১০:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

অন্যরকম এক সেঞ্চুরি মাহমুদউল্লার

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার। বাংলাদেশের পক্ষে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামেই সমর্থকদের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিডল অর্ডারে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। নিরবে-নিভৃতে দলের প্রয়োজনে লড়ে যান তিনি ব্যাট কিংবা বল, একাধিকবার বিপদে পড়া দলকে একাই টেনে তুলেছেন তিনি। জিতিয়েছেন বেশকিছু ম্যাচ।

মাহমুদউল্লাহর ‘১০০’

বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১০০তম ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০০৭ সালের কথা। ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা কড়া নাড়ছে দরজায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে কেনিয়ায় চার জাতি টুর্নামেন্ট খেলতে গেল বাংলাদেশ। ১ সেপ্টেম্বর নাইরোবির জিমখানা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টুর্নামেন্টে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হাতেখড়ি হলো বাংলাদেশের ছয় ক্রিকেটারের। ১৪ বছর পর আরেক সেপ্টেম্বরে সেই ছয়ের একজন বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। হার না মানা মানসিকতা, দৃঢ় সংকল্প, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা—সব মিলিয়ে আজ ইতিহাসের অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবতম সংস্করণের ‘১০০ ক্লাবে’ প্রবেশাধিকার পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সেই মাহমুদউল্লাহ, শুরুর দিনগুলোতে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলে যাকে জায়গা পেতেই সংগ্রাম করতে হয়েছে।অলক কাপালি, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাজিমউদ্দিন, তামিম ইকবাল, সৈয়দ রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ—সেই ছয়ের মধ্যে নামের ভারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহই আজ ইতিহাস গড়ছেন, মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। স্বাভাবিকভাবে এটা বিশেষ মুহূর্ত।

মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কততম বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলকে মাহমুদউল্লাহ? উত্তর- তিনিই প্রথম। শুধু দেশের ক্রিকেট কেন, গোটা বিশ্বে কেবল অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন তিনি। যোগ দিয়েছেন শোয়েব মালিক (১১৬), মোহাম্মদ হাফিজ (১১৩), রোহিত শর্মা (১১১), এউইন মরগ্যান (১০৭), কেভিন ও’ব্রায়েন (১০৩), মার্টিন গাপটিল (১০২) ও রস টেইলরদের (১০২) সঙ্গে।

দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলার তালিকায় মাহমুদউল্লাহ অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ৮৮ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসান ৮৬ ম্যাচ খেলে আছেন তিন নম্বরে। তবে শীর্ষ ব্যাটসম্যানের তালিকায় সবার উপরে সাকিব (১৭৫৫)। দ্বিতীয় স্থানে মাহমুদউল্লাহ, ২৩.৯৭ গড়ে ১৭০৫ রান করেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬৪। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ৫টি। স্ট্রাইকরেট ১১৯.৬৬।

২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ৬৫টি টি-টোয়েন্টির ৬৪টিই খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। এ বছরের নিউজিল্যান্ডের সফরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা খেলতে পারেননি চোটের কারণে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলা ১০৯ ম্যাচের মাত্র ১০টি ম্যাচই খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, যার একটি অবশ্য তাঁর অভিষেকের আগের।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১১৯.৬৬ স্ট্রাইক রেট এই পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর ভ‚মিকা খুব একটা বোঝাতে পারে না। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের দুটি ইনিংসই তাঁর—মাহমুদউল্লাহকে কিছুটা বোঝাতে পারে এই পরিসংখ্যান। মাহমুদউল্লাহ কতটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেন, সেটির বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের নিধাহাস ট্রফির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। ম্যাচ জিততে শেষ ছয় ওভারে ৫৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ দলকে যখন জেতালেন, তাঁর নামের পাশে ১৮ বলে ৪৩ রান! ওই বছরই মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১ বলে ৪৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। সেই মাহমুদউল্লাহ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দেখাচ্ছেন এমন উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়। পরশু দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ৩২ বলের অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংসটা না হলে হয়তো হেরেই যেত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও ব্যাটসম্যানদের বধ্যভ‚মিতে অপরাজিত ছিলেন তিনি, দলকে জিতিয়ে ফিরেছিলেন ১৪ রানে অপরাজিত থেকে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র পাঁচবার ৫০ ছুঁয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু কাঠখোট্টা সেই পরিসংখ্যানের কী সাধ্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে মাহমুদউল্লাহর অবদান বোঝানোর। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের মতো খেলোয়াড়দের আগে ১০০ ম্যাচের মাইলফলকে ঢুকে যাওয়াটাই অবশ্য প্রমাণ মাহমুদউল্লাহর।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর যত রেকর্ড

  • বাংলাদেশের আউটফিল্ড ফিল্ডার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ (৩৭)।
  • বাংলাদেশের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ৫৪ ম্যাচ।
  • শূন্য ছাড়া টানা ৬৬ ম্যাচ। যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড, সব দেশ মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
  • বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলিং। ২০১৪ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
  • বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয় (২৪ ম্যাচে ১২ জয়)।

শততম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ

কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামের সঙ্গে যখন টস করতে নেমেছেন, তখনই হয়ে গেছে রেকর্ডটা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও জানতেন, প্রথম বাংলাদেশি এবং বিশ্বের অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে শততম ম্যাচ খেলছেন। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পরই ব্যক্তিগত মাইলফলকের ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। সবসময় যেটা করার চেষ্টা করি, দলের জন্য খেলা। দলের জন্য ভালো খেলা। নিজের ১০০তম ম্যাচেও সেটাই করার চেষ্টা করব।’ কিন্তু নিজের শততাম ম্যাচে হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা টাইগার অধিনায়ক এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ দেন (৩) ইনিংসের দশম ওভারে। ব্যাটে রান না পেলেও উইকেট দিয়েই শততম ম্যাচটি রাঙিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। উইকেটে টিকে যাওয়া রাচিন রবীন্দ্রকে (২০) সরাসরি বোল্ড করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পথে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি রান সংগ্রাহকের তালিকায় দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে দুইয়ে উঠে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তালিকার শীর্ষে আছেন সাকিব আল হাসান।

মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্বের প্রশংসায় ক্রিকেট বিশ্লেষকরা

টি-টোয়েন্টিতে অন্ধকার যুগ পেরিয়ে আলোর যুগে বাংলাদেশ, যেই পথচলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও তিনি। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া সেই মাহমুদউল্লাহর নামটাই এখন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টিম শিটে সবার আগে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় ছাপিয়েও মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব বাড়তি প্রশংসার দাবি রাখে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। আগামীতে আরও ভালো ফল অপেক্ষা করছে বলেই মত তাদের। পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাটিতে তার অধিনায়কত্বেই যে খাবি খাওয়ালো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ব্যাট বলে চমক দেখালেও, মাঠের সিদ্ধান্তে তার মুন্সিয়ানা নজর কেড়েছে সবারই। কিন্তু এই সিরিজ শেষে টি-টুয়েন্টিকে এখন নিজের সম্পত্তি বলেই দাবি করতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল

অন্যরকম এক সেঞ্চুরি মাহমুদউল্লার

প্রকাশিত : ০৯:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার। বাংলাদেশের পক্ষে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামেই সমর্থকদের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিডল অর্ডারে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। নিরবে-নিভৃতে দলের প্রয়োজনে লড়ে যান তিনি ব্যাট কিংবা বল, একাধিকবার বিপদে পড়া দলকে একাই টেনে তুলেছেন তিনি। জিতিয়েছেন বেশকিছু ম্যাচ।

মাহমুদউল্লাহর ‘১০০’

বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১০০তম ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০০৭ সালের কথা। ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা কড়া নাড়ছে দরজায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে কেনিয়ায় চার জাতি টুর্নামেন্ট খেলতে গেল বাংলাদেশ। ১ সেপ্টেম্বর নাইরোবির জিমখানা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টুর্নামেন্টে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হাতেখড়ি হলো বাংলাদেশের ছয় ক্রিকেটারের। ১৪ বছর পর আরেক সেপ্টেম্বরে সেই ছয়ের একজন বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। হার না মানা মানসিকতা, দৃঢ় সংকল্প, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা—সব মিলিয়ে আজ ইতিহাসের অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নবতম সংস্করণের ‘১০০ ক্লাবে’ প্রবেশাধিকার পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সেই মাহমুদউল্লাহ, শুরুর দিনগুলোতে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলে যাকে জায়গা পেতেই সংগ্রাম করতে হয়েছে।অলক কাপালি, মোহাম্মদ আশরাফুল, নাজিমউদ্দিন, তামিম ইকবাল, সৈয়দ রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ—সেই ছয়ের মধ্যে নামের ভারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহই আজ ইতিহাস গড়ছেন, মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। স্বাভাবিকভাবে এটা বিশেষ মুহূর্ত।

মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কততম বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলকে মাহমুদউল্লাহ? উত্তর- তিনিই প্রথম। শুধু দেশের ক্রিকেট কেন, গোটা বিশ্বে কেবল অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন তিনি। যোগ দিয়েছেন শোয়েব মালিক (১১৬), মোহাম্মদ হাফিজ (১১৩), রোহিত শর্মা (১১১), এউইন মরগ্যান (১০৭), কেভিন ও’ব্রায়েন (১০৩), মার্টিন গাপটিল (১০২) ও রস টেইলরদের (১০২) সঙ্গে।

দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলার তালিকায় মাহমুদউল্লাহ অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ৮৮ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় স্থানে মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসান ৮৬ ম্যাচ খেলে আছেন তিন নম্বরে। তবে শীর্ষ ব্যাটসম্যানের তালিকায় সবার উপরে সাকিব (১৭৫৫)। দ্বিতীয় স্থানে মাহমুদউল্লাহ, ২৩.৯৭ গড়ে ১৭০৫ রান করেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৬৪। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ৫টি। স্ট্রাইকরেট ১১৯.৬৬।

২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ৬৫টি টি-টোয়েন্টির ৬৪টিই খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। এ বছরের নিউজিল্যান্ডের সফরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিটা খেলতে পারেননি চোটের কারণে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খেলা ১০৯ ম্যাচের মাত্র ১০টি ম্যাচই খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, যার একটি অবশ্য তাঁর অভিষেকের আগের।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১১৯.৬৬ স্ট্রাইক রেট এই পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশ দলে মাহমুদউল্লাহর ভ‚মিকা খুব একটা বোঝাতে পারে না। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের দুটি ইনিংসই তাঁর—মাহমুদউল্লাহকে কিছুটা বোঝাতে পারে এই পরিসংখ্যান। মাহমুদউল্লাহ কতটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেন, সেটির বড় প্রমাণ ২০১৮ সালের নিধাহাস ট্রফির শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি। ম্যাচ জিততে শেষ ছয় ওভারে ৫৫ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ দলকে যখন জেতালেন, তাঁর নামের পাশে ১৮ বলে ৪৩ রান! ওই বছরই মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১ বলে ৪৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। সেই মাহমুদউল্লাহ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দেখাচ্ছেন এমন উইকেটে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়। পরশু দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ৩২ বলের অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংসটা না হলে হয়তো হেরেই যেত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেও ব্যাটসম্যানদের বধ্যভ‚মিতে অপরাজিত ছিলেন তিনি, দলকে জিতিয়ে ফিরেছিলেন ১৪ রানে অপরাজিত থেকে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র পাঁচবার ৫০ ছুঁয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু কাঠখোট্টা সেই পরিসংখ্যানের কী সাধ্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে মাহমুদউল্লাহর অবদান বোঝানোর। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের মতো খেলোয়াড়দের আগে ১০০ ম্যাচের মাইলফলকে ঢুকে যাওয়াটাই অবশ্য প্রমাণ মাহমুদউল্লাহর।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর যত রেকর্ড

  • বাংলাদেশের আউটফিল্ড ফিল্ডার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ (৩৭)।
  • বাংলাদেশের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ৫৪ ম্যাচ।
  • শূন্য ছাড়া টানা ৬৬ ম্যাচ। যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড, সব দেশ মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
  • বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কিপটে বোলিং। ২০১৪ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
  • বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয় (২৪ ম্যাচে ১২ জয়)।

শততম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ

কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামের সঙ্গে যখন টস করতে নেমেছেন, তখনই হয়ে গেছে রেকর্ডটা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও জানতেন, প্রথম বাংলাদেশি এবং বিশ্বের অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে শততম ম্যাচ খেলছেন। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পরই ব্যক্তিগত মাইলফলকের ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, ‘আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই। সবসময় যেটা করার চেষ্টা করি, দলের জন্য খেলা। দলের জন্য ভালো খেলা। নিজের ১০০তম ম্যাচেও সেটাই করার চেষ্টা করব।’ কিন্তু নিজের শততাম ম্যাচে হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা টাইগার অধিনায়ক এক্সট্রা কভারে সহজ ক্যাচ দেন (৩) ইনিংসের দশম ওভারে। ব্যাটে রান না পেলেও উইকেট দিয়েই শততম ম্যাচটি রাঙিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। উইকেটে টিকে যাওয়া রাচিন রবীন্দ্রকে (২০) সরাসরি বোল্ড করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পথে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি রান সংগ্রাহকের তালিকায় দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে দুইয়ে উঠে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তালিকার শীর্ষে আছেন সাকিব আল হাসান।

মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্বের প্রশংসায় ক্রিকেট বিশ্লেষকরা

টি-টোয়েন্টিতে অন্ধকার যুগ পেরিয়ে আলোর যুগে বাংলাদেশ, যেই পথচলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও তিনি। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরে প্রথমবারের মতো অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া সেই মাহমুদউল্লাহর নামটাই এখন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের টিম শিটে সবার আগে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয় ছাপিয়েও মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব বাড়তি প্রশংসার দাবি রাখে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। আগামীতে আরও ভালো ফল অপেক্ষা করছে বলেই মত তাদের। পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাটিতে তার অধিনায়কত্বেই যে খাবি খাওয়ালো লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ব্যাট বলে চমক দেখালেও, মাঠের সিদ্ধান্তে তার মুন্সিয়ানা নজর কেড়েছে সবারই। কিন্তু এই সিরিজ শেষে টি-টুয়েন্টিকে এখন নিজের সম্পত্তি বলেই দাবি করতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর