০২:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফাঁসতে পারেন হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী!

জাতীয় সংসদের আলোচিত হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী এর আগেও নানা কারণে বিতর্কিত। অস্ত্র উঁচিয়ে ফেসবুকে মহড়ার ভিডিও প্রকাশ, কখনো গোপন আস্তানায় আকণ্ঠ পানীয়ে ডুবে থাকা ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাকে হুমকিসহ বিতর্কের শেষ নেই তাকে ঘিরে। এবার অভিযোগ উঠেছে তার গোপন ব্যবসার বলি হয়েছেন এক তরুণ ব্যাংকার। বিষয়টি কিছুটা বেগতিক মনে হচ্ছে, কারণ এ ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফাঁসতে পারেন হুইপপুত্র শারুন- এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

অভিযোগ রয়েছে, হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসায় জীবন দিতে বাধ্য হন তরুণ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। ২৫ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেও নিষ্কৃতি মেলেনি এই ব্যাংক কর্মকর্তার। তাকে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহননের পথ। এ ঘটনা নিয়ে বন্দরনগর চট্টগ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানকালে ঘটনার নেপথ্যে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ। তরুণ ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন ওই ব্যাংকারের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী ও মা নুরনাহার।

স্ত্রী ইশরাতের অভিযোগ অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায় পুঁজি লগ্নি এবং পরে মানসিক চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন ওই ব্যাংকার, যা তার সুইসাইড নোটে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে। এ ঘটনায় ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলায় নির্যাতন-আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রী ইশরাতের অভিযোগ, আমার স্বামী ব্যবসার জন্য বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদেরকে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। অনৈতিক মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে মোর্শেদ আত্মহত্যা করেন।

এর নেপথ্য ঘটনা নিয়ে সূত্র জানায়, নানা গোপন ব্যবসায় জড়িত শারুন চৌধুরীসহ তার কয়েক বন্ধু। তাদের সে ব্যবসায় ধার নিয়ে পুঁজি খাটিয়ে আসল ও সুদসহ বিপুল টাকা পরিশোধ করেও সরল বিশ্বাসের বলি হন ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। সরল বিশ্বাসে জমা দেওয়া জামানতের চেক ফিরিয়ে নেননি তিনি। এতে ওইসব চেকের বিপরীতে বারবার লাভের টাকা দাবি করে চক্রটি। অব্যাহত রাখে বাসায় হামলা, উপর্যুপরি মামলা, অপহরণসহ নানা হুমকি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেও চাপ দেওয়া হয়। নানামুখী চাপে উদ্ভ্রান্ত ওই ব্যাংকার বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করে মুক্তি খোঁজেন। অবিরত হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত এই তরুণের আত্মহত্যার নেপথ্যের সত্যতা খুঁজতে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এতে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী। কেননা আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাকারীকে ১৮৬০ এ প্রণীত দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া জরিমানারও বিধান রয়েছে। আত্মহত্যায় সহায়তাকরণ সম্পর্কিত দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে অনুরূপ আত্মহত্যায় সহায়তাকারী ব্যক্তি যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে, যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

এই ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে একাধিক রায়ও ঘোষণা করা হয়েছে ইতিপূর্বে। ব‌রিশা‌লে ২০১৬ সা‌লের নাঈমা ইব্রা‌হিম ঈ‌শী‌ ধর্ষণ এবং আত্মহত্যার প্র‌রোচনার মামলার রায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করে ব‌রিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনা‌ল। রায়ে আসামি সা‌য়েম আলম মিমু‌কে ধর্ষ‌ণের দা‌য়ে যাবজ্জীবন এবং আত্মহত্যার প্র‌রোচনার দা‌য়ে ১০ বছ‌রের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

ট্যাগ :

বরিশালে পেশাদার সাংবাদিকদের ৩৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফাঁসতে পারেন হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী!

প্রকাশিত : ০২:১১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১

জাতীয় সংসদের আলোচিত হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী এর আগেও নানা কারণে বিতর্কিত। অস্ত্র উঁচিয়ে ফেসবুকে মহড়ার ভিডিও প্রকাশ, কখনো গোপন আস্তানায় আকণ্ঠ পানীয়ে ডুবে থাকা ও সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতাকে হুমকিসহ বিতর্কের শেষ নেই তাকে ঘিরে। এবার অভিযোগ উঠেছে তার গোপন ব্যবসার বলি হয়েছেন এক তরুণ ব্যাংকার। বিষয়টি কিছুটা বেগতিক মনে হচ্ছে, কারণ এ ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফাঁসতে পারেন হুইপপুত্র শারুন- এমনটাই অভিমত রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

অভিযোগ রয়েছে, হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসায় জীবন দিতে বাধ্য হন তরুণ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। ২৫ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেও নিষ্কৃতি মেলেনি এই ব্যাংক কর্মকর্তার। তাকে বেছে নিতে হয়েছে আত্মহননের পথ। এ ঘটনা নিয়ে বন্দরনগর চট্টগ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানকালে ঘটনার নেপথ্যে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ। তরুণ ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়েছেন ওই ব্যাংকারের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী ও মা নুরনাহার।

স্ত্রী ইশরাতের অভিযোগ অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায় পুঁজি লগ্নি এবং পরে মানসিক চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন ওই ব্যাংকার, যা তার সুইসাইড নোটে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে। এ ঘটনায় ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলায় নির্যাতন-আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রী ইশরাতের অভিযোগ, আমার স্বামী ব্যবসার জন্য বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদেরকে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। অনৈতিক মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে মোর্শেদ আত্মহত্যা করেন।

এর নেপথ্য ঘটনা নিয়ে সূত্র জানায়, নানা গোপন ব্যবসায় জড়িত শারুন চৌধুরীসহ তার কয়েক বন্ধু। তাদের সে ব্যবসায় ধার নিয়ে পুঁজি খাটিয়ে আসল ও সুদসহ বিপুল টাকা পরিশোধ করেও সরল বিশ্বাসের বলি হন ব্যাংকার আবদুল মোর্শেদ চৌধুরী। সরল বিশ্বাসে জমা দেওয়া জামানতের চেক ফিরিয়ে নেননি তিনি। এতে ওইসব চেকের বিপরীতে বারবার লাভের টাকা দাবি করে চক্রটি। অব্যাহত রাখে বাসায় হামলা, উপর্যুপরি মামলা, অপহরণসহ নানা হুমকি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেও চাপ দেওয়া হয়। নানামুখী চাপে উদ্ভ্রান্ত ওই ব্যাংকার বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করে মুক্তি খোঁজেন। অবিরত হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত এই তরুণের আত্মহত্যার নেপথ্যের সত্যতা খুঁজতে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এতে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী। কেননা আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাকারীকে ১৮৬০ এ প্রণীত দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া জরিমানারও বিধান রয়েছে। আত্মহত্যায় সহায়তাকরণ সম্পর্কিত দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে অনুরূপ আত্মহত্যায় সহায়তাকারী ব্যক্তি যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে, যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

এই ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে একাধিক রায়ও ঘোষণা করা হয়েছে ইতিপূর্বে। ব‌রিশা‌লে ২০১৬ সা‌লের নাঈমা ইব্রা‌হিম ঈ‌শী‌ ধর্ষণ এবং আত্মহত্যার প্র‌রোচনার মামলার রায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করে ব‌রিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনা‌ল। রায়ে আসামি সা‌য়েম আলম মিমু‌কে ধর্ষ‌ণের দা‌য়ে যাবজ্জীবন এবং আত্মহত্যার প্র‌রোচনার দা‌য়ে ১০ বছ‌রের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।