০৮:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

পেশা ছাড়ছেন কক্সবাজারের লবণচাষিরা

সুস্বাদু খাবারসহ নানা প্রয়োজনে অপরিহার্য উপাদান লবণ। দেশের চাহিদা পূরণে লবণ উৎপাদনে কাজ করেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মাত্র ৫৫ হাজার চাষী। কক্সবাজারের ৯ উপজেলার সাতটি ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করে দেশের চাহিদা মেটান তারা। প্রতিবছরই চাহিদা মতো বা চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় লবণ একটি স্বয়ংসম্পন্ন শিল্পপণ্যে রূপ লাভ করেছে। মাঠ পর্যায়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা কেজি কিনে প্রক্রিয়াজাতের পর বাজারে প্যাকেটজাত লবণ ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও ন্যায্যমূল্য মিলে না চাষিদের। তাই এ শিল্পে সম্পৃক্ত অনেকেই পেশা ছাড়ছেন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার উপকূলীয় গোমাতলীর লবণ চাষি রিদুয়ানুল হক (২৯) বলেন, বৃটিশ আমল থেকে পরিবার লবণ উৎপাদনে সম্পৃক্ত। পূর্বপুরুষের পেশা এখন আমরা ধরে রেখেছি। গোমাতলীর রাজঘাট এলাকার লবণ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৪৫) বলেন, উপকূলের অধিকাংশ পরিবার লবণ উৎপাদন, পরিবহনসহ নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। লবণ উৎপাদনের সম্পৃক্তরা বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এটি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। লবণে ক্ষতি হলেও বর্ষায় মৎস্য চাষে যুক্ত হয়ে কোনো মতে সংসার চালান। ফলে, ঘাটতি মেটানোর আশায় পরের বছর আবার লবণ চাষে নামেন। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে দেশের স্বয়ং সম্পন্ন লবণ শিল্পে সম্পৃক্তরা। কক্সবাজারের উপকূলীয় উত্তর গোমাতলীর রমজান আলী (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৮), মো. কামাল (৩০) ও জামাল উদ্দিন (৩২) এখন চট্টগ্রামের গার্মেন্টেসে কাজ করেন। তাদের পাশাপাশি আরও অর্ধশত পরিবারের লোকজন লবণ চাষ পেশা ছেড়ে গার্মেন্টস ও যানবাহন চালনার পেশায় সম্পৃক্ত বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ লবণচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, মাঠ থেকে লবণ কেনায় জড়িত ব্যবসায়ীরা একীভূত হয়ে লবণের দাম নির্ধারণ করে। সরকারি নির্দেশনায় উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে পতিত হন প্রান্তিক চাষি বা লবণ উৎপাদকরা। এছাড়াও, দেশে উৎপাদিত লবণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকার পরও একটি মহল বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চেষ্ঠা করছে। এতে মাঠ পর্যায়ে পড়ে থাকা লবণ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার জেলা ম্যানেজার (ডিএম) জাফর ইকবাল জানান, দেশে ২০২১ সালে লবণের চাহিদা নির্ধারণ হয় ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। তবে, ২০২০ সালে তিন লাখ ৪৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল। সে হিসেবে ২০২১ সালের লবণের মজুদ ১৯ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। কাগজে কলমে দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ ঘাটতি রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কুড়িগ্রামে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ

পেশা ছাড়ছেন কক্সবাজারের লবণচাষিরা

প্রকাশিত : ০৮:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১

সুস্বাদু খাবারসহ নানা প্রয়োজনে অপরিহার্য উপাদান লবণ। দেশের চাহিদা পূরণে লবণ উৎপাদনে কাজ করেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মাত্র ৫৫ হাজার চাষী। কক্সবাজারের ৯ উপজেলার সাতটি ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করে দেশের চাহিদা মেটান তারা। প্রতিবছরই চাহিদা মতো বা চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ায় লবণ একটি স্বয়ংসম্পন্ন শিল্পপণ্যে রূপ লাভ করেছে। মাঠ পর্যায়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা কেজি কিনে প্রক্রিয়াজাতের পর বাজারে প্যাকেটজাত লবণ ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও ন্যায্যমূল্য মিলে না চাষিদের। তাই এ শিল্পে সম্পৃক্ত অনেকেই পেশা ছাড়ছেন। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার উপকূলীয় গোমাতলীর লবণ চাষি রিদুয়ানুল হক (২৯) বলেন, বৃটিশ আমল থেকে পরিবার লবণ উৎপাদনে সম্পৃক্ত। পূর্বপুরুষের পেশা এখন আমরা ধরে রেখেছি। গোমাতলীর রাজঘাট এলাকার লবণ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (৪৫) বলেন, উপকূলের অধিকাংশ পরিবার লবণ উৎপাদন, পরিবহনসহ নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। লবণ উৎপাদনের সম্পৃক্তরা বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এটি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। লবণে ক্ষতি হলেও বর্ষায় মৎস্য চাষে যুক্ত হয়ে কোনো মতে সংসার চালান। ফলে, ঘাটতি মেটানোর আশায় পরের বছর আবার লবণ চাষে নামেন। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে দেশের স্বয়ং সম্পন্ন লবণ শিল্পে সম্পৃক্তরা। কক্সবাজারের উপকূলীয় উত্তর গোমাতলীর রমজান আলী (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৮), মো. কামাল (৩০) ও জামাল উদ্দিন (৩২) এখন চট্টগ্রামের গার্মেন্টেসে কাজ করেন। তাদের পাশাপাশি আরও অর্ধশত পরিবারের লোকজন লবণ চাষ পেশা ছেড়ে গার্মেন্টস ও যানবাহন চালনার পেশায় সম্পৃক্ত বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ লবণচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, মাঠ থেকে লবণ কেনায় জড়িত ব্যবসায়ীরা একীভূত হয়ে লবণের দাম নির্ধারণ করে। সরকারি নির্দেশনায় উৎপাদিত লবণ বিক্রি করতে না পেরে লোকসানে পতিত হন প্রান্তিক চাষি বা লবণ উৎপাদকরা। এছাড়াও, দেশে উৎপাদিত লবণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকার পরও একটি মহল বিদেশ থেকে লবণ আমদানির চেষ্ঠা করছে। এতে মাঠ পর্যায়ে পড়ে থাকা লবণ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার জেলা ম্যানেজার (ডিএম) জাফর ইকবাল জানান, দেশে ২০২১ সালে লবণের চাহিদা নির্ধারণ হয় ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন। তবে, ২০২০ সালে তিন লাখ ৪৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল। সে হিসেবে ২০২১ সালের লবণের মজুদ ১৯ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। কাগজে কলমে দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ ঘাটতি রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর