০৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ধুঁকছে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প

রং-সুতাসহ তাঁতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ের দাম বাজারে কম হওয়ায় সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প এখন ধুঁকছে। করোনার লকডাউনসহ নানা বিপর্যয়ের কারণে টিকতে না পেরে বহু তাঁত কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে।

তাঁত মালিক সূত্রে জানা যায়, জেলায় হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫ লাখ তাঁত রয়েছে। আর এতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ঋণ ও দৈন্যদশা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন তাঁতশিল্প মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, এনায়েতপুর, বেলকুচি ও সদর উপজেলা তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। শাড়িসহ বিভিন্ন কাপড় তৈরি হয় এখানে। স্থানীয় সোহাগপুর ও শাহজাদপুর হাটসহ দেশের বিভিন্ন কাপড়ের হাটে এ এলাকার উত্পাদিত কাপড় বিক্রি হয়। এসব কাপড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন এবং বাহারি ডিজাইনের উত্পাদিত শাড়ি-কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

মালিক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক কারখানা বন্ধের পথে। তামাই গ্রামের তাঁত মালিক হোসেন আলী, সয়দাবাদের তাঁত মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে যে হারে উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে কাপড়ের মূল্য বাজারে নেই। কাপড় বিক্রি করে পরিবহন ভাড়া তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অনেক ক্ষুদ্র তাঁত মালিক। তামাই গ্রামের তাঁত শ্রমিক আব্দুল হামিদ জানান, ‘তাঁত শ্রমিকের মজুরি এখনো কম। কাজ করলে মহাজন টাকা দেয়, না করলে নাই।’ লোকসানের কারণে অনেক তাঁত মালিক তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ কারখানা বন্ধ রেখেছেন। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

জেলার বেলকুচি উপজেলা তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায় বলেন, পাউন্ড প্রতি সুতার দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা, বিভিন্ন রঙের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৩ হাজার টাকা। এছাড়া তাঁতে ব্যবহূত অন্যান্য পণ্যের দামও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এখানে ইতিমধ্যে ২০-২৫ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক তাঁত বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে।

 

জেলা তাঁত মালিক সমিতির নেতা এম এ বাকী বলেন, জেলায় গত বছর থেকে করোনার কারণে লকডাউনে তাঁত বন্ধ ছিল। তাতে অনেক মালিক তাদের উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন। সরকারি কোনো প্রণোদনাও পায়নি তাঁত মালিকেরা। আবার গত বছরের উত্পাদিত কাপড় বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে তারা লোকসানে পড়েছেন। এ অবস্থায় এই শিল্পে জড়িত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এ কারণে আসন্ন নববর্ষ ও ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের মনে নেই কোনো আনন্দ।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ধুঁকছে সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প

প্রকাশিত : ০৩:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১

রং-সুতাসহ তাঁতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ের দাম বাজারে কম হওয়ায় সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প এখন ধুঁকছে। করোনার লকডাউনসহ নানা বিপর্যয়ের কারণে টিকতে না পেরে বহু তাঁত কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে।

তাঁত মালিক সূত্রে জানা যায়, জেলায় হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫ লাখ তাঁত রয়েছে। আর এতে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ঋণ ও দৈন্যদশা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন তাঁতশিল্প মালিকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, এনায়েতপুর, বেলকুচি ও সদর উপজেলা তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। শাড়িসহ বিভিন্ন কাপড় তৈরি হয় এখানে। স্থানীয় সোহাগপুর ও শাহজাদপুর হাটসহ দেশের বিভিন্ন কাপড়ের হাটে এ এলাকার উত্পাদিত কাপড় বিক্রি হয়। এসব কাপড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন এবং বাহারি ডিজাইনের উত্পাদিত শাড়ি-কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

মালিক সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক কারখানা বন্ধের পথে। তামাই গ্রামের তাঁত মালিক হোসেন আলী, সয়দাবাদের তাঁত মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে যে হারে উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে কাপড়ের মূল্য বাজারে নেই। কাপড় বিক্রি করে পরিবহন ভাড়া তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অনেক ক্ষুদ্র তাঁত মালিক। তামাই গ্রামের তাঁত শ্রমিক আব্দুল হামিদ জানান, ‘তাঁত শ্রমিকের মজুরি এখনো কম। কাজ করলে মহাজন টাকা দেয়, না করলে নাই।’ লোকসানের কারণে অনেক তাঁত মালিক তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ কারখানা বন্ধ রেখেছেন। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

জেলার বেলকুচি উপজেলা তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ রায় বলেন, পাউন্ড প্রতি সুতার দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা, বিভিন্ন রঙের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৩ হাজার টাকা। এছাড়া তাঁতে ব্যবহূত অন্যান্য পণ্যের দামও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এখানে ইতিমধ্যে ২০-২৫ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক তাঁত বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে।

 

জেলা তাঁত মালিক সমিতির নেতা এম এ বাকী বলেন, জেলায় গত বছর থেকে করোনার কারণে লকডাউনে তাঁত বন্ধ ছিল। তাতে অনেক মালিক তাদের উত্পাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন। সরকারি কোনো প্রণোদনাও পায়নি তাঁত মালিকেরা। আবার গত বছরের উত্পাদিত কাপড় বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে তারা লোকসানে পড়েছেন। এ অবস্থায় এই শিল্পে জড়িত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এ কারণে আসন্ন নববর্ষ ও ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের মনে নেই কোনো আনন্দ।