ভাটাগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার