কোটি দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত চ্যানেল আইয়ের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল প্রতিপাদ্য ‘স্বাধীনতার ৫০-এ, চ্যানেল আই ২৩-এ’। প্রতি বছর ১ অক্টোবর জন্মদিনে চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়ে আসলেও এবার চ্যানেল আই চত্বরে সেরকম ছিলনা। তবে উৎসব আয়োজনে চ্যানেল আইয়ের পর্দা আরও বর্ণিল হয়ে উঠেছিল।
১ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চ্যানেল আইয়ের ৪ নম্বর স্টুডিওতে কেক কাটার মাধ্যমে চ্যানেল আইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মুকিত মজুমদার বাবু, সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান, কণ্ঠশিল্পী মো. খুরশীদ আলম প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও সুদূর নিউ ইয়র্ক থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। দিনব্যাপি চ্যানেল আই কার্যালয়ে এসে চ্যানেল আইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক। চ্যানেল আইয়ের স্টুডিওতে উপস্থিত হয়ে আরো শুভেচ্ছা জানান সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারী ও বেসরকারীসহ বিভিন্ন অঙ্গণের দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তারা প্রত্যেকেই আশা করেন, অতীতের মতো আগামী দিনেও চ্যানেল আই তার সৃষ্টিশীলতার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে যাবে। এছাড়া চ্যানেল আই দর্শক ফোরাম চ্যানেল আই ২৩ বছরে পর্দাপন উপলক্ষে বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করছে।
ফরিদুর রেজা সাগর তার শুভেচ্ছায় বলেন, মানুষের যখন বয়স বাড়ে তখন আমরা বলি তার জীবনের এক বছর যেন কমে গেল। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানের যখন বয়স বাড়ে তখন আমরা বলি সেই প্রতিষ্ঠানটি সমৃদ্ধির দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। চ্যানেল আইয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই হয়েছে। চ্যানেল আইয়ের বয়স যতই বাড়ছে ততই যেন এটি সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যার পেছনে রয়েছে চ্যানেল আইয়ের কর্মী থেকে দর্শক সবারই আন্তরিক ভালোবাসা।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, বর্তমানে সময় মিডিয়ার একটি ক্রান্তিকাল চলছে। বিশেষ করে কোভিডের দুটি বছর খুবই কঠিন সময় পার করেছে মিডিয়া হাউসগুলো। এর মাঝে বর্তমানে যেই ওটিটি প্লাটফর্ম, ডিজিটাল প্লাটফর্ম গুলোর চল এসেছে এগুলো ট্র্যাডিশনাল টেলিভিশনকে অনেক বিপদের মধ্যে ফেলবে। আমরা আমাদের শুরুটা করেছিলাম হৃদয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে, এছাড়াও আমরা বলি ‘হাজারও রঙের ভিড়ে লাল সবুজের গান গেয়ে যাই’। সেখানে এত রংয়ের ভিড়ে আমরা কি টিকতে পারবো কিনা সেই নিয়ে এখন সন্দিহান! তবে বরাবরই চ্যানেল আই মুক্তিযুদ্ধের কথা, গান, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি নিয়ে কথা বলে। জন্মদিনের এই শুভক্ষণে সকলের কাছে দোয়া চাই আমরা যেন সামনেও সেই ধারা বজায় রেখে আরও ভালো কিছু করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা।
ইমপ্রেস গ্র“প ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০-এ চ্যানেল আই ২৩’, স্লোগান ধরেই বলা যায় দেশ গঠনের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে আমরা চ্যানেল আই নিয়ে আছি মানুষের পাশে। এই সময়ে অনেক কিছুই করতে পেরেছি, আবার অনেক কিছু পারিওনি। আমি সব সময় বলি, সরকার একা সবকিছু করতে পারে না, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। প্রতি বছর চ্যানেল আইয়ের একটি বছর বাড়ে, তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দায়িত্বও বাড়ে। চ্যানেল আইয়ের জন্মদিনে যারা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, চ্যানেল আই বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে। বাংলা সংস্কৃতিকে লালন করার ক্ষেত্রে সমাজের দর্পন হিসেবে গত ২২ বছর কাজ করেছে চ্যানেল আই। শুধু এ কারণে নয়, চ্যানেল আই কৃষির উন্নয়নে ও পরিবেশ সংরক্ষণেও বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। একটি টেলিভিশন চ্যানেল যে বহুমাত্রিক কাজ করতে পারে, তার উদাহরণ চ্যানেল আই। শুধু সম্প্রচারের মধ্যে বিনোদন আর খবর প্রচার নয়, চ্যানেল আই সিনেমা নির্মাণ করে এবং তারা বাংলার লোকজ মেলাগুলোকে খুব দারুণ ভাবে তুলে ধরে। বিশ্ব পরিবেশ দিবেস চ্যানেল আই চত্বরে বিরাট মেলা বসে, এগুলো সমাজের জন্য খুব ইতিবাচক। সারা দেশের কৃষির উন্নয়নের জন্য চ্যানেল আই প্রতিনিয়ত যেভাবে রিপোর্ট করে যাচ্ছে, এগুলো নিসন্দেহে অনন্য।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, চ্যানেল আই প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক নানান বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করছে। যেটি দেশের অগ্রগতিতে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। আমি কৃষি মন্ত্রী হিসেবে বলতে চাই, কৃষি ক্ষেত্রে ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ একটি মাইলফলক। এই বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিলো, দুর্ভিক্ষের দেশ ছিলো, খাদ্যের ঝুলি নিয়ে আমরা পৃথিবীতে ঘুরতাম। আজকে আমরা অহংকার ও গর্ব করে বলি বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ আজ খাদ্যের জন্য কারো উপর নির্ভরশীল নয়। এই অর্জন ও সাফল্যে বড় অংশিদার আমাদের চ্যানেল আই। ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ চ্যানেল আই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে পরিবেশন করে। আগামি দিনেও অতীতের মতো সব ক্ষেত্রে চ্যানেল আই দেশের পাশে থাকবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আই মানে ‘আমি’ আবার ‘আই’ মানে কিন্তু ‘চোখ’। আমরা কিন্তু চ্যানেল আইয়ের চোখ দিয়ে সারা বিশ্বকে দেখি। আবার সারা বিশ্ব চ্যানেল আইয়ের চোখ দিয়ে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রিয়া প্রযুক্তি এই সকল বিষয়গুলোকে দেখে। স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের ৫০ এ, চ্যানেল আই ২৩ যখন এতটা সম্মৃদ্ধে পরিপূর্ণ, তখন আবার আশা রাখি স্বাধীনতা ১০০ বছর পূর্তিতে চ্যানেল আই শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে আরও পরিপূর্ণ হবে। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা চ্যানেল আইকে।
২৩ বছরে পর্দাপন উপলক্ষে দেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে চ্যানেল আই। জন্মদিনে চ্যানেল আইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরো বাণী দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। ক্রোড়পত্রে বিশেষ লেখা লিখেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা। চ্যানেল আইকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন বিভিণœ অঙ্গণের বিশিষ্ট জনেরা। ১ অক্টোবর রাত ১২.০১ মিনিটে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে তৈরী মঞ্চে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে নিয়ে চ্যানেল আই পরিবারের সদস্যরা বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ কেক কেটে জন্মদিনের প্রথম উদযাপন করেন। জন্মদিন উপলক্ষে ১ অক্টোবর চ্যানেল আই’র পর্দায় ছিলো মুগ্ধকর বিভিন্ন পরিবেশনা।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ




















