সাবেক স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া দল জাতীয় পার্টিকে বাঁচানোর জন্য নেতাকর্মীদের চাপে মাঠের রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিদিশা এরশাদ। কোনো চাপের কাছে মাথা নত না করার ঘোষণা দিয়ে এই সমাজকর্মী বলেছেন, ‘এরশাদের অসমাপ্ত কাজ করার পাশাপাশি তার দুই সন্তান ও জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে সারাদেশ চাষ করবেন।’
শনিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দেন।
বিদিশা এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মীদের থেকে ফোন পাই। তাদের ফোন পেয়ে আমাকে একটি সেল গঠন করতে হয়েছে। তারা বলছে, তারা ভালো নেই। আমি যেন দায়িত্ব নেই। তাই জাতীয় পার্টিকে বাঁচাতে আমার পথচলা শুরু।’
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। এরপর থেকেই দলটির নেতৃত্বে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। এরশাদপত্নী রওশন বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার সাংগঠনিক কোনো ক্ষমতা নেই। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রয়াত এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের বিচ্ছেদ হয়েছে ১৬ বছর পার হয়ে গেছে। এরশাদের মৃত্যুর কিছুদিন পর ছেলে শাহতা জারাব এরিককে নিয়ে বারিধারার কূটনীতিকপাড়ার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’-এ বসবাস শুরু করেন বিদিশা। সাবেক রাষ্ট্রপতি এখানেই থাকতেন। এরশাদ নিজের নামে যে ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন তার থেকে অর্জিত আয়ে এরিকের খরচ নির্বাহ করা হয়। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে এরশাদ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার সম্পত্তি ট্রাস্টের নামে উইল করে যান।
এরশাদের সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর থেকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা খুব একটা সুনজরে দেখেন না বিদিশাকে। এরশাদের ছোট ভাই দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সঙ্গেও বৈরী সম্পর্ক তার। প্রেসিডেন্ট পার্কে ওঠা নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানা সমালোচনাও হয়েছে। তাকে বাসা ছাড়তে করতে চেষ্টাও করে জাতীয় পার্টির হাইকমান্ড।
মাঝে একাধিকবার বিদিশা রাজনীতিতে নামছেন এমন আলোচনা উঠলেও এবার নিজেই ঘোষণা দিলেন। তবে কবে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নামছেন সেটা স্পষ্ট করেননি এরশাদের সাবেক এই স্ত্রী।
এরশাদ পার্টি কখনও কাদের (জিএম কাদের) পার্টি হতে পারে না এমন মন্তব্য করে বিদিশা বলেন, ‘এরশাদকে আমরা মরে যেতে দেবো না। আমি বিদিশা কথা দিচ্ছি, এরশাদ সাহেবের অসমাপ্ত কাজগুলো আমি পূরণ করব। আমার বড় দুই ছেলেকে ও লাঙ্গল নিয়ে সারা দেশ চাষ করব। এতে যদি কোনো বাধা আসে আমি মাথা পেতে নেব। আমি কোনো বাধাকে ভয় পাই না।’
এরশাদের সাবেক স্ত্রী বলেন, ‘সংসার জীবনে দেখেছি, এরশাদ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিন্তা করতেন। তাকে নিয়ে ভাবতেন। সেই আদর্শ ধারণ করে আমার দুই ছেলেকে সঙ্গে করে সারাদেশে লাঙ্গল নিয়ে চষে বেড়াতে চাই। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবার সঙ্গে থাকতে চাই।’
বিদিশা এরশাদ বলেন, ‘চক্রান্ত করে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমার কারামুক্তি সম্ভব হয়েছিল।’
বিদিশা বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার কোনো খায়েশ আমার নেই। আমি চাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। রওশন এরশাদ যেন আজীবন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেটাই চাই। পার্টির সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
শেখ শহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিমুদ্দিন আল আজাদ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, সেকেন্দার আলী মনি প্রমুখ।