০১:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

শিল্প, সৃজনশীলতা ও সমাজের সংহতির এক রঙিন উৎসব: মিরপুর আড্ডা’৯৯

মিরপুরের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’—শিল্প, সৃজনশীলতা ও সমাজের সংহতির এক অসাধারণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় । সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনের বহুপ্রতীক্ষিত এই আয়োজনটি পরিণত হয় এক বর্ণিল উৎসবে, যেখানে নানা বয়সের মানুষ একত্রিত হয়ে উদযাপন করলেন সংস্কৃতির ঐক্য ও সৌন্দর্য।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী, কবি, সংগীতশিল্পী, সামাজিক সংগঠকসহ সাধারণ মানুষও।

অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন, দলীয় আবৃত্তি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, কবিতা পাঠ ও উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল উল্লেখযোগ্য। ছিল শিশুদের জন্য আলাদা আঁকাবাঁকা শিল্পকর্মের স্থান।উৎসবের মূল আয়োজক ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’এর সভাপতি বলেন, “এই আয়োজন শুধুই আনন্দের নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক সংহতির শক্তি তুলে ধরার একটি প্রয়াস। তরুণ প্রজন্মকে এই ধারার সাথে যুক্ত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’ শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল এক সামাজিক সংলাপের ক্ষেত্র। আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে সহনশীলতা, সৃজনশীল বিকাশ এবং একতাবদ্ধতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। উপস্থিত দর্শকদের উচ্ছ্বাস, প্রাণচাঞ্চল্য এবং আন্তরিকতা এই উৎসবকে আরও সার্থক করে তোলে।ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নবীন প্রতিভার সম্মিলনে ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’ আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমী শিল্প ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ, যা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সৃজনশীলতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

এক সময়ের কেবলমাত্র আড্ডা ও সমাবেশের স্থান হিসেবে পরিচিত “মিরপুর আড্ডা” আজ রূপান্তরিত হয়েছে এক সৃষ্টিশীল প্ল্যাটফর্মে, যেখানে গ্রাফিতি-শোভিত দেয়াল, খোলা মঞ্চের কবিতা পাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে ঢাকার তরুণদের শিল্পমানস।

আড্ডা’৯৯-এর আয়োজনে এবারের মূল আকর্ষণ ছিল বার্ষিক শিল্প ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ, যার এবারের থিম ছিল “ক্যানভাস অফ কালেকটিভ ড্রিমস”। পুরো ভেন্যু জুড়ে থিমটির প্রতিফলন ঘটেছে ম্যুরাল, ইন্টারেক্টিভ আর্ট ও উন্মুক্ত শিল্প উপস্থাপনার মাধ্যমে। শিল্পীরা তাদের কল্পনার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচয়, আশা এবং সামাজিক বার্তা।
স্মরণীয় অংশ ছিল ‘ইন্টারেক্টিভ কমিউনিটি ক্যানভাস’—একটি বিশাল আকারের সম্মিলিত শিল্পকর্ম, যেখানে সকল বয়সের অংশগ্রহণকারীরা তাদের রঙের ছোঁয়ায় একত্রে গড়ে তুলেছেন সৃজনশীলতার মোজাইক।

“এটি কেবল প্রতিভা প্রদর্শনের বিষয় নয়, এটি সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাজে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা,” বললেন শিল্পী ও ইভেন্ট সংগঠক রিফাত জামান।
সমাবেশের অন্যতম প্রাণবন্ত আয়োজন ছিল ‘ড্রয়িং ট্যালেন্ট, সেলিব্রেটিং উইথ জয়’—একটি শিশু ও কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যা মিরপুরের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৬ জন তরুণ শিল্পী, যাদের মধ্যে ৭ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।বিশেষ সম্মাননা পান মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং আফরোজা শারমিন পাপড়ি, যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে আসেন। বিজয়ীদের প্রদান করা হয় সার্টিফিকেট ও পেশাদার আর্ট কিট—তাদের সৃজনশীল অগ্রযাত্রার সহায়তা হিসেবে।

অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল কথ্য কবিতা, অ্যাকোস্টিক সঙ্গীত, ও লাইভ ম্যুরাল চিত্রকর্ম। এ ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা ও কর্মশালা, যেখানে আলোচিত হয় নগর শিল্প আন্দোলন, তৃণমূল উদ্যোগ, এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে তরুণদের ভূমিকা।

“আমরা কেবল বিনোদনের আয়োজন করি না, বরং প্রতিভাভিত্তিক সুযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি,” বলেন সংগঠনের অন্যতম আয়োজক মোঃ আমিনুল ইসলাম এসিএস।

সন্ধ্যায় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি শিশুদের অংশগ্রহণ দর্শকদের মোহিত করে তোলে। এ অনুষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন মুনিয়া আরেফিন।

অনুষ্ঠানের শেষে মোঃ ফিরোজ আলম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সব অংশগ্রহণকারী, অতিথি ও আয়োজকদের প্রতি। সমাপ্তি ঘটে একটি উষ্ণ নৈশভোজে, যেখানে সবাই শিল্প ও সমাজের ঐক্যের বার্তা ভাগাভাগি করেন।

‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’-এর এই আয়োজন শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সামাজিক আন্দোলন—যেখানে তরুণ শিল্পীরা নিজেদের চিন্তা, কল্পনা ও বার্তা তুলে ধরছে শিল্পের মাধ্যমে। শিল্পকে কেন্দ্র করে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মই হতে পারে একটি ইতিবাচক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গর্বিত সমাজ গঠনের পাথেয়।

ডিএস./

ট্যাগ :

শিল্প, সৃজনশীলতা ও সমাজের সংহতির এক রঙিন উৎসব: মিরপুর আড্ডা’৯৯

প্রকাশিত : ০৬:০১:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

মিরপুরের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’—শিল্প, সৃজনশীলতা ও সমাজের সংহতির এক অসাধারণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় । সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনের বহুপ্রতীক্ষিত এই আয়োজনটি পরিণত হয় এক বর্ণিল উৎসবে, যেখানে নানা বয়সের মানুষ একত্রিত হয়ে উদযাপন করলেন সংস্কৃতির ঐক্য ও সৌন্দর্য।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী, কবি, সংগীতশিল্পী, সামাজিক সংগঠকসহ সাধারণ মানুষও।

অনুষ্ঠানে একক সংগীত পরিবেশন, দলীয় আবৃত্তি, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, কবিতা পাঠ ও উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল উল্লেখযোগ্য। ছিল শিশুদের জন্য আলাদা আঁকাবাঁকা শিল্পকর্মের স্থান।উৎসবের মূল আয়োজক ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’এর সভাপতি বলেন, “এই আয়োজন শুধুই আনন্দের নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক সংহতির শক্তি তুলে ধরার একটি প্রয়াস। তরুণ প্রজন্মকে এই ধারার সাথে যুক্ত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’ শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল এক সামাজিক সংলাপের ক্ষেত্র। আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণকারীরা সমাজে সহনশীলতা, সৃজনশীল বিকাশ এবং একতাবদ্ধতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। উপস্থিত দর্শকদের উচ্ছ্বাস, প্রাণচাঞ্চল্য এবং আন্তরিকতা এই উৎসবকে আরও সার্থক করে তোলে।ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও নবীন প্রতিভার সম্মিলনে ‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’ আয়োজন করেছে এক ব্যতিক্রমী শিল্প ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ, যা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সৃজনশীলতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

এক সময়ের কেবলমাত্র আড্ডা ও সমাবেশের স্থান হিসেবে পরিচিত “মিরপুর আড্ডা” আজ রূপান্তরিত হয়েছে এক সৃষ্টিশীল প্ল্যাটফর্মে, যেখানে গ্রাফিতি-শোভিত দেয়াল, খোলা মঞ্চের কবিতা পাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে ঢাকার তরুণদের শিল্পমানস।

আড্ডা’৯৯-এর আয়োজনে এবারের মূল আকর্ষণ ছিল বার্ষিক শিল্প ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ, যার এবারের থিম ছিল “ক্যানভাস অফ কালেকটিভ ড্রিমস”। পুরো ভেন্যু জুড়ে থিমটির প্রতিফলন ঘটেছে ম্যুরাল, ইন্টারেক্টিভ আর্ট ও উন্মুক্ত শিল্প উপস্থাপনার মাধ্যমে। শিল্পীরা তাদের কল্পনার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচয়, আশা এবং সামাজিক বার্তা।
স্মরণীয় অংশ ছিল ‘ইন্টারেক্টিভ কমিউনিটি ক্যানভাস’—একটি বিশাল আকারের সম্মিলিত শিল্পকর্ম, যেখানে সকল বয়সের অংশগ্রহণকারীরা তাদের রঙের ছোঁয়ায় একত্রে গড়ে তুলেছেন সৃজনশীলতার মোজাইক।

“এটি কেবল প্রতিভা প্রদর্শনের বিষয় নয়, এটি সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাজে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা,” বললেন শিল্পী ও ইভেন্ট সংগঠক রিফাত জামান।
সমাবেশের অন্যতম প্রাণবন্ত আয়োজন ছিল ‘ড্রয়িং ট্যালেন্ট, সেলিব্রেটিং উইথ জয়’—একটি শিশু ও কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যা মিরপুরের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৬ জন তরুণ শিল্পী, যাদের মধ্যে ৭ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।বিশেষ সম্মাননা পান মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং আফরোজা শারমিন পাপড়ি, যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে আসেন। বিজয়ীদের প্রদান করা হয় সার্টিফিকেট ও পেশাদার আর্ট কিট—তাদের সৃজনশীল অগ্রযাত্রার সহায়তা হিসেবে।

অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল কথ্য কবিতা, অ্যাকোস্টিক সঙ্গীত, ও লাইভ ম্যুরাল চিত্রকর্ম। এ ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল আলোচনা ও কর্মশালা, যেখানে আলোচিত হয় নগর শিল্প আন্দোলন, তৃণমূল উদ্যোগ, এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণে তরুণদের ভূমিকা।

“আমরা কেবল বিনোদনের আয়োজন করি না, বরং প্রতিভাভিত্তিক সুযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার চেষ্টা করি,” বলেন সংগঠনের অন্যতম আয়োজক মোঃ আমিনুল ইসলাম এসিএস।

সন্ধ্যায় এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি শিশুদের অংশগ্রহণ দর্শকদের মোহিত করে তোলে। এ অনুষ্ঠান দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন মুনিয়া আরেফিন।

অনুষ্ঠানের শেষে মোঃ ফিরোজ আলম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সব অংশগ্রহণকারী, অতিথি ও আয়োজকদের প্রতি। সমাপ্তি ঘটে একটি উষ্ণ নৈশভোজে, যেখানে সবাই শিল্প ও সমাজের ঐক্যের বার্তা ভাগাভাগি করেন।

‘মিরপুর আড্ডা’৯৯’-এর এই আয়োজন শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সামাজিক আন্দোলন—যেখানে তরুণ শিল্পীরা নিজেদের চিন্তা, কল্পনা ও বার্তা তুলে ধরছে শিল্পের মাধ্যমে। শিল্পকে কেন্দ্র করে এই ধরনের প্ল্যাটফর্মই হতে পারে একটি ইতিবাচক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গর্বিত সমাজ গঠনের পাথেয়।

ডিএস./