প্রবল মাদকাসক্তি এবং হতাশাই মোসারাত জাহান মুনিয়াকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিয়েছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ময়নাতদন্তের পাশাপাশি মাদকাসক্তির পরীক্ষা না হওয়ায় এ বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে গত ২৬ এপ্রিল উদ্ধার করা হয় মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘আত্মহত্যা’র আগের কয়েকদিন মুনিয়া ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। ছিলেন বিমর্ষ ও হতাশাগ্রস্ত। এর কারণ হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্তি। আর সেই হতাশা ও অস্থিরতা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন তিনি।
এদিকে, মুনিয়ার ময়নাতদন্ত করা হলেও মুনিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন কি না এ সংক্রান্ত কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়নি। অপরাধ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্রবণতা নিরূপনের জন্য তার মাদকাসক্তি পরীক্ষাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আত্মহত্যার আগে যদি তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তাহলে এ ধরনের আত্মহত্যা করা খুবই সহজ। আর যদি তিনি মাদকাসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করেন তার ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্ররোচনা কোনোভাবেই প্রযোজ্য হবে না। ফলে মুনিয়ার বিষয়টি আরও সংবেদনশীলভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। দেখা দরকার যে কোন পরিস্থিতিতে কখন থেকে তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন।
বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে তিনটি প্রধান কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। এর একটি কারণ হলো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। দুই, ব্যক্তিত্বের সমস্যা বা মানসিকতা এবং তিন, মাদকাসক্তি।
তিনি এটাও বলেন যে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের নারীরা বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয় এবং এর একাধিক কারণও রয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের বিষন্নতা থেকে মাদকাসক্তির ওপর নির্ভরতা হয় এবং অ্যালকোহল, ইয়াবা ইত্যাদি আসক্তি তাকে একসময় মৃত্যুর দিকে উদ্বুদ্ধ করে।
এই বক্তব্যকে সামনে নিয়ে মুনিয়ার ঘটনাটি বিশ্লেষণ করতে গেলে তার মধ্যে বিষন্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা কিংবা অন্য কোনো হতাশা থেকে তিনি মাদকাসক্ত হয়েছিলেন কি-না সেটি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ।
মুনিয়ার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তাকে কি কেউ হত্যা করেছে, না তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন, আত্মহত্যা করলে তিনি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে করেছেন কি না? এসব প্রশ্নের উত্তর মুনিয়া ‘আত্মহত্যা’র রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম বলে মনে করেন ডা. হেলালউদ্দিন।
তিনি বলেন, সব প্রশ্নের উত্তরের একটি সঠিক সমাধান যেমন দরকার, তেমনি প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ করা দরকার। আর এ কারণেই মুনিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন কি না, মাদক সেবন করতেন কি না, সেটিও পরীক্ষা করা খুব জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং মুনিয়ার সম্পর্কে যে সমস্ত তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে মুনিয়ার মাদকাসক্ত থাকার সম্ভবনা অত্যন্ত প্রবল। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া মুনিয়ার বিভিন্ন নাচের ভিডিও দেখেই বোঝা যায় যে একজন সুস্থ তরুণীর পক্ষে এটি করা অসম্ভব। কাজেই তিনি যে অসংলগ্ন ছিলেন সেটি বলাবাহুল্য।
তবে এই ধারণাকে প্রমাণিত করার জন্য প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ মাদকাসক্তি পরীক্ষা। পৃথিবীতে এরকম বহু ঘটনা আছে, যে রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে পুনঃপরীক্ষা এবং পুনঃময়নাতদন্ত করা হয়েছে।


























